কৌশলে কক্সবাজার আনা হয় রব্বানীকে, হত্যায় মিয়ানমারের পিস্তল ব্যবহার
Published: 11th, January 2025 GMT
খুলনা থেকে কৌশলে কক্সবাজারে এনে হত্যা করা হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী ওরফে টিপুকে (৫৪)। রাতের অন্ধকারে নির্জন সৈকতে মাথায় নিশানা করে প্রশিক্ষিত কোনো বন্দুকবাজ (শুটার) তাঁকে গুলি করেন। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি মিয়ানমারে তৈরি।
খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম রব্বানী হত্যার অনুসন্ধানে নেমে র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন তথ্য পেয়েছে। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত না হলেও তিনি টার্গেট কিলিংয়ের শিকার বলে মনে করছেন তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে সমুদ্রসৈকতের সিগাল হোটেলের সামনে ঝাউবাগানের ভেতরে তৈরি কাঠের সেতুতে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় রব্বানীকে। খুলনা সিটির দৌলতপুরে তাঁর বাড়ি। ওই দিন রাতে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে র্যাব খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার এবং কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মেজবাউল হক ওরফে ভুট্টুকে গ্রেপ্তার করে। ভুট্টুর সঙ্গে নিহত গোলাম রব্বানীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত গোলাম রব্বানীর ভগ্নিপতি মো.
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, গোলাম রব্বানী হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শেখ হাসান ইফতেফার ও মেজবাউল হককে আজ শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে পুলিশ। আবেদনের শুনানি হয়নি।
পুলিশ ও র্যাব সূত্র জানায়, শেখ হাসান ইফতেখার ও গোলাম রব্বানী দুজন বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার গোল্ডেন হিল হোটেলে ওঠেন। হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতার গোলাম রব্বানীর সঙ্গে এক তরুণীর নাম উল্লেখ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী আত্মগোপন করেন। হোটেল থেকে উদ্ধার করা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে র্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ওই তরুণীর সঙ্গে গোলাম রব্বানী হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর রাত সাড়ে আটটার দিকে সমুদ্রসৈকতের সিগাল হোটেলের সামনে কাঠের সেতুতে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন তিনি।
এ প্রসঙ্গে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে মাথায় গুলি করে গোলাম রব্বানীকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার শেখ হাসান ইফতেখার ও মেজবাউল হক ভুট্টু সন্দেহজনক আচরণ করেছেন এবং ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। গোলাম রব্বানীকে লক্ষ্য করে যে গুলি ছোড়া হয়েছিল, তা নিখুঁতভাবে মাথায় বিদ্ধ হয়। অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেউ এই গুলি ছুড়েছেন। গুলিটি ছিল ৯ এমএম পিস্তলের। এটি মিয়ানমারের তৈরি। গোলাম রব্বানী হত্যায় ভাড়াটে খুনি হিসেবে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাউকে যুক্ত করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে র্যাব। আত্মগোপনে থাকা তরুণীকে গ্রেপ্তার করা গেলে হত্যার রহস্য পরিষ্কার হতো।
গোলাম রব্বানী হত্যার নেপথ্যে আরও কয়েকটি কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে চরমপন্থী নেতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং খুনের বদলার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গোলাম রব্বানীর বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশার অভিযোগ, খুলনার দৌলতপুর ও পাবলাকেন্দ্রিক সন্ত্রাসীরাই গোলাম রব্বানীকে সুকৌশলে কক্সবাজার নিয়ে হত্যা করেছে। দৌলতপুর থানায় গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে আগে হত্যাসহ দুটি মামলা ছিল। বর্তমানে কোনো মামলা নেই। তবে ৫ আগস্টের পর খালিশপুর থানায় গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, গোলাম রব্বানী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে চরমপন্থী দলের সদস্য ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি খুলনা থেকে আত্মগোপন করেন। এ সময় তাঁর বাড়িতে একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটে।
গোলাম রাব্বানীর স্ত্রী সাবিহা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, চরমপন্থী দলের নেতা গাজী কামরুল বিভিন্ন সময় গোলাম রাব্বানীকে হত্যার হুমকি দিতেন। গাজী কামরুলের ইশারায় গোলাম রব্বানীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান বলেন, গোলাম রব্বানীকে হত্যার নেপথ্যে নানা ঘটনা সামনে আসছে। গ্রেপ্তার দুজনকে রিমান্ডে এনে হত্যার আসল রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বকাপের ড্রতেই ব্রাজিলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ইঙ্গিত
বিশ্বকাপ ফুটবলে এটা হবেই। পছন্দের দলের সাফল্যের পথ বের করতে আকাশ-বাতাস এক করে সমীকরণ মেলান ভক্তরা। এবার যেমন ব্রাজিলের ক্ষেত্রেও হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটন ডিসিতে গতকাল রাতে বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানের পর থেকেই কেউ কেউ বলছেন, ব্রাজিল তো চ্যাম্পিয়ন হয়েই গেল!
অবশ্যই প্রশ্ন উঠছে—কীভাবে? সেটার ব্যাখ্যা শুনলে একটু অবাকও লাগতে পারে। তবে কাকতাল তো বটেই।
ব্রাজিল সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ২০০২ সালে। সেবার ‘সি’ গ্রুপ থেকে ধাপে ধাপে ফাইনালে উঠে এসেছিল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন ব্যাপারটি—ব্রাজিল এবার বিশ্বকাপেও তো ‘সি’ গ্রুপে! শুধু তাই নয়, ২০১৮ বিশ্বকাপ ও ২০২২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দুই দলও কিন্তু ‘সি’ গ্রুপ থেকে উঠে এসেছে।
২০১৮ বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপের দল ছিল পরবর্তী সময়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফ্রান্স। চার বছর পর কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে উঠে এসেছিল ‘সি’ গ্রুপ থেকে। কাকতালে বিশ্বাস রাখা ব্রাজিলের ভক্তরা তাই বলতেই পারেন, এবার তাহলে কেন নয়? কারণ, ২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিল ‘সি’ গ্রুপের দল, যেখানে তাদের তিন প্রতিদ্বন্দ্বী—মরক্কো, হাইতি ও স্কটল্যান্ড।
মরক্কো ও স্কটল্যান্ড বিশ্বকাপে ব্রাজিলের চেনা প্রতিপক্ষ। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে দুটি দলকেই হারিয়েছে তারা। কিন্তু বিশ্বকাপে ব্রাজিল এর আগে কখনো হাইতির মুখোমুখি হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বকাপে হাইতি হবে ব্রাজিলের ৫০তম আলাদা প্রতিপক্ষ।
বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে স্ত্রী মারিয়ান ব্যারেনার সঙ্গে ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তি