রৌদ্রজ্জ্বল প্রভাত যতটা সুন্দর ছিল, মায়াময় বিকেল তার চেয়েও বেশি চিত্তাকর্ষক। হালকা হিম বাতাস, মিষ্টি রোদ আর নীল আকাশ…প্রকৃতিপ্রেমিদের আরাধ্য।

পূবের সূর্য চট্টগ্রামে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয়নি। শহরের ভেতরে থাকা এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সাত-সকালে অনুশীলনের কথা ছিল দুর্বার রাজশাহীর। কিন্তু পারিশ্রমিক না পেয়ে ‘বেঁকে’ বসে অনুশীলন বাতিল করেন ক্রিকেটাররা। ততক্ষণে ক্রিকেটাঙ্গন সরগরম। শুধু রাজশাহী নয়, একই অভিযোগ আরও দুয়েকটি দলের বিপক্ষে। চুক্তি অনুযায়ী এখনও ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পায়নি একাধিক দল!

সূর্যের নরম-গরম রোদ ঢালা মধ্যাহ্ন সাগরিকার সবুজ ঘাসের মাঠকে সোনাফলায় সাজিয়ে তুলেছিল। ওর মাঝেই ফরচুন বরিশাল, ঢাকা ক্যাপিটালস ও পরে খুলনা টাইগার্সের অনুশীলন চলল পুরোদমে। তামিম, লিটন, মোস্তাফিজ, মিরাজদের অনুশীলনে সরগরম হয়ে থাকল সাগর পাড়ের স্টেডিয়াম।

আরো পড়ুন:

চেক বাউন্সের পর রাজশাহীর অনুশীলন বাতিল

বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের সময়সূচি

পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট-বলের ঠুকঠাক শব্দও কেটে যেতে থাকে। কিন্তু স্টেডিয়ামের কর্মব্যস্ততা, কর্মযজ্ঞ শেষ হয় না। রাত পোহালে এখানে আগামীকাল (শুক্রবার) শুরু হচ্ছে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের খেলা। ছয় দিনে মোট ১২ ম্যাচ হবে। যেখানে রানের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু। ২০১০ সাল থেকে চট্টগ্রামের মাঠটির তত্ত্বাবধানে তিনি। অতীতের মতো এবারও চট্টগ্রামে রান উৎসব হবে আশা দিয়ে রাখলেন।

কিন্তু চট্টগ্রামের সীমানা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ঢাকা ও সিলেটের বাউন্ডারির সীমানা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। রান হয়েছে ঠিকই। চার-ছক্কার স্রোতে ভেসে গেছেন বোলাররা। কিন্তু আদর্শ সীমানায় খেলা না হওয়ায় কথা উঠছে বেশ। চট্টগ্রামে এমন কিছুর সুযোগই দিতে চান না সংশ্লিষ্টরা।

‘‘চট্টগ্রামের উইকেটে এমনিতেই রান হয়। পৃথিবীর সব দেশের ব্যাটসম্যানরা এখানে ব্যাটিং করে আনন্দ পায়। উইকেট সেভাবেই প্রস্তুত করা হয়েছে। শুনলাম সেদিন হেলস বলেছেন এখানে আসতে না পেরে ওর খারাপ লাগছে। কেন জানেন, ও এখানে সেঞ্চুরি করেছিল বিশ্বকাপ খেলতে এসে। তখন থেকেই ওর প্রিয় মাঠ।’’

‘‘আমাদের সীমানা ছোট করার প্রশ্নই আসে না। এমনিতেই বোলাররা টি-টোয়েন্টিতে বেধড়ক পিটুনি খেয়ে থাকেন। এর উপর যদি সীমানা ছোট করে দেই তাহলে ওদেরকে তো প্রবল চাপে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মাঠে এমনিতেই রান হবে। সীমানা ছোট করার কোনো সুযোগ আমি দেখি না।’’

পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকায় প্রথম ৮ ম্যাচে ছক্কা হয়েছে মোট ১৩২টি। সিলেটে সমান ম্যাচে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ২১০টি। ঢাকায় ম্যাচ প্রতি ছক্কা হয়েছে ষোলোটি। সিলেটে ১৭টি। ঢাকার সীমানা তেমন চোখে না লাগলেও সিলেটের সীমানা এতোটাই ছোট ছিল যে, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম কড়া সমালোচনা করতেও পিছু পা হননি।

যেখানে বাউন্ডারির সীমানা দুই পাশে ছিল কেবল ৫৮-৬০ মিটার। সোজাসুজি ৬০-৬৩ মিটার। অথচ ক্রিকেট মাঠের আদর্শ সীমানা সোজাসুজি ৭০-৭২ মিটার। দুই পাশে ৬৫-৭০ মিটার। চট্টগ্রামে এমন কিছুই ক্রিকেটারদের জন্য অপেক্ষা করছে। জানা গেছে, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোজাসুজি ৭০ মিটার। পূর্ব পাশে ৬৯ মিটার। পশ্চিম পাশে ৬৭ মিটার।

সিলেটে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন কুমার দাস। দুজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৫৪ রান হয়েছিল ঢাকা ক্যাপিটালসের। চট্টগ্রামেও সেঞ্চুরির প্রত্যাশা করছেন ঢাকার বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ। সীমানা বড় হওয়ায় খুশি এই ক্রিকেটারও। রাইজিংবিডির সঙ্গে কথোপকথনে তামিম বলেছেন, ‘‘বাউন্ডারি দেখিনি। সেন্টার উইকেটে আসলে দাঁড়িয়ে বোঝা যায় না এভাবে (সীমানা)। খেললে বলতে পারব। তবে চট্টগ্রামের বাউন্ডারি সব সময় একই থাকে। সিলেটে প্রথম ম্যাচের পর বাউন্ডারির সীমানা বাড়ানো হয়েছিল। আসলেও ওই (প্রথম) ম্যাচটা খুব ছোট বাউন্ডারিতে হয়েছিল। পরের ম্যাচগুলোতে বাউন্ডারি সত্তর মিটারের মতো ছিল। তামিম ভাই বলার পর…। বোলাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আসলে বড় বাউন্ডারি ভালো।’’

ফরচুন বরিশালের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল রাইজিংবিডিকে বললেন একই কথা, ‘‘সীমানা ছোট থাকলে তো আসলে কারও জন্যই ভালো নয়। ব্যাটসম্যানরা একটা ভুল আত্মবিশ্বাস পায় এতে। কারণ, অনেক সময় হাফ শট খেলেও বাউন্ডারি পেয়ে যায়। কিন্তু আরেকটু বড় সীমানায় হয়তো সেসব ক্যাচ হয়ে যেত। বড় সীমানার ক্ষেত্রে এত রানও হবে না। তখন খেলতেও হবে আরেকটু ভিন্ন পরিকল্পনায়।’’

‘‘বোলারদের জন্যও বিষয়টা হতাশাজনক। কারণ, বাউন্ডারি ছোট থাকলে তারা নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করতে পারে না। শেষ দিকে ইয়র্কারের চেষ্টা করতেও সংশয় কাজ করে। কারণ, হাফ ভলি হয়ে গেলে ছোট বাউন্ডারিতে সহজেই চার-ছক্কা চলে যাবে। তাই বোলাররাও স্বাভাবিক বোলিংটা করতে পারে না।’’

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে নামলেও ইলিশ মেলেনি

নদীতে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাট ক্রেতা ও বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম হওয়ার কথা থাকলেও তেমনটি দেখা যায়নি। সেখানে সীমিত পরিসরে ইলিশ বেচাকেনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ মে) দিনব্যাপী বড়স্টেশন মাছঘাটে এ অবস্থা দেখা যায়। জেলার পদ্মা ও মেঘনা নদীতে অর্ধ লাখ জেলে মাছ ধরতে নামলেও মাত্র কয়েক কেজি করে ইলিশ হাতে তাদের হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটারে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। যা বুধবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। আবার মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে গত ১৪ এপ্রিল থেকে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ৫৮ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা ১১ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। 

আরো পড়ুন:

জেলি পুশকৃত ২১০ কেজি চিংড়ি উদ্ধার, লাখ টাকা জরিমানা

হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা

দুপুরের দিকে আড়তদার সম্রাট বেপারী জানান, সকাল ৮টা হতে ঘাটে বেচাকেনা শুরু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৩-৪ মণের বেশি ইলিশ আসেনি। আর যা এসেছে, সবটাই স্থানীয় ইলিশ। এভাবে রাত ১০টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে।

খুচরা বিক্রেতা ফারুক বেপারী জানান, ঘাটে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০ টাকা, সাড়ে ৫শ’ গ্রামের টা ১৪৫০ টাকা, ১৩০০ গ্রামের টা ২৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

ঘাটের খুচরা মাছ বিক্রেতা শরিফ শিকদার ও সবুজ খান জানান, চাহিদা অনুযায়ী ঘাটে ইলিশ না থাকায় দাম বেশি। ঘাট সরগরম হওয়া শুরু হলে দাম কিছুটা কমবে।  

পুরানবাজারের জেলে আলম বলেন, ‘‘অনেক আশা নিয়ে নদীতে নেমেছিলাম। কিন্তু তিনটা ইলিশ পেয়েছি। এগুলোর দাম দিয়ে ট্রলারের জ্বালানির খরচও উঠবে না।’’  

এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত জানান, এখন ইলিশের মৌসুম নয়। তার ওপর সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। বৃষ্টি-বাদলও কম। জুন, জুলাইতে ঘাটে বেশি পরিমাণ ইলিশ আসতে পারে। ঘাটের প্রায় ১ হাজার লোক সেই আশা আছে। 

ঢাকা/জয়/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে নামলেও ইলিশ মেলেনি