ছোট সীমানা পেরিয়ে ‘আদর্শ ক্রিকেট’ মাঠে চট্টগ্রামের বিপিএল
Published: 15th, January 2025 GMT
রৌদ্রজ্জ্বল প্রভাত যতটা সুন্দর ছিল, মায়াময় বিকেল তার চেয়েও বেশি চিত্তাকর্ষক। হালকা হিম বাতাস, মিষ্টি রোদ আর নীল আকাশ…প্রকৃতিপ্রেমিদের আরাধ্য।
পূবের সূর্য চট্টগ্রামে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয়নি। শহরের ভেতরে থাকা এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সাত-সকালে অনুশীলনের কথা ছিল দুর্বার রাজশাহীর। কিন্তু পারিশ্রমিক না পেয়ে ‘বেঁকে’ বসে অনুশীলন বাতিল করেন ক্রিকেটাররা। ততক্ষণে ক্রিকেটাঙ্গন সরগরম। শুধু রাজশাহী নয়, একই অভিযোগ আরও দুয়েকটি দলের বিপক্ষে। চুক্তি অনুযায়ী এখনও ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পায়নি একাধিক দল!
সূর্যের নরম-গরম রোদ ঢালা মধ্যাহ্ন সাগরিকার সবুজ ঘাসের মাঠকে সোনাফলায় সাজিয়ে তুলেছিল। ওর মাঝেই ফরচুন বরিশাল, ঢাকা ক্যাপিটালস ও পরে খুলনা টাইগার্সের অনুশীলন চলল পুরোদমে। তামিম, লিটন, মোস্তাফিজ, মিরাজদের অনুশীলনে সরগরম হয়ে থাকল সাগর পাড়ের স্টেডিয়াম।
আরো পড়ুন:
চেক বাউন্সের পর রাজশাহীর অনুশীলন বাতিল
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের সময়সূচি
পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট-বলের ঠুকঠাক শব্দও কেটে যেতে থাকে। কিন্তু স্টেডিয়ামের কর্মব্যস্ততা, কর্মযজ্ঞ শেষ হয় না। রাত পোহালে এখানে আগামীকাল (শুক্রবার) শুরু হচ্ছে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের খেলা। ছয় দিনে মোট ১২ ম্যাচ হবে। যেখানে রানের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু। ২০১০ সাল থেকে চট্টগ্রামের মাঠটির তত্ত্বাবধানে তিনি। অতীতের মতো এবারও চট্টগ্রামে রান উৎসব হবে আশা দিয়ে রাখলেন।
কিন্তু চট্টগ্রামের সীমানা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ঢাকা ও সিলেটের বাউন্ডারির সীমানা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। রান হয়েছে ঠিকই। চার-ছক্কার স্রোতে ভেসে গেছেন বোলাররা। কিন্তু আদর্শ সীমানায় খেলা না হওয়ায় কথা উঠছে বেশ। চট্টগ্রামে এমন কিছুর সুযোগই দিতে চান না সংশ্লিষ্টরা।
‘‘চট্টগ্রামের উইকেটে এমনিতেই রান হয়। পৃথিবীর সব দেশের ব্যাটসম্যানরা এখানে ব্যাটিং করে আনন্দ পায়। উইকেট সেভাবেই প্রস্তুত করা হয়েছে। শুনলাম সেদিন হেলস বলেছেন এখানে আসতে না পেরে ওর খারাপ লাগছে। কেন জানেন, ও এখানে সেঞ্চুরি করেছিল বিশ্বকাপ খেলতে এসে। তখন থেকেই ওর প্রিয় মাঠ।’’
‘‘আমাদের সীমানা ছোট করার প্রশ্নই আসে না। এমনিতেই বোলাররা টি-টোয়েন্টিতে বেধড়ক পিটুনি খেয়ে থাকেন। এর উপর যদি সীমানা ছোট করে দেই তাহলে ওদেরকে তো প্রবল চাপে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মাঠে এমনিতেই রান হবে। সীমানা ছোট করার কোনো সুযোগ আমি দেখি না।’’
পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকায় প্রথম ৮ ম্যাচে ছক্কা হয়েছে মোট ১৩২টি। সিলেটে সমান ম্যাচে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ২১০টি। ঢাকায় ম্যাচ প্রতি ছক্কা হয়েছে ষোলোটি। সিলেটে ১৭টি। ঢাকার সীমানা তেমন চোখে না লাগলেও সিলেটের সীমানা এতোটাই ছোট ছিল যে, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম কড়া সমালোচনা করতেও পিছু পা হননি।
যেখানে বাউন্ডারির সীমানা দুই পাশে ছিল কেবল ৫৮-৬০ মিটার। সোজাসুজি ৬০-৬৩ মিটার। অথচ ক্রিকেট মাঠের আদর্শ সীমানা সোজাসুজি ৭০-৭২ মিটার। দুই পাশে ৬৫-৭০ মিটার। চট্টগ্রামে এমন কিছুই ক্রিকেটারদের জন্য অপেক্ষা করছে। জানা গেছে, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোজাসুজি ৭০ মিটার। পূর্ব পাশে ৬৯ মিটার। পশ্চিম পাশে ৬৭ মিটার।
সিলেটে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন কুমার দাস। দুজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৫৪ রান হয়েছিল ঢাকা ক্যাপিটালসের। চট্টগ্রামেও সেঞ্চুরির প্রত্যাশা করছেন ঢাকার বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ। সীমানা বড় হওয়ায় খুশি এই ক্রিকেটারও। রাইজিংবিডির সঙ্গে কথোপকথনে তামিম বলেছেন, ‘‘বাউন্ডারি দেখিনি। সেন্টার উইকেটে আসলে দাঁড়িয়ে বোঝা যায় না এভাবে (সীমানা)। খেললে বলতে পারব। তবে চট্টগ্রামের বাউন্ডারি সব সময় একই থাকে। সিলেটে প্রথম ম্যাচের পর বাউন্ডারির সীমানা বাড়ানো হয়েছিল। আসলেও ওই (প্রথম) ম্যাচটা খুব ছোট বাউন্ডারিতে হয়েছিল। পরের ম্যাচগুলোতে বাউন্ডারি সত্তর মিটারের মতো ছিল। তামিম ভাই বলার পর…। বোলাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আসলে বড় বাউন্ডারি ভালো।’’
ফরচুন বরিশালের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল রাইজিংবিডিকে বললেন একই কথা, ‘‘সীমানা ছোট থাকলে তো আসলে কারও জন্যই ভালো নয়। ব্যাটসম্যানরা একটা ভুল আত্মবিশ্বাস পায় এতে। কারণ, অনেক সময় হাফ শট খেলেও বাউন্ডারি পেয়ে যায়। কিন্তু আরেকটু বড় সীমানায় হয়তো সেসব ক্যাচ হয়ে যেত। বড় সীমানার ক্ষেত্রে এত রানও হবে না। তখন খেলতেও হবে আরেকটু ভিন্ন পরিকল্পনায়।’’
‘‘বোলারদের জন্যও বিষয়টা হতাশাজনক। কারণ, বাউন্ডারি ছোট থাকলে তারা নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করতে পারে না। শেষ দিকে ইয়র্কারের চেষ্টা করতেও সংশয় কাজ করে। কারণ, হাফ ভলি হয়ে গেলে ছোট বাউন্ডারিতে সহজেই চার-ছক্কা চলে যাবে। তাই বোলাররাও স্বাভাবিক বোলিংটা করতে পারে না।’’
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাগরে ইলিশ মিলছে কম, চড়া দাম আড়তে
নিষেধাজ্ঞা শেষে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য আড়ত কেবি বাজার। সাগরে প্রায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের ভৈরবতীরের এ মাছ বাজার।
সাগরে মাছ আহরণ শেষে শুক্রবার ভোরে কেবি বাজার ঘাটে দুটি ট্রলার ভেড়ে। তবে মাছের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ব্যবসায়ীরা জানান, ৫৮ দিনের অবরোধ শেষে সাগর থেকে এই প্রথম দুটি ট্রলার এসেছে। তবে এসব ট্রলারে মাছের পরিমান খুবই কম। ফলে দাম অনেক বেশি।
জেলে রুহুল জানান, তাদের ট্রলার সাগরে যাওয়ার পরে মাত্র কয়েকবার জাল ফেলতে পেরেছেন। এতে অল্প কিছু ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ পেয়েছেন। পরে ট্রলারে সমস্যা হওয়ায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
শুক্রবার বাজারে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আধা কেজি থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া রূপচাঁদা আকার ভেদে প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, কঙ্কন, তুলারডাটি, ঢেলা চ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবা, বিড়াল জাবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ একশ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাগর থেকে বেশি করে ট্রলারের আগমন ও মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে দাম কমবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মোরেলগঞ্জ থেকে মাছ কিনতে আসা তৈয়ব মুন্সি বলেন, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তিনি বাজারে আসেননি। অনেক দিন পরে আজই বাজারে এসেছেন, তবে দাম অনেক বেশি। তারপরও কিছু মাছ কিনেছেন। বেশি দামে মাছ কিনে এলাকায় বিক্রি করে লোকসানের শঙ্কা জানান তিনি।
কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর শুক্রবার প্রথমবারে সাগর থেকে ট্রলার এসেছে। জেলেরা তেমন মাছ পায়নি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পাইকার আসছে। যার কারণে দাম কিছুটা বেশি। সাগরে বেশি পরিমাণ মাছ ধরা পড়লে দাম কিছুটা কমবে বলে জানান তিনি।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সাগরে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিল।