সিলেট স্ট্রাইকার্সের পেসার তানজিম হাসান সাকিব শেষ ম্যাচ খেলতে পারেননি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘাড়ের রগ ফুলে যাওয়ায় তাকে বিশ্রাম দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট।

গত ২০ জানুয়ারি ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনে ব্যথা অনুভব করেন সাকিব। এরপর তাকে মাঠে নামায়নি সিলেট। চট্টগ্রামে সিলেটের পরবর্তী ম্যাচ ২৩ জানুয়ারি খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। সেই ম্যাচেও পাওয়া যাবে না ৬ ম্যাচে ১১ উইকেট পাওয়া তানজিমকে। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে রাইজিংবিডি এ খবর নিশ্চিত হয়েছে।

আট ম্যাচে দুই জয় পাওয়া সিলেটের এখনও সুযোগ আছে প্লে’ অফে যাওয়ার। শেষ চার ম্যাচের চারটি জিতলে তারা সহজেই চলে যাবে শেষ চারে। শেষ দিকের ম্যাচগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও দলের অন্যতম সেরা তারকা তানজিমকে খেলিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না টিম ম্যানেজমেন্ট।

জাতীয় দলের এই পেসার বিপিএলের পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নেবেন। এজন্য তাকে বাড়তি চাপ দেওয়ার পক্ষপাতি নয় টিম ম্যানেজমেন্ট। চট্টগ্রাম পর্ব শেষে ঢাকায় ফেরার পর তাকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সিলেট।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাঙ্কারে গ্রেনেড থ্রো করাতে কাজ হয়েছিল’

১৯৭১ এর জুনের শেষ সপ্তাহে দেরাদুন এর চকরাতায় ট্রেনিং শেষ করে একসঙ্গে দুইটি ব্যাচের সদস্য আগরতলা হয়ে ঢাকায় ঢুকি। স্কোয়াড দুটির নেতা ছিলেন- কামরুল হাসান খসরু ও মোস্তফা মহসিন মন্টু। আমি মন্টুর স্কোয়াডে ছিলাম। তিনি একটি স্বোয়াড তিনটি ভাগে ভাগ করলেন। এক ভাগের দায়িত্ব দিলেন আমাকে। আমার শেল্টার ছিল ডেমরার মাতুয়াইল। একদিন হঠাৎ করে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ডেমরা এলাকার মাতুয়াইল আর  পোস্তাগোলা হয়ে ফতুল্লা এলাকা ঘেরাও করে পাক আর্মি।


আমি যে বাড়িতে ছিলাম বাড়ির কর্তা মসজিদে ফজর নামাজ পড়তে গিয়ে দেখেন পাকবাহিনী গ্রাম ঘিরে ফেলেছে।ফিরে এসে আমাকে ঘুম থেকে জাগালেন। আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যে পথ দিয়ে পালাতে চেষ্টা করি, সেখানেই পাক- বাহিনীর অবস্থান। অগত্যা আমি ফিরে এলাম। বাড়ির কর্ত্রীকে আমি আপা বলে ডাকতাম- তিনি আমাকে অসুস্থতার ভান করে বিছানায় শুয়ে থাকতে বললেন আর বিছানার পাশে কিছু ওষুধের বোতল রেখে দিলেন। এরপর এক বালতি পানি এনে আমার মাথায় পানি দিতে থাকলেন।

আরো পড়ুন:

শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন গোপন নথি

৮ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়েছিল কুষ্টিয়ার যেসব স্থান

পাক সেনা বাড়িতে তল্লাশি শুরু করলো। আমার বাড়ির মালিকের কাছে জানতে চাইলো আমার কী হয়েছে? বাড়ির কর্তা চোস্ত উর্দুতে বললেন ‘বোখার’। পাশের বাড়ির এক ছেলে আর তার বাবা পাক-সেনাদের দেখে ভয়ে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করে, বাবা-ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলে পাক সেনা।  বাবা ও ছেলেকে গুলি করে হত্যা করার পরে নিহত ব্যক্তির স্ত্রীকে মুরগি ধরে দিতে বলে। স্বামী সন্তানের লাশ পড়ে থাকলো আর উঠানে ভাত ছিটিয়ে মোরগ ধরে দিলেন সেই স্বামী ও সন্তান হারানো নারী। কি নির্মম পৈশাচিকতা! আমি বেঁচে যাই আপার তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা আর গৃহকর্তার চোস্ত উর্দু বলার কারণে।

নারায়ণগঞ্জের পাগলায় দেলপাড়া স্কুলে আর্মি ক্যাম্প ছিল।ঢাকা শহর প্রতিরক্ষার জন্য পাক- বাহিনী ঢাকার  প্রবেশস্থলে ঘাঁটি তৈরি করে।জুলাই মাসে সিদ্ধান্ত নেই— এই ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ করে আমরা অস্ত্র ছিনিয়ে নিব। অস্ত্র সংগ্রহ করতে হলে ক্যাম্পে প্রবেশ করে অস্ত্র ছিনিয়ে আনতে হবে। ব্যাপারটা সহজ ছিল না।এই ক্যাম্পে প্রতিরক্ষা বিষয় খোঁজ খবর করতে শুরু করি।ক্যাম্পের আশপাশের মানুষদের ওরা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করতো। কাজ করার বাহানায় তারা ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারতো। শেষে তাদের কাছ থেকেই পাক-সেনাদের খোঁজ নিতে শুরু করি। জানতে পারি স্কুলের উপর তলায় গার্ড রুমে দুজন সেন্ট্রি পাহারায় থাকে, তাদের হাতে থাকে এলএমজি। নিচের তলায় রান্না ঘরই হলো তাদের অস্ত্র রাখার জায়গা।
আমরা ক'জন— কিবরিয়া, কবির, ফজলু, কেমু, নাজিম, সামাদ ক্যাম্পের কাছে অবস্থান করতে থাকি।পাকসেনাদের জন্য ট্রাক ভর্তি রেশন এসেছিলো।  সামাদ তাদের ট্রাকের সামনে দাঁড়াতেই ট্রাক থেকে মালামাল খালাস করতে ওকে ডেকে নেয় পাক সেনারা। আমরাও তাই চেয়েছিলাম। সামাদ যাতে ভালো করে ভেতরটা দেখে আসে। সামাদ মাল খালাস করে দেওয়ারপর, তাকে পারিশ্রমিক হিসাবে এক কেজি চাল দেয় তারা।

আমরা আক্রমণের প্ল্যান করলাম।মাতুয়াইল স্কুলে এক্সারসাইজ করলাম, কারণ ঐ দুটো স্কুলের গঠন প্রায় একই রকম।হিসাব করলাম কত সময় লাগবে।কত গুলি খরচ হবে, অস্ত্র যদি নিতে পারি, অস্ত্রগুলো কাছাকাছি কোথায় লুকিয়ে রাখা যাবে, যদি ঢোকার আগে প্রতিরোধ হয়, তাহলে গোলাগুলি করে তাহলে কীভাবে ফিরবো আর আমরা কী ভাবে প্রতিরোধ করবো ইত্যাদি। 

জুলাই এর শেষ সপ্তাহ ২৯/৩০ তারিখ হবে। রাতে, আমরা আর্মি ক্যাম্পের স্কুলের পাশে একটি বাড়িতে প্রবেশ করি।বাড়িটি ছিল একজন মুচির। হিন্দু দলিত সম্প্রদায়ের হওয়ায় ক্যাম্পের পাক সেনাদের সাথে সে সম্পর্ক গড়তে পেরেছিলো। আমাদের দেখে বাড়ির লোক হতভম্ব হয়ে, ভয়ে কাঁপতে থাকে। তাকে চুপ থাকতে বলি। আমাদের মধ্যে দু'জন গেলো দুটো বাঙ্কার আক্রমণ করতে। আমরা পাঁচজন ক্যাম্পের কাছে লুকিয়ে থাকি। ব্যাঙ্কারে গ্রেনেড ছোড়ার শব্দে আমরা সিগন্যাল পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করি।

ক্যাম্পে পাক আর্মি ঘুমিয়েছিল। জেগে উঠে অস্ত্র ধরতে যাবে তৎক্ষণাৎ গ্রেনেড থ্রো করে কবির আর কিবরিয়া। দোতলা থেকে পাক আর্মি নেমে আসছিল, সিঁড়ির গোড়া থেকে গুলি করলেও ভয় ছিল। বেশি সময় থাকা যাবেনা। বাঙ্কারে গ্রেনেড থ্রো করাতে কাজ হয়েছিল। আমরা ককটেলের বোতলে পেট্রোল ভরে, বোতলে হাই এক্সক্লুসিভে ডিটোনেটর বসিয়েছিলাম। আমাদের কাছে গুলি ও গ্রেনেড কম থাকায় হিসাব করে খরচ করতে হতো। এজন্য এই কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছিলো। ঢাকা শহরে এর আগে এ ধরনের অপারেশন আর হয়নি।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছিলাম, সে রাতেই ঢাকা থেকে পাক আর্মি এসে আহত, নিহতদের নিয়ে যায়। আমাদের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন ছিল ১২ অক্টোবর দুপুর ১২ টায় যাত্রাবাড়ী আর গেন্ডারিয়া এলাকায় দয়াগঞ্জ আর্মি ক্যাম্প আক্রমণ।  ওই আক্রমণে আমার টুআইসি কিবরিয়া নিহত হন।

অনুলিখন: লিনু হক

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ