বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের রাজনীতি ফেরাতে সংশ্লিষ্ট থাকায় আট শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি আরও ৫২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও শোকজ করা হয়েছে। রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা বুয়েট ক্যাম্পাসে গত বছরের মার্চে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় রাজনীতি ফেরাতে তারা বেশ সরব ছিলেন। বিষয়টি তদন্ত করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড.

এ কে এম মাসুদ। তবে শাস্তি পাওয়া কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি।

গত ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পুরকৌশল বিভাগের ইমতিয়াজ রাব্বি ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইনানকে নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে লোকসমাগম ঘটান। এ ঘটনা জানাজানি হলে উত্তাল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে তাদের বহিষ্কার দাবি করেন।

তারা দাবি জানান, রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। তার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী এ এস এম আনাস ফেরদৌস, হাসিন আরমান নিহাল, অনিরুদ্ধ মজুমদার, জাহিরুল ইসলাম, সায়েম মাহমুদকে বুয়েট থেকে স্থায়ী একাডেমিক ও হল থেকে বহিষ্কার এবং জড়িত অন্যদের অবিলম্বে শনাক্ত করে শাস্তি দিতে হবে।

আন্দোলন চলার মধ্যেই ছাত্রলীগের একটি রিটে হাইকোর্ট বুয়েটে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করায় বুয়েট শহিদ মিনারে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান ছাত্রলীগের তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক হাসিন আজফার পান্থ, কেমিকেল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক আলম, সাগর বিশ্বাস, অরিত্র ঘোষ, ২১তম ব্যাচের অর্ঘ্য দাস এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর স্বপ্নীলসহ ১০-১২ জন। তারা গণমাধ্যমেও বক্তব্য দেন।

এ সব ঘটনায় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে ৪১টি সভা এবং ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের ৭টি সভা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান ছাত্র কল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মাসুদ।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি ৪১টি মিটিং করে। এছাড়া ডিসিপ্লিনারি কমিটি আরও সাতটি বৈঠক করে। সেখানে অভিযোগ যাচাই বাছাই করে দেখা যায়, অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অর্ডিন্যান্স রয়েছে সেটির ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এজন্য আট শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও ১২ জনকে চার থেকে ছয় সেমিস্টার/টার্মের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের সাজা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ছয়জনকে দুই সেমিস্টার/টার্মের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এই ছয়জনের বহিষ্কারাদেশ এখন স্থগিত আছে। যদি তারা ভবিষ্যতে কোনো অপরাধ করে থাকে তাহলে তাদের বহিষ্কার তখন থেকে কার্যকর হবে। এর বাইরে সাতজনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও ২৭ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্তদের চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ