ভারতের আশ্রয়ে থাকা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফেসবুক লাইভে আসা, তার প্রতিবাদে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ভাঙচুর-আগুনের ঘটনা নিয়ে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ঢাকা ও নয়াদিল্লি।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মুহাম্মদ নুরুল ইসলামকে তলব করে বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে থামাতে ভারত সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয় ভারতীয় দূতকে।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার বক্তব্যের জন্য ভারত দায়ী নয়: রণধীর জয়সওয়াল
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলাদেশির লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের দূতকে তবল করার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “ভারতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো.
তবলের বিষয়ে জয়সওয়াল বলেন, “তাকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত একটি ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক উপকারের সম্পর্ক চায়। বিষয়টি সম্প্রতি উচ্চ-পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বৈঠকে বারবার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে এটি দুঃখজনক যে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নিয়মিত বিবৃতিতে ভারতকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে। এসব বিবৃতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর জন্য ভারতকে দায়ী করা হচ্ছে; ক্রমাগত নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।”
শেখ হাসিনার ফেসবুক লাইভে এসে দেওয়া বক্তব্যে ভারতের কোনো হাত নেই দাবি করে জয়সওয়াল বলেন, “এটি তিনি ব্যক্তিগতভাবে করেছেন।”
“ভারত সরকারের অবস্থানকে এভাবে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করলে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচকতা যোগ করতে সাহায্য করবে না,” বলেন জয়সওয়াল।
তিনি বলেন, “যদিও ভারত সরকার পারস্পরিক কার্যকর সম্পর্কের জন্য প্রচেষ্টা চালাবে, আমরা আশা করি বাংলাদেশ পরিবেশকে খারাপ না করে একইভাবে পদক্ষেপ নেবে।”
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে দেন শেখ হাসিনা। সেই ঘটনার ছয় মাস পর ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ফেসবুক লাইভে এসে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এরপর দুই দিনে দুই দেশে হাই কমিশনারদের তলব করার ঘটনা ঘটল।
শেখ হাসিনা যখন লাইভে কথা বলছিলেন, তখন ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভেঙে আগুন দিয়ে উল্লাস করছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। সেই সময় হাসিনা বলেন, “তারা একটি ভবন ভাঙতে পারে কিন্তু ইতিহাস নয়। কিন্তু তাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, ইতিহাস তার প্রতিশোধ নেয়।”
ভারতের বসে শেখ হাসিনার এসব কথাকে ভালোভাবে নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। একে ‘শত্রুতাপূর্ণ কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনাকে থামাকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ঢাকা। এক বিবৃতিতে বলা হয়, এটি দুই দেশের মধ্যে একটি সুস্থ সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য সহায়ক নয়।
তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা এসব বক্তৃতা ও বিবৃতি দেওয়ায় ভারতের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
এসব বক্তব্য–বিবৃতি থেকে শেখ হাসিনাকে বিরত রাখতে বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে তার হাতে একটি প্রতিবাদপত্র দিয়েছে। ওই দিন বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার পবন ভাদেকে তলব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ) ইশরাত আরা।
প্রায় ছয় মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ও ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার পবন ভাদেকে চারবার তলব করল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা, সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যাসহ নানা ঘটনায় তাদের ডেকে প্রতিবাদ করেছে ঢাকা।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জয়সওয় ল পদক ষ প র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনে এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। আজ শুক্রবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ করেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) জনসমক্ষে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে বুক ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা–কর্মী শনাক্ত হয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়আজ রাত ১০টার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে আবার বটতলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চ, বিল্পবী সাংস্কৃতিক মঞ্চের নেতা-কর্মীসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
মিছিলপরবর্তী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আহসান লাবিব।
সমাবেশে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান বলেন, ‘গত ৯ মাসে বিএনপির অন্তঃকোন্দলের কারণে প্রায় দেড় শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি এই বাংলাদেশে আর হতে দেব না। আপনারা যদি না শোধরান, তাহলে হয়তো আগামীতে আপনাদের ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন পূরণ হবে, কিন্তু কত দিন ক্ষমতায় টিকে থাকবেন, সেটা ছাত্র-জনতা আবার ঠিক করে দেবে।’
সমাবেশে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি শাফায়েত মীর বলেন, ‘আবার যারা আওয়ামী লীগের পুরোনো বন্দোবস্ত চালু করতে চায়, আবার চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন করতে চাচ্ছে, সেই দলকে আমরা বলব, চাঁদাবাজি না করে ভিক্ষা করুন, আমরা ভিক্ষা দেব। কিন্তু আমরা আপনাদের জুলুম, নির্যাতন, খুন মেনে নেব না। প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামব।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘বিএনপি যদি এই খুন, রাহাজানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে হয়তো সেদিন বেশি দূরে নেই, যে পথে আমরা লীগকে পাঠিয়েছি, সেই পথে ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের সহযোদ্ধা বিএনপিকেও হয়তো হাঁটতে হবে।’
পুরান ঢাকায় নৃশংশ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শুক্রবার রাত আটটায় ক্যাম্পাসে