সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতের ওপর আরোপিত বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সাবেক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার পুনর্গঠনে সহায়তা করার লক্ষ্যে সোমবার দেশটির জ্বালানি, পরিবহন ও ব্যাংকিং খাতে নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় আসাদ সরকারের ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ। সাবেক বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে নতুন সরকার এসব নিষেধাজ্ঞা শিথিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। সিরিয়ায় ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ গড়ার দাবিতে ইউরোপ ও অন্য শক্তিধর দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে অনড় ছিল।
অবশেষে সোমবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সেই অবস্থান থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এএফপি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সংশ্লিষ্টদের যুক্ত করলে সুফল পাওয়া যায়
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমানোর সরকারি প্রতিনিধিদলের পাশাপাশি আমরা কয়েকজন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ওয়াশিংটনে সফরে রয়েছি। আমরা যারা এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি, আমরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ক্রেতা। বাংলাদেশে বসে আমরা সয়াবিনবীজ, এলপিজি, তুলা, সয়াবিনসহ নানা পণ্য কিনে থাকি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এখন এই শুল্ক আলোচনায় অংশ নিতে সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি মূলত বাণিজ্যঘাটতি মেটাতে। বাড়তি পাল্টা শুল্কের কারণে আমাদের রপ্তানিকারকেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কেনা বাড়িয়ে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই।
সফরকালে গত কয়েক দিনের যুক্তরাষ্ট্রের তুলা, সয়াবিন, এলপিজি খাতের বড় বড় রপ্তানিকারক ও তাঁদের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। এ সময় আমরা দেশটির বড় কিছু রপ্তানিকারকের সঙ্গে পণ্য আমদানির সমঝোতা চুক্তিও করেছি। আমরা তাঁদের আশ্বস্ত করেছি, বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক যদি কমানো হয়, তাহলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়াতেও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। তাতে দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্যঘাটতি কয়েক বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে। আমরা তাদের এ–ও বলেছি, শুধু তুলা, এলপিজি ও সয়াবিন আমদানি বাড়িয়ে আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে দুই বিলিয়ন বা দুই শ কোটি ডলারের বেশি বাণিজ্যঘাটতি কমানো সম্ভব হবে। তাতে বাণিজ্যঘাটতির ৭৫ শতাংশই কমে আসবে।
আমাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য খাতের রপ্তানিকারকেরা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাঁরা আমাদের হয়ে দেশটির সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তিতর্কও তুলে ধরেছেন। যার সামগ্রিক সুফল আমরা দেখেছি শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণায়। যদিও আমরা আরও কিছুটা কম শুল্ক আশা করেছিলাম। এবারের পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী বা রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও সরকারি পর্যায়ে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে যে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে, তা দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই ইতিবাচক। এই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে উভয় দেশেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিলেও এ জন্য সরকারি নীতি সহায়তা লাগবে। সরকারি নীতি সহায়তা ছাড়া এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন কঠিন হবে। বিষয়টি আমরা এরই মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়েছি। তাঁরা আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। আমরা মনে করি, সরকারি নীতি সহায়তা পেলে বেসরকারি পর্যায়ের নানা উদ্যোগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি অনেকাংশে কমে আসবে।
গত কয়েক দিনের আলোচনায় আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আরও বেশি বৈচিত্র্য আনতে হবে। সস্তা দামের পোশাক রপ্তানি দিয়ে এ বাজারে আর বেশি দিন প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র অনেক ধরনের পণ্য আমদানিতে শূন্য শুল্ক–সুবিধাও দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করি কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শূন্য বা কম শুল্কের যে সুবিধা, সেটি আমরা সেভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। এখন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, সরকারকে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
সবশেষে আমরা বলব, সরকার শেষ মুহূর্তে এসে শুল্ক ইস্যুতে শুধু বাণিজ্যঘাটতি দূর করতে আমাদের কাজে লাগিয়েছেন। আমরাও আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে সর্বোচ্চ সহায়তার চেষ্টা করেছি। আমরা মনে করি, বাণিজ্যিক যেকোনো দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে বাণিজ্য–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে যুক্ত করলে যে ভালো ফল পাওয়া যায়, এবারও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই আশা রাখছি, এ অভিজ্ঞতা সরকার ভবিষ্যতে কাজে লাগাবে। তবে এবারের আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে শুল্ক কমাতে যে আন্তরিক উদ্যোগ নিয়েছেন সেটিও প্রশংসার দাবি রাখে।
আমিরুল হক, সভাপতি, এলপিজি অপারেটরস অব বাংলাদেশ