সারাবিশ্বে প্রতিবছর ২২ কোটির বেশি আইফোন ইউনিট বিক্রি করে অ্যাপল।
নির্মাতা ফক্সকন এখন আইফোন উৎপাদনে ভারতে কাজ করছে। অ্যাপল ইতোমধ্যে ভারতে ২০ শতাংশ উৎপাদন লক্ষ্য বাড়িয়েছে, যা কার্গো বিমানে পৌঁছে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্রুত উৎপাদনে বাড়ানো হয় জনবল। ফক্সকন ভারতের চেন্নাই কারখানায় গত বছর দুই কোটি আইফোন তৈরি করেছে। আইফোনের দুটি মডেল ১৫ ও ১৬ রয়েছে ওই উৎপাদন তালিকার শীর্ষে।
যুক্তরাষ্ট্র আইফোনের সর্ববৃহৎ বিপণিকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত। শুরুতেই চীন থেকে আইফোন আমদানির ওপর বেশি নির্ভরশীল অ্যাপল। ইতোমধ্যে ভারত থেকে বিশেষ উদ্যোগে আইফোন আমদানি করেছে অ্যাপল। কারণ, চীনের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের শুল্কহার নীতি চীনের তুলনায় ভারতে অনেক কম (মাত্র ২৬ শতাংশ)। কিছুদিন আগে অ্যাপল ট্রাম্পের শুল্কহার থেকে রেহাই পেতে ভারত থেকে কয়েকটি কার্গো বিমানে ৬০০ টন আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে, সংখ্যায় যা প্রায় ১৫ লাখ ইউনিট। রিপোর্ট বলছে, অ্যাপল হুট করে দাম বাড়ার শঙ্কায় গোপনে এমন কৌশল নিয়েছে। ট্রাম্পের বাড়তি শুল্কের চাপ কমাতে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন আমদানি বাড়িয়েছে অ্যাপল।
জানা গেছে, মূলত ট্রাম্পের শুল্ক ধাক্কার চাপ সামলাতে এমনটা করেছে অ্যাপল। চীনের বদলে ভারতে আইফোন উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করেছে অ্যাপল। ইতোমধ্যে অ্যাপল ভারতের চেন্নাই বিমানবন্দরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের সময় কমিয়ে ছয় ঘণ্টা করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেনদরবার করছে।
রিপোর্টে প্রকাশ, গত মার্চ থেকে ছয়টি কার্গো জেট (প্রতিটির ধারণক্ষমতা ১০০ টন) চেন্নাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে। আইফোন-১৪ মডেলের প্যাকজের ওজন প্রায় ৩৫০ গ্রাম। প্যাকেজিং হিসাব বলছে, ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ছয়টি কার্গোতে প্রায় ১৫ লাখ আইফোন ইউনিট রপ্তানি হয়ে থাকতে পারে। অবশ্য অ্যাপল ও ভারতের বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে কিছুই বলেনি; বরং বিশেষ গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে।
চীনের ওপর শুল্কহার বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন ট্রাম্প। আগে ৫৪ শতাংশ হারে আইফোন-১৬ প্রো ম্যাক্স মডেলের দাম পড়ত ১ হাজার ৫৯৯ ডলার। নতুন শুল্কে যা বেড়ে ২ হাজার ৩০০ ডলারে পৌঁছে যাবে। এতে ক্রেতার ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। ভাটা পড়ত আইফোন বিপণনে। সম্ভাব্য ক্ষতির মুখে পড়ত অ্যাপল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইফ ন অ য পল র ওপর আইফ ন আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জানমালের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়কে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ অনলাইনে কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা অব্যাহত আছে। জননিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা রয়েই গেছে। পুলিশ আশঙ্কা করছে, আগামীকাল (১৭ নভেম্বর) পর্যন্ত এ ধরনের চোরাগোপ্তা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে। ফলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আদৌ সেটা যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন ও সংশয় থেকে যাচ্ছে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, বরগুনা ও গাজীপুরে চারটি বাসে ও আশুলিয়ায় একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়। ঢাকায় পাঁচ জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্প থেকে ৩৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বাসে আগুন দিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় মানুষের ধাওয়ায় নদীতে পড়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়।
১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগ সেদিন অনলাইনে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং ৭ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছেন্ন কিছু নাশকতার ঘটনা শুরু হয়। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ২৯টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলপুরে একটি বাসে আগুন দিলে ঘুমিয়ে থাকা এক ব্যক্তি নিহত হন, আহত হন আরও একজন। মানিকগঞ্জে গভীর রাতে বাসে আগুন দিলে একজন গুরুতরভাবে দগ্ধ হন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় চোরাগোপ্তা ককটেল বিস্ফোরণ ও ঝটিকা মিছিলও হয়েছে। ব্যাংক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাশকতার ঘটনাও ঘটেছে।
সামগ্রিকভভাবে নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও নাশকতাকারীদের ধরতে বিশেষ অভিযানের পরও নাশকতা থামানো যাচ্ছে না। ঢাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করায় নাশকতার ঘটনা কিছুটা কমলেও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। ফলে যেসব জেলায় নাশকতার ঘটনা বেশি ঘটছে, সেসব জায়গায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে হবে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ কোনো রাজনৈতিক দলের আইনগতভাবে কর্মসূচি পালনের কোনো সুযোগ নেই। নাশকতা ঠেকাতে সরকারকে অবশ্যই কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সেই দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। গত এক সপ্তাহে প্রায় ১৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে নাশকতা ঠেকানোর নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা–কর্মীদের যেভাবে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে, তাতে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে কর্মসূচির নামে সহিংসতা, বাসে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা এবং এসব নাশকতা প্রতিরোধের নামে পাল্টা কর্মসূচি আকছার দেখা যায়। রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিকদের জিম্মি করে কর্মসূচি পালন করতে অভ্যস্ত। এতে শেষ পর্যন্ত নাগরিকেরাই দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েন, নাশকতার আগুনে মৃত্যু হয়, সর্বস্ব হারান। এই ধারার সংঘাতময় রাজনীতির অবসান চান নাগরিকেরা। রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখা প্রয়োজন যে নাশকতা ঠেকানো ও নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তারের দায়িত্ব পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
আইসিটিতে শেখ হাসিনার রায় ঘিরে নাগরিকদের মধ্যে যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তা প্রশমন করতে হবে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।