আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কেটেছে গোমতীপারের মানুষের, বাঁধে খুপরি বানাচ্ছেন কেউ কেউ
Published: 10th, July 2025 GMT
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সংরাইশ এলাকা। দুপুরে গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজনের ভিন্ন রকম ব্যস্ততা দেখা গেল। কেউ সড়কের পাশে বেড়িবাঁধের ওপর মাটিতে বাঁশ গাড়ছেন। কেউ আবার সেই বাঁশে পলিথিন বা ত্রিপল দিয়ে খুপরি ঘর বানাচ্ছেন। নদীর পানি বাড়ায় নারী-পুরুষ সবার মধ্যেই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।
পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সত্তরোর্ধ্ব আনোয়ারা বেগম। বেড়িবাঁধের ভেতরে গোমতী নদীর চরে ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন। গোমতী নদীর পানি ঘরের কাছাকাছি চলে আসায় উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। আনোয়ারা বলেন, ‘তিন দিন ধইরা নদীর পানি বাড়তাছে। গত বছর এক রাইতের মইধ্যে আমার সবকিছু ভাসাইয়া লইয়্যা গেছে। তহন কয়েকটা পোলাপাইন আমারে উদ্ধার কইরা একটা স্কুলে নিয়া গেসিল। বন্যা যাওনের পর মাইনষের কাছ থাইক্যা সাহায্য লইয়া ঘরটা ঠিক করছিলাম। এহন আবার হুনতাছি বন্যা আইতাছে। কালকা রাইতে এক মিনিটও ঘুমাইছি না।’
পাশে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে খুপরি ঘর বানাচ্ছিলেন বাবুল মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের মতোই পানি বাড়তেছে। পানি এখন যে অবস্থায় আছে, আরেকটু বাড়লেই চরের বাসিন্দাদের ঘরে প্রবেশ করবে। এ জন্য বাঁশ আর পলিথিন দিয়ে এটি নির্মাণ করেছি যেন মালপত্র এনে রাখা যায়।’
বৃহস্পতিবার উপজেলার টিক্কারচর, জগন্নাথপুর, সংরাইশ, বানাসুয়া, অরণ্যপুরসহ গোমতী নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে অন্তত ২০টি স্থানে এমন খুপরি নির্মাণ করতে দেখা গেছে। নদীতে পানি বাড়ায় কেউ কেউ বাড়িঘর ছেড়ে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মালামাল বেড়িবাঁধে এনে রাখছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ধীরগতিতে হলেও ইতিমধ্যে গোমতী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে গোমতীর ভয়াবহ রূপ দেখেছিলেন কুমিল্লাবাসী। ২২ আগস্ট রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াসহ কয়েকটি উপজেলা। স্মরণকালের সেই বন্যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন বাসিন্দারা। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গোমতী নদীর পানি বাড়ছে। যদিও আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। এরপরও পানি বাড়তে থাকায় চারদিকে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
গোমতী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে বাঁশ, পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী স্থাপনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সংরাইশ এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নদ র প ন উপজ ল র পল থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা
সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ
এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী