পাহাড়, নদী ও সমুদ্র—এ তিন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত শহর চট্টগ্রাম। ফলে শহরটির পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও অন্য শহরের তুলনায় ভিন্ন। শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন খাল ও সড়কের বেশির ভাগের অবস্থানই পাশাপাশি। খালগুলোতে যেভাবে বা যে প্রকারে নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকা দরকার, তা অনুপস্থিত। খালের মধ্যে পড়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবারও এক শিশু খালে পড়ে যায়, পরের দিন আরেক খালে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নগরবাসীর প্রশ্ন, এভাবে আর কত মৃত্যু দেখতে হবে!
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, একটি পরিবার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় অটোরিকশাটি উল্টে খালে পড়ে যায়। মা ও দাদি দুজন উঠে আসতে পারলেও স্রোতে ভেসে যায় সঙ্গে থাকা শিশু। শুক্রবার রাত আটটার দিকে কাপাসগোলার হিজড়া খালে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটিকে উদ্ধারে সিটি করপোরেশানের উদ্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। ডুবুরিরাও তল্লাশি চালান। পরদিন প্রায় চার কিলোমিটার দূরের চাক্তাই খালে ভেসে ওঠে শিশুটির মরদেহ।
রিকশা পড়ে যাওয়ার স্থানটিতে পরদিন বাঁশের বেষ্টনী বসানো হয়েছে। অনেকে বলছেন, সেখানে আগেই বেষ্টনী ছিল। কিন্তু খালের কাজ করতে গিয়ে সেটি সরিয়ে ফেললে পরে আর বসানো হয়নি। যা–ই হোক, বেষ্টনী থাকলে হয়তো এ দুর্ঘটনা না–ও ঘটতে পারত। আবার অনেকে বলছেন, বেষ্টনী থাকলেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতই।
উন্মুক্ত নালা বা খালের পাশে সড়ক দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশার গতি নিয়ন্ত্রণ বা ডিজাইনে পরিবর্তন আনার বিষয়টি আমাদের ভাবতেই হবে। প্যাডেলচালিত রিকশাতে শুধু একটি মোটর লাগিয়ে দিয়ে যেভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা নামানো হচ্ছে রাস্তায়, তা যেকোনো প্রকারে রোধ করা দরকার। ব্যাটারিচালিত রিকশার ডিজাইন কেমন হবে, তার চলাচল কীভাবে হবে, এ–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে আসতেই হবে। এ ছাড়া এ–সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনের কোনো উপায় নেই।
চট্টগ্রাম শহরে গত ছয় বছরে নগরে খাল-নালায় পড়ে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবারের ঘটনার পর খাল-নালা নিরাপদ করার প্রসঙ্গটি আবার সামনে এসেছে। সরকারি সংস্থাগুলো দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা।
আমরা আশা করব, নগরীর খাল ও নালাগুলো সরকারি যে সংস্থার অধীনে, সেখানে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তারা নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। আসন্ন বৃষ্টি মৌসুমের আগেই কাজটি শুরু হোক। আমরা এমন মৃত্যুর ঘটনা আর দেখতে চাই না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।