নতুন দল প্জারথধতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের পর থেকেই বাংলাদেশে তুমুল গতিতে রাজনৈতিক দল গঠন শুরু হলো। কেউ দল বানাচ্ছেন ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে, কেউ চাচ্ছেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। দল গঠনের আগে কেউ ভেবে দেখছেন না তাঁদের আগেও অন্য দল ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার কথা ঘোষণা করেছে এবং সেই দলে যোগ দিয়ে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা আরও ত্বরান্বিত করা যায় কি না! গণতন্ত্রের জন্য যাঁরা নতুন দল করছেন, তাঁদের ব্যাপারেও একই কথা বলা যেতে পারে।

বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা তেমন কঠিন কিছু নয়। প্রাথমিকভাবে কিছু লোক লাগবে। কতজন লাগবে তার গৎবাঁধা নিয়ম নেই, যে কজন জোগাড় করা গেছে, তাতেই চলবে। তবে একজন আহ্বায়ক বা কনভেনর তো লাগবেই। যিনি কনভেনর তিনি যদি কিছুটা পরিচিত লোক হন, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।

যেমন ইলিয়াস কাঞ্চন নতুন দল করলেন, সবাই চেনেন; সিনেমার নায়ক ছিলেন, দীর্ঘদিন কাজ করেছেন রাস্তাঘাট পথচারীদের জন্য সুরক্ষিত করতে। এখন দেশকে সুরক্ষিত করতে চান। কনভেনর পরিচিত না হলেও ক্ষতি নেই, পরিচিত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। একটা ব্রশিওরে সুন্দর একটা ছবি এবং তার জনহিতকর কাজকর্ম সব বর্ণনা করে সাংবাদিকদের অনুরোধ করতে হবে একটু ভালো করে ছাপাতে।

দলের নাম

দলের নামটা ঠিক করা একটু ট্রিকি, বেশ হুঁশিয়ারভাবে করতে হবে। কতগুলো নাম আছে যেমন জনতা, জাতীয়, গণ, ইনসাফ—এ রকম নাম মানুষ খুব পছন্দ করে। মুশকিল হলো, এ নামগুলো আগেই অন্য পার্টিরা নিয়ে নিয়েছে। যেমন জনতা নামটা ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘জনতা পার্টি’, ডেসটিনির রফিকুল আমীনের ‘আ-আম জনতা পার্টি’। আরও আছে ‘মাইনরিটি জনতা পার্টি’ অনেকেই ব্যবহার করছে। তবে ‘আসল জনতা পার্টি’, ‘খাঁটি জনতা পার্টি’' এসব নাম এখনো পাওয়া যাচ্ছে। ‘জাতীয় সংস্কার পার্টি’ও ভালো নাম, সংস্কারের জনপ্রিয়তা এখন বেশ তুঙ্গে। বেশি জটিল নাম বা কাব্যিক নাম মানুষ পছন্দ করে না।

বিগত সরকারের আমলে অনেক চেষ্টা হয়েছিল ‘তৃণমূল’ নামটাকে দাঁড় করাতে, সম্ভব হয়নি। পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের রাজনীতিবোধ ও আমাদের রাজনীতিবোধে পার্থক্য আছে।

দল গঠন

লোকজনের কথা বলছিলাম, কিছু লোক তো লাগবেই প্রাথমিক পদপদবিগুলো পূরণ করতে। যেসব পদ খালি থাকবে, বলা হবে কনভেনর তাঁকে দেওয়া ক্ষমতাবলে সেসব শিগগির পূরণ করে নেবেন। এরপর যে জিনিসটা দরকার, নতুন দলের একটা সম্মেলন আয়োজন অথবা সংবাদ সম্মেলন করে নতুন দলের ঘোষণা দেওয়া। কোথায় এ কাজটা হবে, সেটা আগেভাগে ঠিক করা খুব জরুরি।

পাঁচ তারকা হোটেলে ঘোষণা দিলে যত সাংবাদিক আসবেন, দুই তারকা হোটেলে তার দুই ভাগও পাওয়া যাবে না। সুতরাং পাঁচ তারকাতে করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর দল ঘোষণার শুভকাজে কিছু ভালো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন পুরোনো রীতি। নতুন দল ঘোষণা তো একটা বড় মাইলস্টোন; আজকাল ছোট দলগুলোর ইফতার পার্টিও সব পাঁচ তারকা হোটেলে হয়ে থাকে। তা না হলে সাংবাদিক ও হিতৈষীরা আসবেন কেন? দুই তারকা হোটেলের চেয়ে বাড়িতে বসেই ইফতার খাওয়াই ভালো।

সবকিছু ঠিকমতো হলে দল গঠন হয়ে গেল। পরের দিন নেতাদের ছবিসহ নতুন দল গঠনের সংবাদ প্রকাশ পাবে সব সংবাদপত্রে। ও হ্যাঁ, দলের একটা অফিস ঠিকানাও লাগবে। আহ্বায়কের বাণিজ্যিক অফিস বা কারও বাসাবাড়ির ঠিকানা দিয়ে আপাতত দলের অফিস চালানো যেতে পারে।

নিবন্ধন লাগবে

পার্টি তো হয়ে গেল। এরপর কী? মূল উদ্দেশ্য, সামনে ইলেকশন, ইলেকশনে দাঁড়াতে হবে পার্টির নেতাদের, সম্ভব হলে ৩০০ আসনে। রাজনৈতিক দল গঠন করলেই নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। আরও ঝামেলা আছে, নতুন দলকে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলো কিছুটা কঠিন, আবার তেমন কঠিনও নয়, তা নির্ভর করে নেতারা কীভাবে হ্যান্ডেল করবেন। তবে এবার একটা সুবিধা আছে। এনসিপি নামে একটা নতুন দল হয়েছে।

এনসিপিকে মনে করা হয় সরকারের খুব স্নেহভাজন দল। আশা করা যায়, এনসিপির জন্য এবার নিবন্ধনপদ্ধতি কিছুটা শিথিল থাকবে। সেই সুযোগে হয়তো অন্য নতুন দলগুলোও এনসিপির পিছু পিছু নির্বাচন কমিশনে ঢুকে যেতে পারবে। একবার নিবন্ধন পেয়ে গেলে নতুন দলকে আর পায় কে! সামনে অনেক সম্ভাবনা। নিবন্ধন না পেলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দল আছে, নাম আছে, অনেক বড় জোটের নতুন দলকে লাগবে জোট আরও বড় করতে।

নিবন্ধন আছে, নিবন্ধন নেই, সব নতুন দলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো নিয়েই আমরা এখন কথা বলব।

জোটেই সিদ্ধি

নির্বাচন যতই কাছে আসবে, দলগুলো জোট বাঁধবে। নির্বাচনের আগে দেশে দুটি জোট থাকবে। দুটি জোটের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে, কোন জোট কত বড়। সেটা নতুন দলগুলোর জন্য সুযোগ এনে দেবে, যেকোনো একটা জোটে ঢুকে পড়ার। একবার জোটে ঢুকলে জোটের থেকে অন্তত একটা সিটে মনোনয়ন চাওয়া খুবই যুক্তিসংগত। আর মনোনয়ন না পেলেও জোট যদি জিতে যায়, অনেক অনেক সুযোগ সামনে। সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়ার কথাই ধরুন। জোটের মনোনয়ন চেয়েও পেলেন না। জোট নেত্রী নির্বাচনে জিতে তাঁকে শিল্পমন্ত্রী বানিয়ে ফেললেন, মন্ত্রী নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন।

পার্লামেন্টে একটা আসন চাই

সব দলকে যে জোটে ঢুকতে হবে, তা নয়। ধরুন, নতুন দল গঠিত হয়েছে একজন বিত্তবানকে সংসদে নিতে। তাঁর রয়েছে নিজস্ব টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র এবং আরও কত কি! জোটের পিছে ঘুরে কাজ নেই। তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় টাকাপয়সা খরচ করে নির্বাচিত হতে পারেন। নির্বাচনের আগে গরিবদের জন্য চাল, ডাল, শাড়ি, লুঙ্গি; একটু বেশি বৃষ্টি হলে বন্যার ত্রাণ; মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল–কলেজে সাহায্য—এগুলো সব পূর্বপরীক্ষিত, অনেকেই ফল পেয়েছেন নির্বাচিত হয়ে। একটা নতুন দলের জন্য একজন পার্লামেন্ট সদস্যও কম কিছু নয়।

আওয়ামী লীগের বেকারদের নমিনেশন

আওয়ামী লীগের এত এত ঝানু নেতা, গত ১৫ বছরে দল যখন ক্ষমতায় ছিল, তাঁরা অনেক টাকাকড়ি করেছেন। তাঁরা এখন নিজের বাড়িতে ঝিমুচ্ছেন। নির্বাচন কাছে এলে ঝিমুনি কাটিয়ে চাঙা হবেন। কোনো রাজনৈতিক নেতাই নির্বাচনের সময় চুপচাপ থাকতে পারেন না। আওয়ামী লীগের নেতাদেরও মনোনয়ন দরকার হবে।

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন যদিও এখনো আছে, তবে আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচন করা ঝুঁকিপূর্ণ। বুদ্ধিমানের কাজ হবে, অন্য পার্টির নমিনেশন নেওয়া। পুরোনো দলগুলোতে নিজেদের লোকেরাই কামড়াকামড়ি করছেন নমিনেশনের জন্য। এখানেই নতুন দলগুলোর জন্য সুযোগ ও সম্ভাবনা। আওয়ামী লীগের নেতারা অঢেল টাকা খরচ করবেন মনোনয়ন পেতে। এতে লজ্জার কিছু নেই, নিজের দলের নমিনেশনের জন্যও দেদার টাকা দিতে হয় শীর্ষ নেতাদেরকে, তাঁরা বলেন ‘নির্বাচনী খরচ’। অন্য দল থেকে নমিনেশন নিতে একটু বেশি টাকা তো লাগবেই।

দল ভাঙলে আরও লাভ

দল কিছুদিন পুরানো হলেই ভাঙবে, এটাই স্বাভাবিক। নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল, টাকাপয়সা নিয়ে মতানৈক্য, নমিনেশন নিয়ে টানাহেচড়া এইসব অনেক কারণ থাকতে পারে দল ভাঙার পেছনে। তবে দল ভাঙলেই যে দলের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে তা ভাবার কারণ নেই। দল যখন ভাঙে দুই তিন সপ্তাহ দলের কোন্দলের খবর পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ পাবে, জনগণ এইসব খবর মনযোগ দিয়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা গেছে ভাঙার পর দলের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে গেছে। দলের যেসব লোক চলে গেছেন, তাদের পদগুলো পাওয়ার জন্য নতুন লোকেরা ভিড় করবেন এবং অনেকে বড় অঙ্কের চাঁদা দেবেন। তাতেও দলের লাভ। এটা অনেকটা চতুর কোম্পানিগুলোর স্টক স্প্লিটের মতো, একটা স্টক ভেঙে দুইটা করা হয়, তাতে স্টকের দাম আরও বেড়ে যায়।

সব দরজাই খোলা

রাজনৈতিক দলের নেতাদের জন্য সাধারণত সব দরজাই খোলা থাকে। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রীয় ডিনার, সরকার সব দলের বড় নেতাদের দাওয়াত পাঠাবে। পরদিন পত্রিকায় নামধাম ছাপা হবে, পরিচিতির গণ্ডিও বাড়বে। সেক্রেটারিয়েটে কাজ? রাজনৈতিক পরিচয়ে আসা খুবই সহজ। আমলারা চান না রাজনৈতিক নেতাদের খেপাতে, কে কখন মন্ত্রী বনে যাবেন, রিস্ক নিয়ে কাজ নেই! আর হ্যাঁ, রাজউকের প্লট, পুরোনো দলগুলোর নেতারা অলরেডি বেশ কটা পেয়ে গেছেন, এখন সময় নতুন দলের নেতাদের। সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়ের নিমন্ত্রণ, ক্রিকেট খেলা দেখার প্রিমিয়াম আসন—সব জায়গায় রাজনৈতিক নেতাদের কদর আছে।

সব বিবেচনা করে দেখলে বোঝা যাবে, নতুন দল করা এমন কঠিন কিছু নয়। আর এর সুযোগ ও সম্ভাবনাও প্রচুর। চেষ্টা করলে আপনিও একটা নতুন দল গড়তে পারেন। তবে কোনো কাজই ঝুঁকিবিহীন নয়। ঝুঁকিগুলো আপনাকে খোঁজখবর নিয়ে বের করতে হবে। আমি শুধু একটাই বলতে পারি, রাজনীতিতে এক পক্ষের নেতাদের অপর পক্ষ ইটপাটকেল মারবে, সুযোগ পেলে লাঠিপেটা করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এসবের জন্য কাউকে রাজনীতি ছাড়তে দেখিনি।

সালেহ উদ্দিন আহমদ শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য স দলগ ল র দল গঠন মন ত র ল র জন র র জন পর চ ত দল র ন আওয় ম এনস প ইনস ফ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

আরও পাঁচ হাজার নতুন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে

কক্সবাজারে আরও ৫ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এ নিয়ে নতুন রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ১ মে পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এদের ‘নতুন রোহিঙ্গা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর আগে থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করছে আরও ১২ লাখ রোহিঙ্গা। সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমকালকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল শনিবার রাতে মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, নতুনভাবে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। তারা কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে আছে। কেউ আবার বিদ্যালয়সহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থাপনায় আশ্রয় নিয়েছে। 

নতুন রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ চিঠির জবাব দেয়নি বলে জানান মিজানুর রহমান।

 তিনি বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থার অনুরোধ জানিয়ে ইউএনএইচসিআরের চিঠির জবাব আমরা এখনও দিইনি। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে নতুনভাবে ঘর তৈরি করে দেওয়ার মতো অবস্থায় আমরা নেই। আমরা প্রত্যাবাসনে জোর দিচ্ছি।

এদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু বুড়া শিকদাপাড়া এলাকায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির সদস্যরা এ নিপীড়ন চালাচ্ছে। এতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্বদিকে অবস্থিত শিকদারপাড়া থেকে অনেক রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত তাদের স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কেউ কেউ পালিয়ে আসছেন। 

পালিয়ে আসা এমনই একজন আমির হোসেন। টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আমির জানান, তার কিছু স্বজন এখনও শিকদাপাড়ায় বসবাস করছে। শনিবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এদিন সকালে গ্রামে ঢুকে খোলা আকাশের দিকে গুলি চালায় আরাকান আর্মি। এর পর মাইকিং করে ঘর থেকে সবাইকে বের হতে বলে। এক পর্যায়ে একটি খালি মাঠে সবাইকে জড়ো করে। এ সময় আরসাকে কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের নাম প্রকাশ করতে বলা হয়। এর ব্যত্যয় হলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

তিন মাস আগে পালিয়ে আসা আমির আরও জানান, রাখাইনের লডাইং, উচিংজং, নাকমুড়া, কুলি পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনও রোহিঙ্গাদের বসতি রয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মি অনেকের ঘরে গিয়ে আরসার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের দিনভর রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখছে তারা। এতে সেখানকান রোহিঙ্গারা ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চেষ্টা করছে।

আরাকান আর্মি নতুন করে মংডুতে হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মো. জুবায়ের। তিনি বলেন, আরসাকে আশ্রয় দেওয়ার বাহানা করে কাল চার গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে। মূলত সেখানে এখনও থাকা রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এ ধরনের অজুহাতে নির্যাতন চালাচ্ছে আরাকার আর্মি। 

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সৈকতের মুসলিমাবাদ বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে নারী-শিশুসহ ৩৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র‍্যাব। র‍্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ আর এম মোজাফফর হোসেন বলেন, মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পতেঙ্গা ঘাট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে– এমন তথ্য পেয়ে অভিযান চালানো হয়। পরে নারী-শিশুসহ ৩৫ জনকে আটক করা হয়। তাদের চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা ভাসানচর থেকে নাকি মিয়ানমার থেকে এসেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আটক রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রতিজন দুই হাজার টাকার বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে দালালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। তাদের চট্টগ্রামে পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি ছিল। এখান থেকে তারা কোথায় যেতে চেয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। নাফ নদ ও স্থলপথে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। পাশাপাশি মাদক-মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

সীমান্তে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর খোঁজ রাখেন– এমন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক দিনে মিয়ানমার জান্তার বাহিনীর কাছে রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে আরাকান আর্মি। এ নিয়ে সংঘাত চলছে। আর নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ বর্তমানে কক্সবাজারে ২০টি ক্যাম্পে তাদের স্বজনের ঘরে রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ