মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরান থেকে কেউ তেল বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কিনলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এমনকি যারা এমন লেনদেন করবেন, তারা কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসার সুযোগ পাবেন না। বৃহস্পতিবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে পোস্ট করে ট্রাম্প এ বার্তা দেন। 

ট্রাম্প লিখেছেন, ইরান থেকে তেল বা পেট্রোকেমিক্যাল কিনলে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। কোনোভাবেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। খবর এনডিটিভির

মার্কিন ট্রেজারি ও পররাষ্ট্র দপ্তর সম্প্রতি ছয়জন ইরানি নাগরিকের পাশাপাশি ইরান ও অন্যান্য দেশের ১৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর পক্ষে তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য বেচাকেনা এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উপাদান সংগ্রহে জড়িত।

এদিকে ইরান এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘ওয়াশিংটনের অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘায়ি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নতুন এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের আরেকটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বৈধ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে’। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইরানের তেল বিক্রিতে সহযোগিতার অভিযোগ থাকা পাঁচটি বিদেশি কোম্পানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘ইরান যদি তাদের অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়নের জন্য তেল রপ্তানি চালিয়ে যায়, তবে তাদের সহযোগীরাও এর দায় এড়াতে পারবে না’।

এ অবস্থায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান পরমাণু আলোচনার চতুর্থ দফা রোমে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে মার্চে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির কাছে চিঠি পাঠিয়ে আলোচনার আহ্বান জানান এবং আলোচনায় অস্বীকৃতি জানালে সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ