সিলেট শহরতলির বুরজান টি কোম্পানির ইজারা বাতিল করে সরকারিভাবে বাগান চালু ও ২০ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি-রেশন প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন চা-শ্রমিকেরা। আজ রোববার বেলা একটা থেকে চা-শ্রমিকেরা সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের লাক্কাতুরা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন শুরু করেন। পরে প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে বেলা তিনটার দিকে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে বুরজান টি ফ্যাক্টরি এবং ছড়াগাং, কালাগুল ও বুরজান চা-বাগানের হাজারো শ্রমিক অংশ নেন। এ সময় তাঁদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে’, ‘বকেয়া বোনাস পরিশোধ করতে হবে’, ‘বকেয়া রেশন পরিশোধ করতে হবে’, ‘জুলাইয়ের চেতনা শ্রমিক শোষণ হবে না’, ‘বসতবাড়ি নির্মাণ ও মেরামত চালু করতে হবে’সহ নানা স্লোগান লেখা ছিল।

সড়ক অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এ কারণে দুর্ভোগ দেখা দেয়। অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এসে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে দাবি আদায়ে স্থানীয় প্রশাসনের চূড়ান্ত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত শ্রমিকেরা কর্মসূচি থেকে সরবেন না বলে ঘোষণা দেন। অবশ্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ সময় যানজটে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সসহ কয়েকটি জরুরি যান চলাচলের সুযোগ তৈরি করে দেন।

চা-শ্রমিকেরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের বেশ কয়েকটি চা-বাগানের শ্রমিকেরা বেতন, রেশনসহ অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছেন না। এ কারণে কয়েক হাজার চা-শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সমস্যার সমাধান স্থানীয় প্রশাসন করছে না। তাই কঠোর কর্মসূচি দিতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। চূড়ান্ত লিখিত আশ্বাস ছাড়া শ্রমিকেরা সড়ক ছাড়বে না।

আজ বেলা সোয়া তিনটার দিকে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে এখনই বৈঠকে বসব। বুরজান টি কোম্পানির ইজারা বাতিলসহ কিছু দাবির বিষয়টি জেলা প্রশাসক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। অন্য যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নেও প্রশাসন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ পর শ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট

সারা দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

প্রস্তাবে জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চ গঠনের বিষয়টিও প্রস্তাবে উঠে এসেছে। প্রস্তাবে মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে মামলা দায়েরের আগেই অনেক বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হবে এবং আদালতের ওপর মামলার ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনো বাণিজ্যিক মামলা বা আবেদনের মূল্যমান ৫০ লাখ টাকা হলে তা বাণিজ্যিক আদালতে বিচার্য হবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার সময়ে সময়ে এই নির্ধারিত মূল্যমান সীমা পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।

সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বণিকদের সাধারণ লেনদেন থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌপরিবহন, নির্মাণ ও অবকাঠামোগত প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বিমা এবং অংশীদারত্ব চুক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরিষেবা খাত এবং শেয়ারহোল্ডার বা যৌথ উদ্যোগ–সম্পর্কিত বিরোধকে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারভুক্ত করার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এর ফলে আধুনিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ–সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের বিরোধ একটি বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।

বিচারপ্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করার বিষয়ে প্রস্তাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চূড়ান্ত শুনানি অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে সংক্ষিপ্ত বিচারের সুযোগও প্রস্তাবে রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবে আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আর বলা হয়, বাণিজ্যিক আপিল আদালত ছয় মাসের মধ্যে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ