সিলেটে বকেয়া মজুরি ও রেশন পরিশোধের দাবিতে চা-শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ
Published: 4th, May 2025 GMT
সিলেট শহরতলির বুরজান টি কোম্পানির ইজারা বাতিল করে সরকারিভাবে বাগান চালু ও ২০ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি-রেশন প্রদানসহ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন চা-শ্রমিকেরা। আজ রোববার বেলা একটা থেকে চা-শ্রমিকেরা সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের লাক্কাতুরা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন শুরু করেন। পরে প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে বেলা তিনটার দিকে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে বুরজান টি ফ্যাক্টরি এবং ছড়াগাং, কালাগুল ও বুরজান চা-বাগানের হাজারো শ্রমিক অংশ নেন। এ সময় তাঁদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে’, ‘বকেয়া বোনাস পরিশোধ করতে হবে’, ‘বকেয়া রেশন পরিশোধ করতে হবে’, ‘জুলাইয়ের চেতনা শ্রমিক শোষণ হবে না’, ‘বসতবাড়ি নির্মাণ ও মেরামত চালু করতে হবে’সহ নানা স্লোগান লেখা ছিল।
সড়ক অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এ কারণে দুর্ভোগ দেখা দেয়। অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এসে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে দাবি আদায়ে স্থানীয় প্রশাসনের চূড়ান্ত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত শ্রমিকেরা কর্মসূচি থেকে সরবেন না বলে ঘোষণা দেন। অবশ্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ সময় যানজটে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সসহ কয়েকটি জরুরি যান চলাচলের সুযোগ তৈরি করে দেন।
চা-শ্রমিকেরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের বেশ কয়েকটি চা-বাগানের শ্রমিকেরা বেতন, রেশনসহ অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছেন না। এ কারণে কয়েক হাজার চা-শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সমস্যার সমাধান স্থানীয় প্রশাসন করছে না। তাই কঠোর কর্মসূচি দিতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। চূড়ান্ত লিখিত আশ্বাস ছাড়া শ্রমিকেরা সড়ক ছাড়বে না।
আজ বেলা সোয়া তিনটার দিকে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে এখনই বৈঠকে বসব। বুরজান টি কোম্পানির ইজারা বাতিলসহ কিছু দাবির বিষয়টি জেলা প্রশাসক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। অন্য যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নেও প্রশাসন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই ছেলেকে চুরির অপবাদ, মা-বাবাকে নাকে খত
ফেনীর পাঁচগাছিয়ায় দুই ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অপবাদে সালিশে তাদের মা-বাবাকে প্রকাশ্যে নাকে খত দিতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বিএনপির এক নেতার তাদের নাকে খত দিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম দেলোয়ার হোসেন দেলু। তিনি পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক।
এ ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী মা-বাবা ও তাদের স্বজনরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ ঘটনার প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকেই অভিযোগ ওঠা বিএনপি নেতার শাস্তি দাবি করেন।
এ দিকে পুলিশ বলছে, ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে তারা খোঁজখবর নিচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের খালুর দোকান এলাকার। ওই এলাকার দুই ছেলের বিরুদ্ধে মুরগি ও কবুতর চুরির অপবাদ দিয়ে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে আশপাশের এলাকার মানুষকে ঘটনাস্থলে জড়ো করেন মুরগি ও কবুতরের মালিক জাহাঙ্গীর। সালিশ বৈঠকে বিএনপি নেতা দেলু ওই ছেলের মাকে নাকে খত দেওয়ার নির্দেশ দেন। যেটি কয়েকজনকে লাঠি হাতে বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় ভিডিওতে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের তফাজ্জল মেম্বারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে হাঁস, মুরগি চুরির ঘটনা ঘটে। ওই এলাকায় ভাড়াটিয়া একটি পরিবারের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আসে। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে মাথিয়ারা এলাকার খালুর দোকানের সামনে সালিশ বসে। সালিশে অভিযোগ ওঠা দুই ভাই উপস্থিত না হননি। তবে তাদের মা-বাবা উপস্থিত হন। সালিশে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন উপস্থিত মা ও বাবা তাদের পক্ষে শাস্তি ভোগ করতে রাজি হন। তখন সালিশদাররা মা-বাবাকে মাটিতে দাগ টেনে দিয়ে মাথা নিচু করে ওই দাগ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য বলেন। তারা তাতে রাজি হন।
ওই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে স্বীকার করে বিএনপি নেতা বলেন, সামাজিক কিছু পরিবেশ-পরিস্থিতিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো কোনো সময় এ কাজগুলো করতে হয়।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, বিষয়টি তারা শুনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।