১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ভূমিমাইন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ চুক্তি হলেও বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ক্ষেত্রে ভয়ংকর এই অস্ত্রের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সিরিয়া, ইউক্রেন, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিমাইন বিস্ফোরণে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ ভূমিমাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ। কিন্তু প্রতিবেশী মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের কারণে সীমান্তের নাগরিকেরা ভূমিমাইন বিস্ফোরণে যেভাবে হতাহত হচ্ছেন, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেননা, বিস্ফোরণে কেউ চিরতরে পঙ্গু হচ্ছেন আবার কেউ চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। আবার পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিহত হওয়ায় কোনো কোনো পরিবার সীমাহীন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছেন। ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের সুরক্ষায় সরকার, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের জোরালো ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মিয়ানমার সীমান্তের আমাদের নাগরিকেরা কতটা অরক্ষিত। শুধু এ বছরের চার মাসে ভূমিমাইন বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। বেশির ভাগই হাত-পা হারানোয় পঙ্গু হয়ে গেছেন। জীবিকা হারিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।

বান্দরবান ও কক্সবাজারের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এটা সত্যি যে বিশাল এই সীমানার অনেক জায়গাতেই কাঁটাতারের বেড়া নেই। আবার দুর্গম হওয়ায় বিজিবির পক্ষে নজরদারি করাও সম্ভব নয়। অনেকে চোরাচালান করতে মিয়ানমারে যান। এর বাইরেও গাছ কাটতে, মাছ ধরতে, গরু চরাতে কিংবা কৃষিকাজ করতে অনেকে সীমানা অতিক্রম করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। এই সাধারণ মানুষেরাই ভূমিমাইন বিস্ফোরণের মুখে পড়ছেন।

আগে আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভূমিমাইন পুঁতত। সম্প্রতি আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভূমিমাইন ব্যবহার করছে। সীমান্তে এভাবে মাইন পুঁতে রাখা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কেননা, কোথাও মাইন পোঁতা থাকলে স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়ার সুযোগ আছে।

কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের। সে ক্ষেত্রে সীমান্তের অরক্ষিত জায়গাগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা জরুরি। শূন্যরেখা অতিক্রম করে আমাদের নাগরিকেরা যেন মিয়ানমারে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে বিজিবির আরও সতর্কতা প্রয়োজন। মিয়ানমারে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সচেতন করছে। আমরা মনে করি, স্থানীয় কমিউনিটিকে যুক্ত করে সচেতনতা অভিযান চালালে সেটা আরও বেশি কার্যকর হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রই কীভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির পথ তৈরি করে দিয়েছিল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দেন, তখন তিনি এক জটিল সমস্যায় পড়েন। এই সমস্যার শুরু হয়েছিল অনেক বছর আগে। তখন যুক্তরাষ্ট্রই ইরানকে পারমাণবিক প্রযুক্তিতে প্রথম সহায়তা দিয়েছিল।

তেহরানের উত্তরে একটি ছোট পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে। এটি শান্তিপূর্ণ গবেষণার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। গত ১২ দিনের সংঘাতে ইসরায়েল এই স্থাপনায় কোনো হামলা চালায়নি।

এই পারমাণবিক চুল্লির গুরুত্ব প্রতীকী। ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র এটি ইরানে পাঠিয়েছিল। এটি ‘অ্যাটম ফর পিস’ কর্মসূচির অংশ ছিল।

এই কর্মসূচি চালু করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার। উদ্দেশ্য ছিল মিত্রদেশগুলোকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দেওয়া। এতে তাদের অর্থনীতি উন্নত হবে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হবে।

এই চুল্লি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহার হয় না। কারণ, এটি খুব দুর্বল জ্বালানিতে চলে। বোমা তৈরির মতো শক্তি এতে নেই।

বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, পাকিস্তানসহ আরও কিছু দেশ ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির জন্য দায়ী। তারা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের পথে সহায়তা দিয়েছে।

তেহরানের এই চুল্লি একসময়ের স্মৃতিচিহ্ন। তখন ইরান ছিল ধর্মনিরপেক্ষ ও পশ্চিমাপন্থী রাজতন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্র তখন ইরানকে প্রযুক্তি শিখিয়েছিল।

পরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি গর্বের প্রতীক হয়ে ওঠে। শুরুতে এটি উন্নয়নের প্রতীক ছিল। পরে এটি হয়ে ওঠে সম্ভাব্য সামরিক শক্তির উৎস।

পশ্চিমারা ইরানের এই কর্মসূচিকে ঘিরে শঙ্কিত হয়ে ওঠে। তখনকার বিশ্ব আজকের চেয়ে আলাদা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বুঝতেই পারেনি, তার দেওয়া প্রযুক্তি একদিন তার বিপদ ডেকে আনবে।

যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় থাকা রবার্ট আইনহোর্ন বলেন, ‘ইরানের শুরুটা আমরাই করেছিলাম।’

আইনহোর্ন বলেন, ‘তখন প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়া নিয়ে আমরা বেশি ভাবতাম না। আমরা অনেক দেশকে এ প্রযুক্তি দিয়েছিলাম।’

গত বছরের অক্টোবরে স্যাটেলাইট চিত্রে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রই কীভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির পথ তৈরি করে দিয়েছিল