বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরীর সাবেক সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদ এবং এ ঘটনার বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত। কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরের মুরাদপুর, অক্সিজেন মোড়, সল্টগোলা ক্রসিংসহ বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেছেন।

নগরের মুরাদপুর এলাকায় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সড়ক অবরোধ শুরু হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আতের নেতা-কর্মীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিন হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। এতে সিডিএ অ্যাভিনিউ এবং এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে সকাল পৌনে ১০টার দিকে মুরাদপুর এলাকায় দেখা যায়, অবরোধের কারণে একদিকে নগরের মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট এবং অন্যদিকে মুরাদপুর থেকে দুই নম্বর গেট পর্যন্ত এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েন অফিসগামী যাত্রী ও পথচারীরা।

যানজটে আটকে পড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে ছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক প্রকাশ দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। তবে সড়ক অবরোধের কারণে মনে হয় না ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে পারব। এখন যে বাসায় ফিরে যাব, সেই উপায়ও নেই। গাড়ি একই স্থানে আটকে আছে।’

অবরোধের কারণে সড়কে আটকে পড়ে বিভিন্ন যানবাহন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

৫ মাস ধরে জিপিওর এফডির অনেক গ্রাহক আসলসহ মুনাফা তুলতে পারছেন না

ঢাকা জিপিওর (জেনারেল পোস্ট অফিস) ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের মেয়াদি হিসাবে (এফডি) ২০২২ সালের জুলাইয়ে ২ লাখ টাকা আমানত রাখেন এক ব্যক্তি।

গত ২৪ জুলাই তিনি আসলসহ তিন বছরের মুনাফা তোলার জন্য তাঁর পাসবই ঢাকা জিপিওর সঞ্চয় ব্যাংকের উত্তোলন কাউন্টারে জমা দেন।

কিন্তু টাকা না দিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। কারণ হিসেবে তাঁকে বলা হয়, সিস্টেমের সফটওয়্যারে তাঁর মুনাফা ১২ হাজার ৬০ টাকা কম দেখাচ্ছে।

শুধু এই ব্যক্তিই নন, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাব (এফডি) যাঁরা করেছেন, এমন অনেকে একই ধরনের সমস্যার কারণে আসলসহ মুনাফার টাকা পাচ্ছেন না। শুধু ঢাকা জিপিও নয়, এর হিসাবাধীন বিভিন্ন সাব–পোস্ট অফিস থেকেও একই সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে।

ডাক বিভাগের অধীন ডাক অধিদপ্তর বলছে, সঞ্চয় ব্যাংকের মেয়াদি হিসাব (এফডি), সাধারণ হিসাব (এসবি) দেখা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ‘স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনাবেল সার্ভিস ডেলিভারি (এসপিএফএমএস) ’ কর্মসূচির আওতায় একটি সিস্টেমের সফটওয়্যারের মাধ্যমে। আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হিসাব করা হতো গ্রাহক কত মুনাফা পাবেন। ২০২১ সালে এই পদ্ধতি অনলাইন হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে এসপিএফএমএস কর্মসূচির আওতায় সিস্টেমের সফটওয়্যার গ্রাহকের মুনাফার পরিমাণ কখনো কম, কখনো বেশি দেখায়। এতে গ্রাহককে আসলসহ মুনাফা দিতে পারছে না সঞ্চয় ব্যাংক। ৫ মাস ধরে এই সমস্যা চলছে।

এক ব্যক্তি গত বছরের মে মাসে ঢাকা জিপিওর সঞ্চয় ব্যাংকের মেয়াদি হিসাবে (এফডি) ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা রাখেন। চলতি বছরের মে মাসে আসলসহ এক বছরের মুনাফা তোলার জন্য তিনি ঢাকা জিপিওর সঞ্চয় ব্যাংকের উত্তোলন কাউন্টারে পাসবই জমা দেন। তাঁর ৫৩ হাজার ৫৫০ টাকা মুনাফা পাওয়ার কথা। কিন্তু সিস্টেমে দেখায় ৪৪ হাজার ১৫২ টাকা। অর্থাৎ ৯ হাজারের বেশি টাকা কম দেখায়।

আরেক নারী ২০২৩ সালের মে মাসে ঢাকা জিপিওর হিসাবাধীন ক্যান্টনমেন্ট সাব-পোস্ট অফিসে সঞ্চয় ব্যাংকের মেয়াদি হিসাবে (এফডি) ৫ লাখ টাকা রাখেন। চলতি বছরের মে মাসে তিনি তাঁর মুনাফাসহ আসল তোলার জন্য পাস বই জমা দেন। কিন্তু সিস্টেমে মুনাফা ২৭ হাজার ৯৫০ টাকা বেশি দেখায়।

চলতি বছরের জুলাইয়ে ঢাকা জিপিওতে মেয়াদি হিসাবের (এফডি) আসলসহ তিন বছরের মুনাফা তুলতে যান এক ব্যক্তি। তাঁর ক্ষেত্রে প্রকৃত মুনাফার চেয়ে ৪৭ হাজার ৩৭০ টাকা কম দেখায় সিস্টেমে। ফলে এই ব্যক্তিদের কেউ আসল ও মুনাফা তুলতে পারেননি।

ডাক বিভাগ ও অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সিস্টেমের এই সমস্যার কথা তুলে ধরে সমাধানের অনুরোধ জানিয়ে এসপিএফএমএস কর্মসূচি বরাবর গত তিন মাসে (মে, জুন ও জুলাই) তিনটি চিঠি দেওয়া হয়।

এর মধ্যে গত মে ও জুলাই মাসে দুটি চিঠি পাঠানো ঢাকা জিপিওর সিনিয়র পোস্টমাস্টারের কার্যালয় থেকে।

মে মাসের চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা জিপিও ও এর হিসাবাধীন সাব-পোস্ট অফিসে সঞ্চয় ব্যাংকে আমানতের মুনাফাসহ আসল টাকা পরিশোধকালে সফটওয়্যারগত বিভিন্ন ত্রুটি দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো হিসাবে মুনাফার পরিমাণ কম দেখাচ্ছে। আবার কোনো কোনো হিসাবে মুনাফার পরিমাণ বেশি দেখাচ্ছে। এতে গ্রাহকদের আসলসহ মুনাফা দিতে জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়ছে। কখনো কখনো গ্রাহকদের সঙ্গে দাপ্তরিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে এই বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। গ্রাহক অসন্তোষ বাড়ছে।

এই চিঠিটিতে এ ধরনের কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, এ অবস্থায় আমানতকারীদের আসলসহ মুনাফার টাকা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।

আমানতকারীদের যথাসময়ে যথাযথভাবে টাকা দেওয়ার জন্য সিস্টেমে প্রকৃত মুনাফা মূল্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিষয়টির জরুরি সমাধান চাওয়া হয় চিঠিতে।

জুলাই মাসে দেওয়া চিঠিতে ঢাকা জিপিওতে একই ধরনের সমস্যার কথা জানানো হয়। চিঠিতে একাধিক ঘটনার উদাহরণ উল্লেখ করে জরুরি সমাধানের অনুরোধ জানানো হয়।

আরও পড়ুনশর্ত সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে আমৃত্যু পুনঃবিনিয়োগ সুবিধা১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আর গত জুন মাসের চিঠিটি পাঠানো হয় ডাক অধিদপ্তর থেকে। চিঠিতে বলা হয়, বেশ কিছু দিন ধরে সঞ্চয় ব্যাংকের অনলাইন সিস্টেমে সাধারণ ও মেয়াদি হিসাবের মুনাফা ভুল প্রদর্শন করছে, যা ডাক বিভাগের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। সিস্টেমে ভুল মূল্যায়ন দেখে ডাকঘরগুলো গ্রাহককে মুনাফা দেওয়া বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এতে গ্রাহকেরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। বিষয়টির সুরাহার জন্য দপ্তরে (এসপিএফএমএস) মৌখিক ও লিখিতভাবে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই জটিলতা নিরসনে দপ্তর থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা তাঁদের সঞ্চিত আমানত পাওয়ার জন্য ডাকঘরগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। সিস্টেমের ভুলে গ্রাহকদের যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ না করে বঞ্চিত রাখার দায়ভার ডাক বিভাগ নিতে রাজি নয়।

আরও পড়ুনসঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়ছে জানুয়ারি থেকে০৯ জানুয়ারি ২০২৫

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোস্টমাস্টার জেনারেল (কেন্দ্রীয় সার্কেল) মো. আলতাফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এসপিএফএমএস সঞ্চয়পত্র, মেয়াদি হিসাব (এফডি) ও সাধারণ হিসাব (এসবি) নিয়ে কাজ করে। সিস্টেম ঠিকমতো হিসাব না দেওয়ায় খুব সমস্যা হচ্ছে। গত মার্চ মাস থেকে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক গ্রাহকই এফডির টাকা তুলতে পারছেন না। তাঁরা ডাক বিভাগকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু সমস্যা ডাক বিভাগের নয়। এটা সিস্টেমের কোনো দুর্বলতা।

এসপিএফএমএসের জাতীয় কর্মসূচির পরিচালক অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) বিলকিস জাহান রিমির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিস্টেমে কোনো সমস্যা নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কারও ক্ষেত্রে সমস্যা হলে তা তাঁরা ঠিক করে দেবেন। সমস্যা সমাধানে তাঁরা কাজ করছেন। খুব দ্রুতই সমাধান হবে বলে আশা করছেন।

আরও পড়ুনমাসে মাসে মুনাফা তোলা যায় ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক থেকে২৭ জুলাই ২০২১আরও পড়ুনডাকঘর সঞ্চয়ে ২০ লাখ টাকার বেশি রাখা যাবে না২৮ মে ২০২০

সম্পর্কিত নিবন্ধ