মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ময়নাতদন্ত-সংশ্লিষ্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আজ দুজনসহ এ পর্যন্ত ২৯ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আজ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার আবেদন করা হয়েছে। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেছেন। কাল আসামি পরীক্ষার জন্য (৩৪২ ধারা) দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকালে বোনের স্বামীর কক্ষে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আসামির জবানবন্দির সঙ্গে বাদীর এজাহারে কিছু অমিল আছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছিল ৫ তারিখ (মার্চ) দিবাগত রাতে এবং শিশুটির বোনের স্বামী ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার পর তাঁর বাবা শিশুটিকে বাইরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছে ৬ মার্চ সকালে শিশুটির বোনের কক্ষে। এ সময় শিশুটির বোন ওই বাড়ির মধ্যে ছিলেন।

শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক ষ য গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারবাজারে এক যুগে সর্বোচ্চ পতন

ব্যাপক দর পতন হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। গতকাল বুধবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৯৩ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৮১টিই দর হারিয়েছে। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ হারিয়ে ৪৮০২ পয়েন্টে নেমেছে। হার বিবেচনায় 
গতকালের পতন ২০১৩ সালের ২৩ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতেও দর পতন হয়েছে।

দর পতনের পেছনে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। গতকাল পাকিস্তানের শেয়ারবাজারেও বড় দর পতন হয়েছে। ভারতের শেয়ারবাজারে শুরুর দিকে পতন হলেও শেষ পর্যন্ত সূচক সামান্য বেড়েছে। বিশ্বের অন্য কোনো শেয়ারবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। নানা কারণে আস্থাহীনতায় ক্রমাগত দর পতনের ধারায় ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের বাজার। 

দেশের শেয়ারবাজারে খারাপ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামী রোববার এ বৈঠক হবে। গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) এ সভা আহ্বান করে।

গতকাল দিনের লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঢাকার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুই হয় দর পতনে। প্রথম ১৫ মিনিটেই প্রায় সব শেয়ার দর হারায়। মাত্র ৫ মিনিটে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট হারায়। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় সবার মধ্যে। এর ১৩ মিনিট পর আরও প্রায় ৪৪ পয়েন্টসহ ৯৪ পয়েন্ট হারায়। এরপর সামান্য ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত প্রায় সব শেয়ারের দর পতনে ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৮০২ পয়েন্টে নামে। সূচকের অবস্থান ২০২০ সালের ২৫ আগস্টের পর সর্বনিম্ন।

ব্রোকারেজ হাউস প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, গতকালের লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বাইরে অন্য কোনো নেতিবাচক খবর ছিল না। তাই সবাই এটিকে দর পতনের কারণ বলে মনে করছেন। এর বাইরে অন্য কোনো ব্যাখ্যাও নেই।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপক প্রভাব বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে পড়েছিল। তবে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থার প্রভাব ওই যুদ্ধের মতো নয়। তাঁর মতে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা রয়েছে, যা বড় আকারে প্রতিফলিত হয়েছে।

অল্প বিক্রিতেই বড় পতন

গতকালের লেনদেনের শুরুর প্রথম ১৫ মিনিটে প্রায় ৯০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। এর মধ্যে বিচ হ্যাচারি নামে একটি স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের পরিমাণই ছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকার। এ শেয়ারের দর পতনে সূচকে তেমন কোনো প্রভাবই ছিল না। সূচকে বড় প্রভাব ছিল ইসলামী ব্যাংক, ওয়ালটন, বিএটি 
বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, গ্রামীণফোনসহ বৃহৎ বাজার মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দর পতন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ