ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় আকাশপথে বিশৃঙ্খলা, ফ্লাইট বাতিল ও রুট পরিবর্তন করতে হচ্ছে
Published: 7th, May 2025 GMT
তাইওয়ানের চায়না এয়ারলাইনস, কোরিয়ান এয়ারসহ বেশ কয়েকটি এশীয় বিমান সংস্থা আজ বুধবার জানিয়েছে, তারা ইউরোপগামী ও ইউরোপফেরত ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন বা বাতিল করছে। পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে অনেক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত মাসে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
ভারতের হামলার পর ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলোতে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও কুয়েতের আকাশপথে বিভিন্ন বিমান সংস্থার ফ্লাইটের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এতে আকাশপথে চাপ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারতের হামলার সময় পাকিস্তানের আকাশসীমায় ৫৭টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করছিল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের এ পদক্ষেপ উপসাগরীয় দেশগুলোর বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য ‘গভীর ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে’ এবং এতে ‘নিরীহ মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে’।
পাকিস্তানের এমন প্রতিক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
গত কয়েক দিনে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিমান সংস্থার জন্য নিজ নিজ আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় লুফথানসার মতো আন্তর্জাতিক বিমান সেবা সংস্থা পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে।
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচলেও বিঘ্ন ঘটেছে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিমান সংস্থা ইন্ডিগো জানিয়েছে, আজ সকাল পর্যন্ত তারা ১৬৫টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন ঘটেছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। ভারতের একাধিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইসজেট ও আকাসা এয়ারের ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে।
উড়োজাহাজ চলাচল নজরদারি সেবা ফ্লাইটরাডার২৪ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং পাকিস্তানের আকাশসীমায় কয়েকটি ফ্লাইট ছাড়া বেসামরিক উড়োজাহাজ প্রায় নেই বললেই চলে।
সময়সূচির পরিবর্তন
বিমান সংস্থাগুলোর ফ্লাইটের সময়সূচির রদবদল মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের উড়োজাহাজ চলাচলকে আরও জটিল করে তুলবে।
ডাচ বিমান সংস্থা কেএলএমের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখবে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস জানিয়েছে, তারা ৬ মে থেকে পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার বন্ধ রেখেছে।
কোরিয়ান এয়ার জানিয়েছে, তারা আজ থেকে সিউল–ইনচন-দুবাই রুটের ফ্লাইট ঘুরিয়ে দিচ্ছে। পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে তারা মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর দিয়ে দক্ষিণের একটি বিকল্প পথ ব্যবহার করছে।
থাই এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, আজ ভোর থেকে ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে তাদের ফ্লাইট নতুন রুটে চলাচল করছে। চায়না এয়ারলাইনস জানিয়েছে, লন্ডন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, রোমসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে আসা-যাওয়া করা ফ্লাইটগুলো ব্যাহত হয়েছে।
ভারত থেকে ইউরোপগামী ফ্লাইটগুলো দীর্ঘতর রুট ব্যবহার করছে। ফ্লাইটরাডার২৪ অনুযায়ী, দিল্লি থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টগামী লুফথানসা ফ্লাইট এলএইচ৭৬১ আগের তুলনায় প্রায় আধা ঘণ্টা বেশি সময় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে।
যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে এশিয়া প্যাসিফিক এয়ারলাইনস অ্যাসোসিয়েশন উড়োজাহাজ চলাচলের ওপর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
শুধু খরচ ও কার্যক্রমের সমস্যা নয়, নিরাপত্তা নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলেছে, সংঘাতপূর্ণ আকাশসীমায় ফ্লাইট পরিচালনার সময় ‘জিপিএস স্পুফিং’ বেসামরিক বিমান চলাচল শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল ইট র র ফ ল ইট ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষ, দুই ঘণ্টা ব্যবধানে নিহত ২
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– আব্দুল কুদ্দুস (৭০) ও মো. মেহেদী (৩৫)।
আব্দুল কুদ্দুস মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাওসার আশার অনুসারী। আর মেহেদী মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারের সমর্থক ছিলেন।
নিহতের স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার রেললাইন অটোস্ট্যান্ডে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েক দিন ধরে আশার অনুসারীদের সঙ্গে হান্নান সরকারের লোকজনের দ্বন্দ্ব চলছে। শুক্রবার দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হন। এরই জেরে শনিবার রাতে বন্দরের হাজারীবাগের শাহি মসজিদ এলাকায় আশার সমর্থক জাফর-রনি গ্রুপের ওপর হামলা হয় হান্নান সরকারের অনুসারী মেহেদী-বাবুর নেতৃত্বে। এ দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন আব্দুল কুদ্দুস। তাঁকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি বন্দরের হাফেজিবাগ এলাকায়।
এ ঘটনার জেরে আশার লোকজন হান্নান সরকারের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়। পরে সেনাসদস্যরা এসে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেন।
এদিকে, রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন্দরের সিরাজুদ্দৌলা ক্লাব মাঠে আব্দুল কুদ্দুস হত্যায় অভিযুক্ত মেহেদী ও তার লোকজনকে পেয়ে ধাওয়া দেয় রনি-জাফর গ্রুপের লোকজন। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছুরিকাঘাতে আহত হন মেহেদী। স্থানীয়রা তাঁকে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আব্দুল কুদ্দুস নিহতের পর হান্নান সরকার বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। একটি পক্ষ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে জড়িয়ে বদনাম করার চেষ্টা করছে। তারা আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।’
এ ব্যাপারে আবুল কাওসার আশা বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাবু, মেহেদী, রনি, জাফর সবাই একসময় একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে সম্প্রতি অটোস্ট্যান্ড নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এটিকে একটি পক্ষ আশা ও হান্নানের বিরোধ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
অবশ্য মেহেদী নিহতের পরে একাধিকবার কল দিয়েও হান্নান সরকার ও আবুল কাওসার আশার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। সেখানে পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।