নোয়াখালীর সেনবাগে গাছের ডাল কাটা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আবুল কাশেম নামের (৬৫) এক ব্যক্তি প্রতিপক্ষের পিটুনিতে নিহত হয়েছেন। তাঁর প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার ভোরে উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেশারপাড় দক্ষিণপাড়া ক্লাবঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ফজরের নামাজ শেষে হাঁটার সময় তাঁর ওপর হামলা হয় বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। 

নিহত কাশেম মৃত আবুল হাশেমের ছেলে। সূত্র জানায়, তাঁর তিন মেয়েই স্বামীর বাড়িতে থাকেন। প্রতিবেশী হানিফ  মঙ্গলবার বিকেলে জানায়, কাশেমের বাড়ির গাছের ডাল বাড়ির সীমানার বাইরে এসেছে। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। স্বজনের ভাষ্য, বুধবার ফজরের নামাজের পর কাশেম হাঁটতে বের হন। আগের দিনের ঘটনার জের ধরে হানিফের নেতৃত্বে তাঁর ভাই মিঠু, হোরণ, টিটুসহ কয়েকজন তাঁকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় হানিফের জামাতা ওয়াসিমকে আটক করেছে পুলিশ। সেনবাগ থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

চাটখিলে প্রবাসী বৃদ্ধাকে হত্যা

একই দিন ভোরে জেলার চাটখিলের খিলপাড়া গ্রামে হত্যার শিকার হয়েছেন তাহেরা বেগম (৫৫) নামের এক নারী। তিনি ওই এলাকার মুন্সি বাড়ির মৃত হাজি আব্দুল মতিনের স্ত্রী। ছোট ছেলের সঙ্গে তিনি পর্তুগালে থাকতেন। সে দেশের গ্রিন কার্ডও রয়েছে। 

তাহেরা বেগমের ছেলে ব্যবসায়ী তারেক বিন ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে তাঁর মা পর্তুগাল থেকে বেড়াতে আসেন। বুধবার ভোর ৪টার দিকে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে উঠে দেখেন, ঘরের ভেতর অচেনা কয়েকজন লোক। তিনি চিৎকার করলে তারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর ভাষ্য, রান্নাঘরের ভেন্টিলেটর ভেঙে ভেতরে ঢুকেছিল চোরেরা। মা চিনে ফেলায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

চাটখিল থানার ওসি মোহাম্মদ ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা

সাভারের আশুলিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এক ইউপি সদস্যের ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে আশুলিয়া ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম দেউন এলাকার মাছের খামারের পাশ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। 

নিহত রুবেল মণ্ডল আশুলিয়ার পাড়াগ্রাম দক্ষিণপাড়া এলাকার নায়েব আলী মণ্ডলের ছেলে এবং আশুলিয়া ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুহুল আমিন মণ্ডলের ছোট ভাই। রুহুল আমিন মণ্ডল আশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকাছাড়া তিনি। তখন থেকে ভাইয়ের মাছের খামার, ঝুট ব্যবসা ও বালুর ব্যাবসা দেখাশোনা করতেন রুবেল মণ্ডল।

পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেউন এলাকার একটি মাছের খামারের পাশে নির্জন স্থানে রুবেলের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের গভীর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। 

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, লাশ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ।

পাওনা চাওয়ায় হত্যা

দেবিদ্বারে পাওনা টাকা চাওয়ায় মো.

শফিউল্লাহ নামে এক ভ্যানচালককে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর বন্ধু গ্যারেজ মালিক রাসেল মিয়ার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে ভানী ইউনিয়নের ত্রিবিদ্যা গ্রামে রাসেলের অটোরিকশা গ্যারেজে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত শফিউল্লাহ ভানী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। দেবিদ্বার থানার ওসি শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রাসেল ও তার বাবা কেরামত আলীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। আসামি রাসেলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ট য় হত য এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ