এক্সপ্রেসওয়েতে অ্যাম্বুলেন্সকে বাসের ধাক্কা, একই পরিবারের চারজন নিহত
Published: 8th, May 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের নিমতলায় দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে একজন নারী নিহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সিরাজদীখান উপজেলার নিমতলা তালুকদার পাম্পের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসারা হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো.
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঢাকাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্সের চাকা পাংচার হয়ে যায়। নিমতলা তালুকদার পাম্পের সামনে চাকা সচল করার জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি থামানো ছিল। পেছন থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন পরিবহন যাত্রীবাহী বাসটি অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে ধাক্কা দেয়।
এতে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ৩৫ বছর বয়সী এক নারী ঘটনাস্থলে মারা যান। এ সময় আহত হন দুই নারী ও তিন পুরুষ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে মারা যান আরও তিনজন। তারা হলেন সামাদ ফকির (৬০) ও তাঁর ছেলে হাফেজ বিল্লাল (৪০) ও মেয়ে আফসানা (২০)।
হাসরা হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী জানান, নিহত নারীর লাশ উদ্ধার করে হাসারা হাইওয়ে থানায় রাখা হয়েছে। আহত পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সটির তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ধারণা করছি, অ্যাম্বুলেন্সটির যাত্রীরা পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাসটি ওই সময় অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসটি থানায় জব্দ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।
এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।
বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।
বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।