কম চালের দাম, চড়া সবজি মুরগি পেঁয়াজ ডিম
Published: 9th, May 2025 GMT
বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফলে নতুন চাল বাজারে এসে গেছে। এতে দাম কমেছে মিনিকেট চালের। গত দুই সপ্তাহে ধরনভেদে এই চালের দাম কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ১২ টাকা। তবে বাজারে কিছু সবজি, ব্রয়লার মুরগি ও পেঁয়াজের দাম চড়া রয়েছে। কিছুটা বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও হাতিরপুল বাজার, পল্লবীর মুসলিম বাজার, বউবাজার, মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা–বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, রশিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের নতুন মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এই চালের কেজি ৮৮ থেকে ৯০ টাকার আশপাশে ছিল। সাগর মিনিকেটের দামও ৭৮ থেকে কমে ৭৫ টাকা হয়েছে। তবে অন্যান্য চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে নতুন মিনিকেট চাল আসায় দাম কমেছে। মিনিকেট হিসেবে পরিচিত ছাঁটাই করা চাল মূলত; বোরো ধান থেকে তৈরি করা হয়। এখন এই ধানের মৌসুম। ফলে দাম কমেছে।
এদিকে রোজার ঈদের পর বাড়তে শুরু করে সবজির দাম। কমদামি সবজি হিসেবে পরিচিত প্রতিকেজি পেঁপে এখন ৮০ টাকা। করলা, বরবটি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, পটল, লতি, ঢ্যাঁড়স প্রভৃতি সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু, কাঁচকলা, মিষ্টিকুমড়ার মতো কয়েকটি ছাড়া ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি এখন কেনা যায় না। ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি। এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ও ধরনভেদে সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কম ছিল। এ ছাড়া ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিমের দাম ডজনে ৫ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা হয়েছে।
বাজারে পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লায় এ দাম আরেকটু বেশি। মাসখানেক আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
এ ছাড়া মাছ ও মাংসের দাম অনেকটা আগের মতোই রয়েছে। গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাছের মধ্যে প্রতি কেজি চাষের কই ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি ডজন ডিম ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজারে ডিম ব্যবসায়ী সবুজ আহমেদ বলেন, দাম একটু বেশি, আমরা এখন বেশি দামে ডিম কিনছি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার মিলবে দু-এক দিনের মধ্যে
বাংলাদেশের জন্য চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদনে করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় এ অনুমোদন করা হয়। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে একসঙ্গে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার বাংলাদেশ পাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা দিতে ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ হলো আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। ১৩০ কোটি পাওয়া গেলে ১০৯ কোটি ডলার বাকি থাকবে। তবে এ কর্মসূচির সঙ্গে নতুন করে প্রায় ৭৬ কোটি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পরিপালন নিয়ে, বিশেষত টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আসে। তবে সমঝোতা না হওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এর পর ওয়াশিংটনে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়।
সবশেষ গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং পর্ষদ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।