সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে কার কী ধরনের গাফিলতি ও অবহেলা ছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। তোলপাড় করা ঘটনাটি পর্যালোচনা করছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। আজ শনিবার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হবে। গতকাল শুক্রবার রাতে কমিটির একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কী প্রক্রিয়ায় আবদুল হামিদ বিদেশ গেলেন, তা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার রাতে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মতিউর রহমান শেখকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ সমকালকে বলেন, ‘তদন্তের এরিয়া কী হবে, তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। কমিটি গঠনের পরদিন শুক্রবার। আমরা কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছি। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হবে। কার কী দায়-দায়িত্ব ছিল, তা নিরূপণ করব।’

বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বিমানবন্দরে যান রাত ১১টার দিকে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। দেশ ছাড়তে কেউ তাঁকে বাধা দেননি। বিমানবন্দরে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। 
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আবদুল হামিদের দেশ ত্যাগে কোনো সংস্থা থেকে নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তার পরও মাঠ পর্যায়ের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছেন। তাদের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার পরই তাঁকে যেতে দেওয়া হয়। হামিদের সঙ্গে তাঁর শ্যালক ডা.

এ এম নওশাদ খান ও ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ ছিলেন। দেশের চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি বিদেশে গেছেন। এ তিনজনের পাসপোর্ট ও ভিসাসংক্রান্ত বিষয়ও খতিয়ে দেখছে কমিটি। 

সূত্র বলছে, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশ ত্যাগের ঘটনায় বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় জিডি করেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) দায়িত্বরত ইনচার্জ। সেখানে তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করা হয়। তারা এতে অনাপত্তি দেন। এ অনাপত্তি ওসি ইমিগ্রেশন অন্যদের অবগত করেন।
এসবি ইনচার্জ জানান, অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ইমিগ্রেশন) আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রেফারেন্সে ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ কে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ এসবির ওপরে উল্লিখিত সিনিয়রদের নির্দেশে ও দুটি গোয়েন্দা শাখা থেকে প্রাপ্ত অনাপত্তি সাপেক্ষে এবং ইমিগ্রেশন ফরট্র্যাক সিস্টেমে আবদুল হামিদ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য না থাকায় ভিআইপি টার্মিনালে কর্তব্যরত ইনচার্জকে ইমিগ্রেশন করার নির্দেশ দেন। টার্মিনাল ইনচার্জ ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। 

এদিকে হামিদের বিদেশযাত্রার বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলাম এবং এসবি কর্মকর্তা মো. সোলায়মানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় মাঠ পর্যায়ের চার সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্য, সবার চোখের সামনে দিয়ে ও ঊর্ধ্বতন সবুজ সংকেত পাওয়ার পর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কেন যারা মাঠ পর্যায়ে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা? কিশোরগঞ্জ জেলায় ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মামলার আসামিদের ব্যাপারে আগে থেকে অবহিত করার পরও সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনায় কেন পুলিশ সুপার শাস্তির মুখে, এমন প্রশ্ন অনেকের।  

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ম দ স ব ক র ষ ট রপত আবদ ল হ ম দ কর মকর ত ইনচ র জ ঘটন য় তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পরিযায়ী পাখির ডানায় শহরে সহাবস্থানের বার্তা 

আকাশে ভেসে আসে পাখির দল। দূর থেকে যেন নিঃশব্দে ডাক দেয়—এই শহরে একটু আশ্রয় চাই। এ শুধু ঋতুর বদল নয় বরং জীবনের টানাপড়েন ও টিকে থাকার লড়াই আর সহাবস্থানের এক অনুপম বার্তা। 

আজ ১০ মে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় শনিবার দিবসটি পালিত হয়। পরিযায়ী পাখিদের সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৬ সাল থেকে এই দিবস পালন শুরু করা হয়।  এবছরের  প্রতিপাদ্য ‘অংশীদারিত্বের স্থান: পাখিবান্ধব নগর ও সমাজ গঠন’।

হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি পরিযায়ী পাখি আসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কেউ আসে শীতের তীব্রতা এড়িয়ে, কেউবা খাবার বা প্রজননের প্রয়োজন মেটাতে। সমুদ্র, মরুভূমি, পর্বত-সব পেরিয়ে তারা হাজির হয় নতুন কোনো হাওড়, নদীতীর কিংবা শহরের জলাশয়ে। এই অভিবাসন শুধু প্রকৃতির নিয়ম নয়, বরং বাঁচার প্রয়াস। একই সঙ্গে এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের এক প্রাকৃতিক উপায়।

শহরের পাখি, শহরের দায়

ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরেও শীতকালে দেখা মেলে গুটিবক, চখাচখি, পানকৌড়ি, গাংচিল, লাল হাঁস ও বড় সারসের মতো পাখির। সংসদ ভবনের পেছনের জলাশয়, গুলশান লেক, হাতিরঝিল কিংবা রমনার মতো এলাকায় তারা এসে বসে। তবে শহর তাদের জন্য সবসময় নিরাপদ নয়। জলাশয় ভরাট, কাচঘেরা উঁচু ভবন, কীটনাশকের বিষক্রিয়া, আলো ও শব্দদূষণ-সব মিলিয়ে শহর হয়ে ওঠে পাখিদের জন্য বিপজ্জনক এক জায়গা। কাচের জানালায় ধাক্কা খেয়ে মৃত্যু, খাদ্যের অভাব কিংবা ঘুমানোর মতো শান্ত স্থান না থাকা-এ সবই তাদের জন্য হুমকি।

পরিবেশের নীরব প্রহরী

পরিযায়ী পাখিরা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে, বনাঞ্চল বিস্তারে সাহায্য করে, পরাগায়নে ভূমিকা রাখে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাদের অবদান অবিচ্ছেদ্য। তাদের অনুপস্থিতি মানেই কোনো বিপর্যয়ের ইঙ্গিত। তারা আমাদের কল্পনাতেও জায়গা করে নিয়েছে—কবিতা, গান, চিত্রকলায়। বিচ্ছেদ, যাত্রা কিংবা আশ্রয়ের প্রতীক হয়ে তারা থেকেছে যুগে যুগে।

শহরকে পাখিবান্ধব করতে হলে-

শহরকে পাখিবান্ধব করতে হলে সচেতনতা দরকার তিনটি পর্যায়ে:

ব্যক্তিগত উদ্যোগ:

ছাদে বা বারান্দায় পানি ও শস্যদানা রাখা

গাছ লাগানো ও পুরোনো গাছ রক্ষা

জানালায় স্টিকার লাগানো

অপ্রয়োজনীয় রাতের আলো বন্ধ রাখা

জৈব কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ


সামাজিক উদ্যোগ:

স্কুলে পাখি পর্যবেক্ষণ ক্লাব

স্থানীয় পর্যায়ে পাখি উৎসব

শহরের পার্ক বা লেকে পাখির জন্য শান্ত অঞ্চল নির্ধারণ


প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ:

পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণে আইন প্রয়োগ করা। শিকার ও পাচার রোধে নজরদারি বৃদ্ধি  করা। সবুজ স্থাপত্য, যেমন—সবুজ ছাদ ও কম আলো ব্যবহার করা। পরিকল্পিত নগরায়ন ও জলাশয় সংরক্ষণ করা। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বন অধিদপ্তর কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি, টেকনাফসহ সংরক্ষিত এলাকায় স্থানীয়দের যুক্ত করে গঠন করা হয়েছে ‘কমিউনিটি প্যাট্রল’।

পাখিরা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, তারা ভবিষ্যতের সংকেতবাহক। কোনো এলাকায় পরিবেশ বিপর্যস্ত হলে তারা আর ফিরে আসে না। শহরে যদি গাছ না থাকে, জলাশয় শুকিয়ে যায়, বাতাস বিষাক্ত হয়ে পড়ে—তাহলে শুধু পাখিই নয়, মানুষও একদিন বাসযোগ্য পরিবেশ হারাবে।

পরিযায়ী পাখিরা যখন আসে, তারা নিয়ে আসে অন্য ভূমির গল্প, নতুন আশার স্পর্শ। আমাদের শহর হওয়া উচিত এমন, যেখানে মানুষ ও পাখি পাশাপাশি বাস করতে পারে। এটি কেবল পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক মানবিক দায়।

পাখির ডানায় ভর করে স্বপ্ন দেখুক আমাদের শহর। গাছপালার ছায়ায়, জলাশয়ের জলে আশ্রয় পাক প্রকৃতি, আশ্রয় পাক প্রাণ।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ