তদন্তের ক্ষেত্র পর্যালোচনা করছে কমিটি
Published: 10th, May 2025 GMT
সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে কার কী ধরনের গাফিলতি ও অবহেলা ছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। তোলপাড় করা ঘটনাটি পর্যালোচনা করছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। আজ শনিবার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হবে। গতকাল শুক্রবার রাতে কমিটির একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কী প্রক্রিয়ায় আবদুল হামিদ বিদেশ গেলেন, তা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার রাতে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মতিউর রহমান শেখকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ সমকালকে বলেন, ‘তদন্তের এরিয়া কী হবে, তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। কমিটি গঠনের পরদিন শুক্রবার। আমরা কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছি। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হবে। কার কী দায়-দায়িত্ব ছিল, তা নিরূপণ করব।’
বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বিমানবন্দরে যান রাত ১১টার দিকে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। দেশ ছাড়তে কেউ তাঁকে বাধা দেননি। বিমানবন্দরে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি দেশ ত্যাগ করেন।
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আবদুল হামিদের দেশ ত্যাগে কোনো সংস্থা থেকে নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তার পরও মাঠ পর্যায়ের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছেন। তাদের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার পরই তাঁকে যেতে দেওয়া হয়। হামিদের সঙ্গে তাঁর শ্যালক ডা.
সূত্র বলছে, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশ ত্যাগের ঘটনায় বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় জিডি করেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) দায়িত্বরত ইনচার্জ। সেখানে তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করা হয়। তারা এতে অনাপত্তি দেন। এ অনাপত্তি ওসি ইমিগ্রেশন অন্যদের অবগত করেন।
এসবি ইনচার্জ জানান, অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ইমিগ্রেশন) আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রেফারেন্সে ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ কে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ এসবির ওপরে উল্লিখিত সিনিয়রদের নির্দেশে ও দুটি গোয়েন্দা শাখা থেকে প্রাপ্ত অনাপত্তি সাপেক্ষে এবং ইমিগ্রেশন ফরট্র্যাক সিস্টেমে আবদুল হামিদ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য না থাকায় ভিআইপি টার্মিনালে কর্তব্যরত ইনচার্জকে ইমিগ্রেশন করার নির্দেশ দেন। টার্মিনাল ইনচার্জ ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন।
এদিকে হামিদের বিদেশযাত্রার বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলাম এবং এসবি কর্মকর্তা মো. সোলায়মানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় মাঠ পর্যায়ের চার সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্য, সবার চোখের সামনে দিয়ে ও ঊর্ধ্বতন সবুজ সংকেত পাওয়ার পর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কেন যারা মাঠ পর্যায়ে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা? কিশোরগঞ্জ জেলায় ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মামলার আসামিদের ব্যাপারে আগে থেকে অবহিত করার পরও সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনায় কেন পুলিশ সুপার শাস্তির মুখে, এমন প্রশ্ন অনেকের।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ম দ স ব ক র ষ ট রপত আবদ ল হ ম দ কর মকর ত ইনচ র জ ঘটন য় তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন হাবিবুর
ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যদের চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান। পুলিশের নিজস্ব ওয়্যারলেসে (বেতারবার্তা) এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ দেওয়া জবানবন্দিতে এ বিষয় উল্লেখ করেছেন ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের ওয়্যারলেস অপারেটর মো. কামরুল হাসান।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৫০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন কামরুল।
গত বছরের ১৭ জুলাই ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন কামরুল। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি জবানবন্দিতে বলেন, সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তাঁর ডিউটি (দায়িত্ব) ছিল। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ওয়্যারলেসে (কল সাইন ভিক্টর মাইক ওয়ান–১) সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন হাবিবুর রহমান। তখন চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। বার্তাবাহক হিসেবে তিনি (কামরুল) ও তাঁর দল ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটে ওই বার্তা পৌঁছে দেন।
হাবিবুর রহমানের সেই ওয়্যারলেস বার্তার অডিও রেকর্ড জবানবন্দি দেওয়ার শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনালে সেই অডিওটি দুবার শোনানো হয়।
সাক্ষী কামরুল হাসান জবানবন্দি দেওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তাঁকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অডিও বার্তা যেটা শুনলাম, সেখানে উনি (হাবিবুর রহমান) বলেছেন যে জানমাল রক্ষায়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায়, হাঁটু গেড়ে কোমরের নিচে গুলি করতে। বিষয়টিকে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) কীভাবে ব্যাখ্যা করছে?’
জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, এটি মামলার আর্গুমেন্টের (যুক্তিতর্ক) জায়গা। গত বছরের ১৭ জুলাই সরকারি ছুটি ছিল। সেদিন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কেন জনগণের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেবেন। সেদিন এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, যাতে গুলি করতে হবে। কোমরের নিচে না ওপরে, সেটা অবান্তর।
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সাক্ষী বলেছেন ডিএমপি কমিশনার চায়নিজ রাইফেল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অডিওতে এ রকম কিছু পাওয়া যায়নি।
এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, চায়নিজ রাইফেলের কথাটা উনি বলেছেন বা বলেননি, এ বিষয়টি ম্যাটার অব আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্কের বিষয়)। উনি বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা যখন আর্গুমেন্ট করবেন, তখন বিষয়টা ফেস (মোকাবিলা) করবেন।
এ মামলায় গতকাল আরও দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তাঁরা হলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার এসআই (উপপরিদর্শক) কামরুল হোসাইন ও মো. আনিসুর রহমান। এ ছাড়া সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের এসআই মো. শাহেদ জোবায়েরের পুনঃ জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিলেন।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আজ সাক্ষ্য দেবেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা, হবে সরাসরি সম্প্রচারট্রাইব্যুনালে কর্মরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গতকাল রাতে এক ভিডিও বার্তায় প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা এ মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা বুধবার (আজ) সাক্ষ্য দেবেন। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলা তদন্তের সময় শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি ফোনালাপ জব্দ করেছেন, সেই ফোনালাপের রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনানো হবে।
উত্তরা ও সিলেটের মামলায় প্রতিবেদন
দাখিলের সময় বাড়লগণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর উত্তরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২২ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল–১। এই মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ১০ আসামিকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এ ছাড়া গণ–অভ্যুত্থানের সময় সিলেটে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর মামলায় গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২–এ দুজন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন।