বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান (দুদু) বলেছেন, আওয়ামী লীগ আর এ দেশে আসবে না। এত বড় চোর পরিবার পৃথিবীর কোথাও নেই। আওয়ামী লীগের নেতাদের টাকা ও সম্পত্তি যেখানেই থাক না কেন, সেটা বাংলাদেশে ফেরত আনা হবে। যারা গণহত্যা পার্টি, তারা রাজনীতিতে আসার আর সুযোগ পায় না। আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাঁদের নেতা-নেত্রীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আজ শনিবার বিকেলে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা এ কথাগুলো বলেন।

বিএনপির নেতা শামসুজ্জামান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি ছিলেন জিয়াউর রহমান, যাঁর ঢাকা শহরে একখণ্ড জমি বা বাড়ি-গাড়ি ছিল না। আর এখন ছাত্রনেতা, যুবনেতা ও শ্রমিক নেতা এবং আমাদের মতো নেতাদের প্রাডো বা আলিশান বিল্ডিং আছে। তাঁর (জিয়াউর) কোনো ব্যাংক-ব্যালান্স ছিল না। তিনি সরকারি বেতনের টাকায় চলছেন। এ কারণে তিনি শহীদ হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের থাকার জায়গা ছিল না। রাষ্ট্র তাঁদের দায়িত্ব নিয়েছিল।’

১৭ বছর পর মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন বালিজুড়ী এফএম উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। প্রথম অধিবেশনে কেন্দ্রীয়, জেলা বিএনপির নেতারাসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো.

মঞ্জুর কাদের (বাবুল খান)। সঞ্চালনা করেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরিফুল আলম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী (মামুন) ও আবু ওয়াহাব আকন্দ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (বাবুল), সহসম্পাদক বদরুদ্দোজা (বাদল) প্রমুখ বক্তব্য দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র উপজ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভুল জায়গায় স্টেশন চার উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষের কষ্ট

চকরিয়ার হারবাং রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে পাহাড়, পূর্ব পাশে সমতল এলাকা। আশপাশে তেমন কোনো জনবসতি নেই। স্টেশনের সঙ্গে লাগোয়া দক্ষিণে বিশাল হারবাং বিল। বিলের ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দুই লেনের সুদৃশ্য বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। রেলস্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য পূর্ব দিকে একমাত্র যে সড়কটি রয়েছে সেটি কাঁচা ও সরু। সড়কটি হারবাং বাজার হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মিশেছে। রেলস্টেশন থেকে হারবাংছড়া পর্যন্ত  সড়কটি এতই সরু যে দুটি রিকশা পাশাপাশি চলতে পারে না। যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের হারবাং স্টেশনটি একটি মরা স্টেশনে পরিণত হয়েছে। 
এ স্টেশনে সকাল, বিকাল ও রাতে দুই জোড়া ট্রেন থামলেও দিনে সর্বোচ্চ ৪০-৫০ জন যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে আসা-যাওয়া করেন। অথচ স্টেশনটি যদি দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা অংশে স্থাপন করা হতো তাহলে যাত্রীর কোনো অভাব হতো না। কারণ বানৌজা সড়ক দিয়ে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষ চলাচল করেন। হারবাংয়ে স্টেশন না করে যদি মছনিয়াকাটায় করা হতো তাহলে ৪ উপজেলার মানুষের যাতায়াতে দারুণ উপকৃত হতো। 
কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তে হারবাংয়ে স্টেশন করায় চার উপজেলার মানুষ ট্রেনে যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছেন না। ভুল জায়গায় স্টেশন হওয়ায় যাত্রীদের প্রায় ৩ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে স্টেশনে যেতে হচ্ছে। এতে ট্রেনের প্রতি বিমুখ যাত্রীরা।   
তবে হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়া কাটা পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রীরা সহজে স্টেশনে যাতায়াত করতে পারবেন এবং স্টেশনটি জমজমাট হবে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
পহরচাঁদা গ্রামের সন্তান অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন হয়েছে, এটি যুগান্তকারী উন্নয়ন। রেলস্টেশনগুলো করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। পাহাড়ের খোপে, হারবাংয়ে যেখানে যাত্রীদের যাতায়াতের কোনো সুব্যবস্থা নেই সেখানে কেন স্টেশন করা হলো সেটি রহস্যজনক। হারবাং থেকে মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়ক। সেই সড়কের পাশে স্টেশনটি করা হলে চকরিয়া ছাড়াও পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর মানুষও উপকার পেতেন। কর্তৃপক্ষের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে হারবাং স্টেশনের সুবিধা মানুষ পাচ্ছেন না।’
গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা প্রবল এক্সপ্রেস হারবাং স্টেশন পার হয়। সরেজমিন দেখা যায়, মাত্র দু’জন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমেছেন, পাঁচজন ট্রেনে ওঠেন। ট্রেন থেকে নেমে হারবাংয়ের কালা সিকদার পাড়ায় যাওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজছিলেন যাত্রী স্কুল শিক্ষক আবদুর রহিম। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষার পরও তিনি কোনো গাড়ি পাননি। অবশেষে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেন। তিনি বলেন, ‘বাড়ি যেহেতু হারবাংয়ে, সে কারণে এই স্টেশনে নেমেছি। স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যাওয়া যায়। তবে প্রায় এক কিলোমিটার অংশ কাঁচা আর সড়কের প্রস্থ মাত্র ৫/৬ ফুট। সে কারণে এদিকে তেমন গাড়ি আসে না।’  
চকরিয়া উপজেলায় তিনটি রেলস্টেশন আছে। মালুমঘাটে ডুলহাজারা ও রামপুরে চকরিয়া স্টেশনে মোটামুটি যাত্রী দেখা গেলেও হারবাং রেলস্টেশনে একেকটি ট্রেনে ১০/১২ জনের বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন না। স্টেশনে যাত্রী সুবিধাও এখনও নিশ্চিত হয়নি। শৌচাগার, বিশ্রামাগার, এমনকি যানবাহন রাখার স্ট্যান্ডও পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
হারবাং স্টেশনমাস্টার আব্দুস সালাম বলেন, ‘মাত্র ৬ জন জনবল নিয়ে স্টেশনটি পরিচালনা করা হচ্ছে। স্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য ভালো কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে চকরিয়ার বরইতলী, হারবাং, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াতের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নন।’
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমদ বাবর বলেন, ‘হারবাং বাজার থেকে রেলস্টেশনে যাওয়ার সড়কটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। এক সময়ে উপকূলীয় পেকুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হারবাং-বারবাকিয়া সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অথচ সড়কটি আবার চালু করা হলে পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার যাত্রীদের রেলস্টেশনে আসতে কিছুটা সুবিধা হতো।’ 
ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুবেল সিকদার বলেন, ‘রেলস্টেশনটির জন্য উপযুক্ত স্থান ছিল বরইতলী একতাবাজার-মগনামা বানৌজা সড়কের মছনিয়াকাটা। কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থের কথা চিন্তা না করে কারও প্ররোচনায় এই রেলস্টেশনটি হারবাংয়ে স্থাপন করেছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে চার উপজেলার সিংহভাগ মানুষের রেলপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এখনও হারবাং স্টেশন থেকে মছনিয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইনের পাশ দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করা হলে যাত্রীরা সহজে স্টেশনে যাতায়াত করতে পারেতন। ’  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ