মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের প্রথম সাক্ষাৎ
Published: 10th, May 2025 GMT
মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং প্রথমবারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিয়ানমারের অবস্থানকে সমর্থন করায়’ চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অং হ্লাইং। সি মিয়ানমারের প্রতি চীনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ শনিবার জান্তা নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার ও চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে এসব কথা বলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাশিয়ার বিজয় দিবস উদ্যাপনের এক ফাঁকে তাঁরা বৈঠক করেন।
দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকে অং হ্লাইং গত মার্চ মাসে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর চীনের মানবিক সহায়তার জন্য সি চিন পিংকে ধন্যবাদ জানান। ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিয়ানমারের অবস্থানকে সমর্থন করার জন্য’ তিনি চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সি আশা করেন, মিয়ানমার চীনা নাগরিক, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং সীমান্তবর্তী অপরাধ দমনে আরও জোরালো উদ্যোগ নেবে।
২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করেন। এর মধ্য দিয়ে দেশটির গণতন্ত্রমুখী যাত্রা অকালে বন্ধ হয়ে যায়, জড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধে।
চীন সরকার মিয়ানমারের জান্তা ও বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। চীনের পর রাশিয়াই পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা জর্জরিত মিয়ানমারের বড় মিত্র।
ক্ষমতা গ্রহণের পর অং হ্লাইং এর সঙ্গে এবারই প্রথম বৈঠক করলেন সি। এর আগে তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ছায়া পৃথিবীর চোখ দিয়ে
ওরহান পামুক বলেছিলেন, পৃথিবীর সমস্ত ভালো উপন্যাসই কার্যক্ষেত্রে রাজনৈতিক উপন্যাস। কারণ, ভালো উপন্যাস মানেই দ্বিতীয় কোনো মানুষের মন বা বর্গকে পড়তে চাওয়া। অথচ গড়পড়তা পাঠক ‘রাজনৈতিক উপন্যাস’ বলতে বোঝে এমন কোনো রচনা, যার পটভূমিতে আছে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা ঘটনা বা সময়কাল। রায়হান রাইনের ‘নিখোঁজ মানুষেরা’ সেই বিচারে নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক উপন্যাস। পড়তে গিয়ে টের পাই, স্বল্পায়তনের এ উপন্যাসে গত দশকের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নানা রাজনৈতিক ঘটনা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলেন লেখক।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইউসুফ, মতিঝিলের দিলকুশার কোনো গলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সে চেতনা হারায়। জীবনের ওপারে আরেকটা ছায়া জগতে পৌঁছে সে খুঁজে পায় ময়ূরজানকে, জীবনের একটা সময়ে যার প্রতি দুর্বলতা ছিল ইউসুফের, আর এখন জানা যায়, মেয়েটা মৃত। তারপর মৃত ওই ময়ূরজানের কাছ থেকেই ছায়াময় ওই জগতে চলাচলের কায়দা শেখে ইউসুফ। ক্রমে আরও কিছু সঙ্গীও তাদের জুটে যায়। নিশাত, শকুন্তলা, রতন, কায়েস। কায়াহীন এই সঙ্গীদের নিয়েই ইউসুফ প্রত্যক্ষ করে যায় বহু কিছু। সময় গড়ায়, আর তার সঙ্গে সঙ্গে ইউসুফের বয়ানে পাঠকের কাছে ধরা দেয় একেকটা শহর, মফস্সল কি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিত্রটাই।
তবে এই বয়ান পড়তে গিয়ে স্বচ্ছন্দে এগোতে পারে না পাঠক। কারণ, সঙ্গীদের মুখে শোনা তাদের মৃত্যুর ইতিহাস কিংবা ছায়া দর্শক হয়ে প্রত্যক্ষ করা যত ঘটনা—জীবনের ওপাশের জগতে ইউসুফের সমস্ত অভিজ্ঞতা যেন হয়ে দাঁড়ায় হতাশার। কাহিনিতে আসা প্রায় সব চরিত্রই কোনো না কোনো উপায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতাবৃত্তের অন্যায়ের শিকার। ময়ূরজানের মেয়ে কাজলের বাবাকে যেমন কেউ তুলে নিয়ে গিয়েছিল সন্ত্রাসী ছোট মনিরের সঙ্গে নামের সাদৃশ্যের কারণে, নিশাতের লাশ যেমন ইটভাটায় পুঁতে রেখেছিল গিয়াস কাউন্সিলরের লোকেরা, নির্মম একদল মাংসলোভীর হাতে পড়ে হেলেনা যেমন ক্রমশ হয়ে উঠল হেলেন।
রায়হান রাইনের ‘নিখোঁজ মানুষেরা’ নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক উপন্যাস। পড়তে গিয়ে টের পাই, স্বল্পায়তনের এ উপন্যাসে গত দশকের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নানা রাজনৈতিক ঘটনা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলেন লেখক।নিখোঁজ মানুষেরা
রায়হান রাইন
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রকাশ: জুন ২০২৫
প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল
পৃষ্ঠা: ১৭৬
মূল্য: ৩০০
বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন
একের পর এক চরিত্রের দুঃসহ অভিজ্ঞতা এভাবে শুনতে শুনতে কাহিনির ধারা ঠিক স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ধরা দেয় না পাঠকের কাছে, চরিত্রদের নিজস্ব ট্রমার সঙ্গে পাঠক সংযুক্ত হতে পারে না। সঙ্গে পাঠকের অস্বস্তি আরও বাড়ায় কাহিনির অবিমিশ্র অন্ধকার জগৎ। ময়ূরজানের মেয়ে কাজল যার বাসায় কাজ করতে যায়, সেই ভদ্রলোকও সুযোগ বুঝে ক্ষতবিক্ষত করতে চায় প্রায় কিশোরীটিকে। তখন মনে হয়, ইউসুফের চোখে দেখা জগতের কোথাও যেন আলো নেই, মনুষ্যত্ব নেই। দিনের পর দিন গড়িয়ে গেলেও ইউসুফ যেন কোথাও সহৃদয়তা খুঁজে পায় না। কাহিনির শেষ দিকে অবশ্য কাজলের সঙ্গে মারুফের প্রেম খানিকটা আলো দেয় পাঠকের মনে। কিন্তু যখনই ছেলে–মেয়ে দুটি একে অন্যকে জানতে রাস্তায় বেরোয় একত্রে, তখনই তাদের চাক্ষুষ করতে হয় সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ কি গণপিটুনির মতো ঘটনা। ফলে প্রেম দেখতে গিয়েও পাঠক একরকম রাজনৈতিক কমেন্ট্রিই পড়ে যায়। তবে সেই পাঠ নিরানন্দ হয় না রায়হানের ভাষার কারুকাজে। রুক্ষ, ভীষণ বর্বর এক সমাজের কথা বলতে গিয়েও রায়হান ব্যবহার করেন নরম শব্দের প্রলেপ। সেখানে চিঠিহীন শূন্য খামের মতো মৃত্যুর উপমা পাঠককে কবিতার মতো মুগ্ধতা দিয়ে যায়।
কাহিনির সমাপ্তিটা চলে আসে খানিক দ্রুত। তাতে অবশ্য সেটা উপভোগ করতে সমস্যা হয় না। কারণ, রায়হানের বর্ণনাভঙ্গীতে পাঠক বোধ হয় অবচেতনে এমন সমাপ্তির প্রত্যাশাই কাহিনির শুরু থেকে করে আসছে। একটা আক্ষেপও হয়, ছায়া জগতে নিশাতের সঙ্গের জন্য ইউসুফের মন সময়ে সময়ে যে তাড়না অনুভব করছিল, সেটাকে আরেকটু উন্মোচন করা গেলে বোধ হয় গল্পটায় আরেকটা মাত্রা যোগ হতো!
সব মিলিয়ে ‘নিখোঁজ মানুষেরা’ পড়ার অভিজ্ঞতা মিশ্র। উচ্চাভিলাষী না হয়ে ক্লেদাক্ত এক রাজনৈতিক ভাষ্যই আমাদের সামনে আনতে চাইলেন রায়হান রাইন। সে ভাষ্য অবিমিশ্র অস্বস্তির, অবিরাম ক্লেদাক্ত। অবশ্য জীবন অমন ক্লেদাক্ত হয়ে উঠলে মৃতদের জগতের মতো উপন্যাসের জগতও যে নৈরাশ্যময় হয়ে উঠবে, তাতে বোধ হয় অবাক হওয়ার কিছু নেই।