দেশের শেয়ারবাজারকে কার্যকর ও বিনিয়োগকারীবান্ধব করতে বিদেশি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে আগামী তিন মাসের মধ্যে সংস্কার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ  ইউনূস। ভালো শেয়ারের জোগান বাড়াতে সরকারি কোম্পানির বাইরে সরকারের শেয়ার থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেন প্রধান উপেদেষ্টা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড.

আনিসুজ্জামান চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই ছিল প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে শেয়ারবাজার ইস্যুতে প্রথম সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারের চলমান অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এভাবে একটি দেশের শেয়ারবাজার চলতে পারে না। বিশেষ ‘সার্জারি’ ছাড়া শেয়ারবাজার ঠিক হবে না।  বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, সংস্কার কার্যক্রম ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরুর পরই বাজারের স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর পদত্যাগের বিষয়ে চাপ দিচ্ছে।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,  লুটপাটের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে বেসামাল করে দেওয়ার পেছনে গত কয়েক দশক ধরে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় না আনতে পারলে মানুষের আস্থা ফিরবে না বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, শেয়ারবাজারের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে এমন অবস্থায় ফেরাতে হবে যেন মানুষ আস্থা ফিরে পায়। শেয়ারবাজার যেন লুটেরাদের আড্ডাখানায় পরিণত না হয়।

গত সরকারের রেখে যাওয়া দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি গত ৯ মাসে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও শেয়ারবাজারে এর কোনো প্রতিফলন নেই। লাগাতার দর পতনে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। এমন প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্ধারণে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, দেশের বড় বড় বেসরকারি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হরে তারা কী ধরনের প্রণোদনা চায়, তা জেনে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। 

প্রেস সচিব বলেন, আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি প্রধান নির্দেশনা দিয়েছেন। স্বার্থের সংঘাত এড়াতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পুঁজিবাজার সংস্কারের কথা বলেছেন, যাতে তারা তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেন।  শেয়ারবাজারে দুর্নীতিতে ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। বড় বড় কোম্পানি ব্যাংক থেকে ঋণনির্ভরতা কমিয়ে যাতে পুঁজিবাজার এবং বন্ড বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

প্রেস সচিব জানান, শেয়ারবাজারে ভালো শেয়ারের জোগান বাড়ানোর জন্য অবিলম্বে সরকারি কোম্পানি এবং ইউনিলিভারসহ যেসব বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার আছে, সেগুলোকে তালিকাভুক্ত করার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর বাইরে মেঘনা গ্রুপ এবং সিটি গ্রুপের মতো দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর কোম্পানিকে প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।

প্রেস সচিব আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে গত ৯ মাসে বিএসইসি শেয়ারবাজার সংস্কারে কী কী সংস্কার করেছে এবং যে বিষয়ে উদ্যোগ চলমান আছে সে বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। 

জানা গেছে, সভার শুরুতে বিএসইসির চেয়ারম্যান তাঁর উপস্থাপনায় জানান, তাঁর নেওয়া বিভিন্ন  পদক্ষেপে শেয়ারবাজারের বড় বড় রাঘববোয়ালরা খেপেছেন। যাদের  নিয়ে কাজ করতে গেছেন, তাদের অনেকের শেয়ারবাজারে কোনো না কোনো স্বার্থ জড়িত। ফলে এখানে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন।  সংস্কার কার্যক্রম ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরুর পরই বাজারের স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর পদত্যাগের বিষয়ে চাপ দিচ্ছে।

শেয়ারবাজারকে কার্যকর করতে ভালো কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করতে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির  কর হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ উন্নীত করার প্রস্তাব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে শেয়ারবাজারে আকৃষ্ট করতে লভ্যাংশ আয়ে উৎসে কর কর্তনকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনার  প্রস্তাব করেন তিনি।
বিএসইসির চেয়ারম্যান জানান, শেয়ারবাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহ নাই বললেই বলে। এ ঘাটতি দূর করতে সরকারের ভালো কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সরাসরি তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে। তবে ব্যাংক থেকে সহজে বড় অঙ্কের ঋণ ছাড় সুবিধা যতদিন বহাল থাকবে, ততদিন বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করা যাবে না। বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে বিনিয়োগ সহজ করতে একটি জাতীয় নীতিমালা তৈরি করা দরকার। ব্যাংকের ওপর চাপ কমিয়ে পুঁজিবাজারকে অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এই নীতিমালা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, আইডিআরএ ইত্যাদির মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের জন্য একটি জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। 

দেরিতে হলেও শেয়ারবাজার বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করায় প্রধান উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন। সমকালকে তিনি বলেন, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা যে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন, তা শেয়ারবাজারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর সবগুলোর বাস্তবায়ন দীর্ঘমেয়াদি। শেয়ারবাজারের চলমান সংকটাবস্থা নিরসনে বিনিয়োগকারী এবং শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা তাৎক্ষণিক বা স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ আশা করে। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া শেয়ারবাজার সমস্যার সমাধান করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডিএসইর এই পরিচালক।



 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ত ল ক ভ ক ত কর শ য় রব জ র র সরক র র শ ব যবস থ বল ছ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এসেনসিয়াল ড্রাগসকে আনতে সক্রিয় ডিএসই, মন্ত্রণালয়ে চিঠি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা অনুযায়ী, সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ (এসওই) বা সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পিএলসি। এ লক্ষ্যে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা বা চিঠি পাঠিয়ে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানোর কাজ চলছে। ডিএসই আশা করছে, শিগগিরই লাভজনক রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হবে।

এরই ধরাবাহিকতায় সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ডিএসই। পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দক্ষতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারের চলমান প্রচেষ্টা বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি এসেনসিয়াল ড্রাগকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে সহায়তা চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।

আরো পড়ুন:

কারণ ছাড়াই বাড়ছে রহিমা ফুডের শেয়ারদর

পিপলস লিজিংয়ের অর্ধবার্ষিকে লোকসান বেড়েছে ১৫.৩৩ শতাংশ

ওই চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মকসুদ, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম ও এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আ. সামাদ মৃধা বরাবর পাঠানো হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে নিয়ন্ত্রক বিএসইসি নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই। মূলত সরকারি কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে দফা দফায় চেষ্টা করেও তাদের পুঁজিবাজারে আনা সম্ভব হয়নি। অবশেষে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি গতিশীল করতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে চলতি বছরের ১১ মে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ডিএসইর চিঠি
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম লিখেছেন, দেশের পুঁজিবাজার টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয়। এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির সম্ভাব্য ইক্যুইটি তালিকাভুক্তি করতে আগ্রহী।

ওষুধ খাতে কোম্পানিটির কৌশলগত ভূমিকা এবং গত দুই দশক ধরে প্রশংসনীয় ব্যবসা বৃদ্ধির রেকর্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি বিদ্যমান নিয়ন্ত্রক কাঠামোর অধীনে তালিকাভুক্তির জন্য উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, বর্তমান বিধিমালার আওতায় কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই ধরনের কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সময়োপযোগী এবং বিভিন্ন দিক থেকে কার্যকর হবে। এই কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। যেমন-  কর্পোরেট সুশাসন বৃদ্ধি, বৃহত্তর কর্মক্ষম শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর অংশগ্রহণ সক্ষম করে জনসাধারণের মালিকানা সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করবে বলে চিঠিতে জানানো হয়।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এসেনশিয়াল ড্রাগস একটি উচ্চ-কার্যক্ষমতা সম্পন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির তালিকাভুক্তি পুঁজিবাজারের মানদণ্ড বৃদ্ধি এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ফলে আরও সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে এবং দেশের পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করবে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকরণে অবদান রাখবে। এটি সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার ও স্বচ্ছতা এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে নেয়া বৃহত্তর উদ্যোগকে শক্তিশালী ও বেগবান করবে।

এসেনশিয়াল ড্রাগসকে সহজ ও কার্যকরভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি করতে ডিএসই সম্পূর্ণ সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। ডিএসই মনে করে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এই সময়োপযোগী উদ্যোগ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে, যা এসেনশিয়াল ড্রাগসের অংশীজন এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে। তাই এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সুবিধাজনক সময়ে আলোচনায় বসতে আগ্রহী ডিএসই। এ বিষয়ে যে কোনো সহযোগিতা ও ব্যাখ্যার জন্য ডিএসই সদা প্রস্তুত রয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা ও এসএমএস দেওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘`পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসই এ বিষয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে আলোচনায় বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’’ 

রাষ্ট্রীয় কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে বিএসইসি ও ডিএসইর উদ্যোগ
গত ৭ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বিশেষ করে দেশের যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির (ডাইরেক্ট লিস্টিং) মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে শিল্প উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

পরবর্তীতে গত ২১ জুলাই রেল ভবনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৈঠক করেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লাভজনক ও ভালো কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির পথকে সুগম করতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

এরই ধরাবাহিকতায় গত ২৪ জুলাই লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ডিএসই।

এরপর গত ২৯ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত বিএসইসি সঙ্গে পুঁজিবাজারের অংশীজনদের তৃতীয় মাসিক সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সে সময় তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আমরা কাজ করছি। কিছু সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির তালিকা করে তাদের সঙ্গে বসছি। সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

পরবর্তীতে গত ৩১ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুসরণে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বৈঠকে সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। একই সঙ্গে দেশের যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দ্রুত পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার বিষয়েও আলোচনা হয়।

বিএসইসির দেওয়া তথ্য মতে, ইতোমধ্যে লাভজনক ১৫টি কোম্পানির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো হলো- ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), সাইনোভিয়া (সাবেক স্যানোফি) বাংলাদেশ লিমিটেড, নোভার্টিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সিনজেন্টা (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস্ কোম্পানি লিমিটেড, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ও জীবন বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ইত্যাদি।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে মাত্র ২০টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলোর বাজার মূলধন ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলো হলো- এটলাস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিডি সার্ভিস), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ইস্টার্ন কেবলস, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইবিসি), যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল টিউবস, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রূপালী ব্যাংক, শ্যামপুর সুগার মিলস, তিতাস গ্যাস, উসমানিয়া গ্লাস সিট ফ্যাক্টরি, লিন্ডে বাংলাদেশ  ও জিলবাংলা সুগার মিলস।

ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এসেনসিয়াল ড্রাগসকে আনতে সক্রিয় ডিএসই, মন্ত্রণালয়ে চিঠি
  • পুঁজিবাজার সঙ্কট কাটিয়ে স্থিতিশীলতার পথে