বিডিআর বিদ্রোহ: বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় আরও ৪০ জনের জামিন মঞ্জুর
Published: 12th, May 2025 GMT
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় আরও ৪০ আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলায় এই ব্যক্তিরা আগেই খালাস পেয়েছেন।
আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের (প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ) বিচারক ইব্রাহীম মিয়া আজ সোমবার এই আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম।
আইনজীবী আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আরও ৪০ জনের জামিন বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ১৭৮ জন বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জামিন পেয়েছিলেন। এ নিয়ে মোট ২১৮ জামিন পেলেন।
আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানান, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২৭৮ জনকে খালাস দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এর মধ্যে ৬৯ জনের খালাসের রায় চ্যালেঞ্জে উচ্চ আদালতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে ২০ জনের খালাসের রায় বাতিল হয়। এই হিসাব অনুযায়ী, বিচারিক ও উচ্চ আদালত থেকে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামির সংখ্যা ২৫০ জনের বেশি। যাঁরা উভয় আদালত থেকে খালাস পান, তাঁদের জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত দুই দফায় মোট ২১৮ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন।
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ মামলার সাক্ষী ১ হাজার ৩৪৪ জন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। সেদিন বিডিআরের কয়েক শ সদস্য পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালান। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।
পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় মামলা। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।
যেকোনো হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে অনুমোদনের জন্য আসে। পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ আসামি মারা যান।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যাঁরা খালাস পেয়েছেন এবং যাঁদের সাজা কমেছে, এমন ৮৩ আসামির বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই শুনানি হবে আপিল বিভাগে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ড আর র র ঘটন য় কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভাইকে বাঁচাতে বান্ধবীকে ফাঁসানোর অভিযোগ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় বান্ধবীর ছবি তুলেছিলেন ভাই। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালে ভাইকে বাঁচাতে উল্টো বান্ধবীর নামে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তানিয়া হক নামের এক নারীর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও চুরির ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়াই মামলা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা জজকোর্টের সামনে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল।
পাবনা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামানের আদালত ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা সানিমুনকে জামিন দিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, “আমার মক্কেল ইফফাত মোকাররমা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতায় পেশায় নিয়োজিত। তিনি একজন সম্মানিত লোক। মামলার বাদীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের কারণে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন এবং একসঙ্গে ঘোরাঘুরির পর যখন রাত্রীযাপন করছিলেন সেই সময়ে বাদীর ভাই ইফফাত মোকাররমার ছবি তুলেছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান এবং ছবিগুলো দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরেরদিন সকালে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ইফফাত মোকাররমা ঢাকায় চলে যান এবং সেখানে জিডি করেন। কিন্তু এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে উল্টো ইফফাত মোকাররমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দায়ের করেন তার বান্ধবী।”
তিনি আরো বলেন, “বাদী তানিয়া হক উল্লেখ করেছেন ২৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে যা তিনি তার শরীরে পড়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে ঘুড়ে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু ওইদিনের ঘোরাঘুরির ছবিতে তার শরীরে কোনো স্বর্ণালঙ্কার ছিল না। এছাড়াও ঘটনার দুইদিনের মাথায় যেভাবে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে বোঝা যায় কোনো তদন্ত ছাড়াই থানা কোনো পক্ষ থেকে প্রভাবিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।”
ভুক্তভোগী নারী ইফফাত মোকাররমা বলেন, “এই মামলার নূন্যতম প্রমাণ নেই। আমি যে একজন শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্রদের সামনে দাঁড়াবো সেই অবস্থাও তারা আমাকে রাখেনি। আমার সন্তানসহ পুরো পরিবার সামাজিকভাবে হেয় পতিপন্ন হচ্ছে। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে মামলার বাদীর তানিয়া হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “উনি (আইনজীবী) উনার মক্কেলের জন্য এসব কথা বলতেই পারেন। উনার মক্কেলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনার তদন্ত করে এবং আইনানুগভাবেই মামলা দায়ের হয়েছে, যা এখনও তদন্ত চলছে।”
ঢাকা/শাহীন/এস