অতি মূল্যবান ও পবিত্র হাজরে আসওয়াদ
Published: 12th, May 2025 GMT
পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে, মাতাফ থেকে প্রায় চার ফুট উচ্চতায়, রুপার ফ্রেমে বাঁধাই করা কালো রঙের আটটি ছোট পাথরের টুকরা রয়েছে। এগুলো একসময় একটি অখণ্ড পাথরের অংশ ছিল, যা বিভিন্ন ঘটনায় ভেঙে বর্তমানে আটটি খণ্ডে বিভক্ত। এই পাথর হাজরে আসওয়াদ নামে পরিচিত, যা পবিত্র কাবাঘরের একটি অতি পবিত্র ও মূল্যবান উপাদান।
হাজরে আসওয়াদের তাৎপর্য
পবিত্র কাবা শরিফের তাওয়াফ (সাত চক্কর প্রদক্ষিণ) শুরু হয় এই হাজরে আসওয়াদের অবস্থান থেকে। প্রতিটি চক্করের সময় হজযাত্রীরা এই পাথর চুম্বন করেন। ভিড়ের কারণে চুম্বন সম্ভব না হলে ইশারায় চুম্বনের নিয়মও পালন করা যায়। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.
এ কারণে মুসলিমরা হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করে বা স্পর্শ করে, রাসুল (সা.)–এর সুন্নাহ অনুসরণ করে।
পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণ ও হাজরে আসওয়াদ
রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর নবুয়ত প্রাপ্তির আগে ৬০৫ সালে তাঁর ৩৫ বছর বয়সে, কুরাইশ গোত্র পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা কাবার মেঝেসহ দেয়াল উঁচু করে ছাদযুক্ত নির্মাণের পরিকল্পনা করে। কিন্তু পবিত্র কাবাঘরের দেয়াল ভাঙার সময় সবাই ভয়ে কাঁপছিল। কারণ, পবিত্র কাবার পবিত্রতা সম্পর্কে আরবদের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধা ছিল।
কুরাইশের বিভিন্ন গোত্র পাথর সংগ্রহ করে নির্মাণকাজে অংশ নেয়। কিন্তু হাজরে আসওয়াদকে তার নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপনের সময় গোত্রগুলোর মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। প্রতিটি গোত্রই পাথরটি নিজেরা স্থাপন করতে চায়, যা তীব্র উত্তেজনা ও সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এগোয়। চার থেকে পাঁচ দিনের উত্তেজনার পর কুরাইশদের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা প্রস্তাব দেন, পরদিন সকালে যিনি প্রথম সেখানে আসবেন, তিনিই এই বিরোধের মীমাংসা করবেন।
পরদিন সকালে সবার আগে সেখানে প্রবেশ করেন হজরত মুহাম্মদ (সা.), যিনি তখনো নবুয়ত লাভ করেননি। তিনি ‘আল আমিন’ (বিশ্বস্ত) হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। কুরাইশ নেতারা তাঁর কাছে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি একটি চাদর আনতে বলেন এবং চাদরের মাঝখানে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রের প্রতিনিধিদের চাদরের কোণ ধরে পাথরটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এভাবে তিনি একটি সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়ান এবং হাজরে আসওয়াদ তার স্থানে পুনঃস্থাপিত হয়। তখনো পাথরটি অখণ্ড ছিল।
আরও পড়ুনকাবার মহিমা৩১ জানুয়ারি ২০২৩হাজরে আসওয়াদের ক্ষয়ক্ষতি
পরবর্তী সময়ে হাজরে আসওয়াদ বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উমাইয়া খেলাফতের সময় (৬৬১–৭৫০ খ্রি.) উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের সেনাপতি আল–হাজ্জাজের নেতৃত্বে ৬৯২ সালে মক্কা অবরোধ করা হয়। এ সময় ছোড়া পাথরের আঘাতে পবিত্র কাবাঘর ও হাজরে আসওয়াদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পবিত্র কাবায় আগুন লাগে, আর হাজরে আসওয়াদ তিনটি টুকরা হয়ে ভেঙে যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) এই টুকরাগুলো রুপা দিয়ে বাঁধাই করেন।
পরে ৯৩০ সালে কারামাতিয়া সম্প্রদায় হাজরে আসওয়াদ লুট করে এবং পবিত্র কাবার দেয়াল থেকে পাথরটি তোলার সময় হাতুড়ির আঘাতে তা আরও কয়েকটি খণ্ডে বিভক্ত হয়। মক্কার স্বর্ণকারদের সহায়তায় পাথরের টুকরাগুলো মোম, কস্তুরি ও অম্বরের আঠালো মণ্ডে সংরক্ষণ করে রুপার ফ্রেমে বাঁধাই করা হয়। বর্তমানে এই আট টুকরা রুপালি ফ্রেমে আবদ্ধ অবস্থায় পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে স্থাপিত।
আরও পড়ুনহাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয় ০৭ মে ২০২৪তাওয়াফের নিয়ম
হাজরে আসওয়াদ থেকে মেঝেতে একটি দীর্ঘ দাগ কাটা রয়েছে, যা তাওয়াফের শুরু ও শেষের চিহ্ন। এই দাগ থেকে শুরু করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘুরে আবার একই স্থানে ফিরে এলে একটি তাওয়াফ সম্পন্ন হয়। এভাবে সাতবার তাওয়াফ করতে হয়। হাজরে আসওয়াদের পবিত্রতা ও তাৎপর্য মুসলিমদের হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির প্রতীক হিসেবে বিদ্যমান।
আরও পড়ুনহাজরে আসওয়াদ বরাবর থেকে তাওয়াফ শুরু২৭ মে ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অতি মূল্যবান ও পবিত্র হাজরে আসওয়াদ
পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে, মাতাফ থেকে প্রায় চার ফুট উচ্চতায়, রুপার ফ্রেমে বাঁধাই করা কালো রঙের আটটি ছোট পাথরের টুকরা রয়েছে। এগুলো একসময় একটি অখণ্ড পাথরের অংশ ছিল, যা বিভিন্ন ঘটনায় ভেঙে বর্তমানে আটটি খণ্ডে বিভক্ত। এই পাথর হাজরে আসওয়াদ নামে পরিচিত, যা পবিত্র কাবাঘরের একটি অতি পবিত্র ও মূল্যবান উপাদান।
হাজরে আসওয়াদের তাৎপর্য
পবিত্র কাবা শরিফের তাওয়াফ (সাত চক্কর প্রদক্ষিণ) শুরু হয় এই হাজরে আসওয়াদের অবস্থান থেকে। প্রতিটি চক্করের সময় হজযাত্রীরা এই পাথর চুম্বন করেন। ভিড়ের কারণে চুম্বন সম্ভব না হলে ইশারায় চুম্বনের নিয়মও পালন করা যায়। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি জানি এটি একটি সাধারণ পাথর, যা কারও ক্ষতি বা উপকার করতে পারে না। কিন্তু আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে এটি চুম্বন করতে দেখেছি, তাই আমিও তা করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৫৯৭)
এ কারণে মুসলিমরা হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করে বা স্পর্শ করে, রাসুল (সা.)–এর সুন্নাহ অনুসরণ করে।
পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণ ও হাজরে আসওয়াদ
রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর নবুয়ত প্রাপ্তির আগে ৬০৫ সালে তাঁর ৩৫ বছর বয়সে, কুরাইশ গোত্র পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা কাবার মেঝেসহ দেয়াল উঁচু করে ছাদযুক্ত নির্মাণের পরিকল্পনা করে। কিন্তু পবিত্র কাবাঘরের দেয়াল ভাঙার সময় সবাই ভয়ে কাঁপছিল। কারণ, পবিত্র কাবার পবিত্রতা সম্পর্কে আরবদের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধা ছিল।
কুরাইশের বিভিন্ন গোত্র পাথর সংগ্রহ করে নির্মাণকাজে অংশ নেয়। কিন্তু হাজরে আসওয়াদকে তার নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপনের সময় গোত্রগুলোর মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। প্রতিটি গোত্রই পাথরটি নিজেরা স্থাপন করতে চায়, যা তীব্র উত্তেজনা ও সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এগোয়। চার থেকে পাঁচ দিনের উত্তেজনার পর কুরাইশদের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা প্রস্তাব দেন, পরদিন সকালে যিনি প্রথম সেখানে আসবেন, তিনিই এই বিরোধের মীমাংসা করবেন।
পরদিন সকালে সবার আগে সেখানে প্রবেশ করেন হজরত মুহাম্মদ (সা.), যিনি তখনো নবুয়ত লাভ করেননি। তিনি ‘আল আমিন’ (বিশ্বস্ত) হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। কুরাইশ নেতারা তাঁর কাছে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি একটি চাদর আনতে বলেন এবং চাদরের মাঝখানে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রের প্রতিনিধিদের চাদরের কোণ ধরে পাথরটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এভাবে তিনি একটি সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়ান এবং হাজরে আসওয়াদ তার স্থানে পুনঃস্থাপিত হয়। তখনো পাথরটি অখণ্ড ছিল।
আরও পড়ুনকাবার মহিমা৩১ জানুয়ারি ২০২৩হাজরে আসওয়াদের ক্ষয়ক্ষতি
পরবর্তী সময়ে হাজরে আসওয়াদ বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উমাইয়া খেলাফতের সময় (৬৬১–৭৫০ খ্রি.) উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের সেনাপতি আল–হাজ্জাজের নেতৃত্বে ৬৯২ সালে মক্কা অবরোধ করা হয়। এ সময় ছোড়া পাথরের আঘাতে পবিত্র কাবাঘর ও হাজরে আসওয়াদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পবিত্র কাবায় আগুন লাগে, আর হাজরে আসওয়াদ তিনটি টুকরা হয়ে ভেঙে যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) এই টুকরাগুলো রুপা দিয়ে বাঁধাই করেন।
পরে ৯৩০ সালে কারামাতিয়া সম্প্রদায় হাজরে আসওয়াদ লুট করে এবং পবিত্র কাবার দেয়াল থেকে পাথরটি তোলার সময় হাতুড়ির আঘাতে তা আরও কয়েকটি খণ্ডে বিভক্ত হয়। মক্কার স্বর্ণকারদের সহায়তায় পাথরের টুকরাগুলো মোম, কস্তুরি ও অম্বরের আঠালো মণ্ডে সংরক্ষণ করে রুপার ফ্রেমে বাঁধাই করা হয়। বর্তমানে এই আট টুকরা রুপালি ফ্রেমে আবদ্ধ অবস্থায় পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে স্থাপিত।
আরও পড়ুনহাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয় ০৭ মে ২০২৪তাওয়াফের নিয়ম
হাজরে আসওয়াদ থেকে মেঝেতে একটি দীর্ঘ দাগ কাটা রয়েছে, যা তাওয়াফের শুরু ও শেষের চিহ্ন। এই দাগ থেকে শুরু করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘুরে আবার একই স্থানে ফিরে এলে একটি তাওয়াফ সম্পন্ন হয়। এভাবে সাতবার তাওয়াফ করতে হয়। হাজরে আসওয়াদের পবিত্রতা ও তাৎপর্য মুসলিমদের হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির প্রতীক হিসেবে বিদ্যমান।
আরও পড়ুনহাজরে আসওয়াদ বরাবর থেকে তাওয়াফ শুরু২৭ মে ২০২৩