বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিন থেকেই গড়ে ওঠে তাঁদের বন্ধুত্ব। পড়াশোনাও চলে একসঙ্গে। স্নাতকে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়ার পর আনন্দে চোখ ভিজে ওঠে দুজনের। পেয়েছেন বিভাগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ফল, সিজিপিএ চারের মধ্যে চার।

বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহিয়া আকতার ও ফারিহা আহমেদের কথা। ২০২০ সালে তাঁরা জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগে ভর্তি হন। এটি তুলনামূলক কঠিন বিষয় হিসেবে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের গবেষণাগার ও ল্যাবের কার্যক্রম কিংবা ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

২০০৪ সালে বিভাগটি চালু হওয়ার পর এবারই প্রথম দুই শিক্ষার্থী স্নাতকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করলেন। গত বছরের শেষ দিকে ওই বিভাগে স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৬ মার্চ তাঁদের ফলাফল প্রকাশিত হয়। পরীক্ষায় অংশ নেন ২৮ জন। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীই সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫০-এর ওপরে পেয়েছেন।

ভালো ফল নিয়ে আগে তাহিয়া আকতারের গল্পটা শোনা যাক। এই শিক্ষার্থীর বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের উত্তর হালিশহর এলাকায়। ক্যাম্পাস থেকে বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর তাহিয়া ভেবেছিলেন মেডিকেলে ভর্তি হবেন। ভর্তি পরীক্ষাও দেন। পরে নীলফামারী সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ হয়; কিন্তু এত দূরে গিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তাহিয়া আকতারের ছিল না। তাই তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তাহিয়া বলেন, ‘শুরু থেকেই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছি। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতাম। তবে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরই করোনা মহামারির প্রভাব শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকতে হয়েছে। এ সময়ে পড়াশোনা গুছিয়ে নিয়েছি।’

ভালো ফল করতে হবে, এমন জিদ ছিল তাহিয়ার। তবে সর্বোচ্চ ফল অর্জন করতে পারবেন, এমনটা তিনি ভাবেননি। এই ফলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে। তাহিয়া বলেন, ‘প্রথম বর্ষ থেকেই চার-পাঁচটি টিউশনি করতে হয়েছে। পড়া শেষ করতে কখনো কখনো রাতে তিন ঘণ্টা ঘুমানোর সময় পেয়েছি। এমনকি স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা যখন চলছিল, তখনো চারটি টিউশনি করতে হয়েছে। ২০২১ সালে বাবা অসুস্থ হয়ে যান। ফলে পড়াশোনার খরচ মেটাতে হয়েছে টিউশনির টাকা থেকেই।’

ভবিষ্যতে দক্ষ গবেষক হতে চান তাহিয়া। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি নিয়ে যেসব গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে, সেসব নিয়মিত পড়ছেন তিনি। শিখছেন গবেষণার কলাকৌশল। তাহিয়া বলেন, মানুষের কাজে আসবে, এমন গবেষণা করতে চান তিনি। ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোন জিন দায়ী, তা নির্ণয়ের লক্ষ্যে গবেষণা শুরু করেছেন।

‘জটিল বিষয়গুলো বারবার পড়েছি’

ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী ফারিহা আহমেদ। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার এই বাসিন্দাও ছোটবেলা থেকে জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তবে ভাগ্য তাঁকে নিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে।

কেন জিন প্রকৌশলে ভর্তি হলেন, এমন প্রশ্নে ফারিহা বলেন, ‘অন্য সব প্রকৌশলবিদ্যার চেয়ে জিন প্রকৌশল একটু আলাদা। কোনো যন্ত্র নয়; বরং প্রাণীর জিন নিয়েই এই বিষয়ের কাজ। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি অধ্যায়ে প্রাণীর জিন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা ছিল। সেটি আমাকে আগ্রহী করে তুলেছিল।’

ভর্তি হওয়ার পর ক্যাম্পাসে পাশে একটি মেসে ওঠেন ফারিহা। গত পাঁচ বছরে পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম তিনি চালিয়ে গেছেন সমান তালে। নিয়মিত ক্লাস করেছেন, ল্যাবের কাজও সামলেছেন। ফারিহা বলেন, ‘জিন প্রকৌশল একটু কঠিন। বিশেষ করে মেটাবলিজম নামে একটি কোর্স ছিল। অনেক বিক্রিয়া মেলাতে হতো। অত্যন্ত জটিল এই বিষয়গুলো বারবার পড়েছি। শিক্ষকেরাও বুঝতে সহযোগিতা করেছেন।’

ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর পরিবারের সবাই দারুণ খুশি। ফারিহা বলেন, ‘প্রতিটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে পড়েছি। পড়া যতক্ষণ শেষ হতো না, ততক্ষণই টেবিলে পড়ে থাকতাম। সেই পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’

ভবিষ্যতে মলিকুলার জেনেটিকস নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নিতে চান ফারিহা। রোগের প্রাথমিক স্তর শনাক্তকরণ ও কার্যকর চিকিৎসা কৌশল উন্নয়নে অবদান রাখতে চান তিনি।

দুই শিক্ষার্থীর এই ফলে খুশি বিভাগের শিক্ষকেরাও। তাঁদের গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক আদনান মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, এই দুই শিক্ষার্থী পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। পড়াশোনার বাইরেও তাঁদের বিশাল একটি জগৎ রয়েছে। সৃজনশীল হওয়ার কারণেই চমক জাগানো ফল করেছেন তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হওয় র প পর ক ষ কর ছ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের অভিযোগ ১১ নারীর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের এক তারকা ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, যৌন হয়রানি ও একাধিক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ক্যারিবীয় অঞ্চলের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ক্রিকেটারের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ক্যারিবিয়ানভিত্তিক ক্রীড়াবিষয়ক টেলিভিশন চ্যানেল স্পোর্টসম্যাক্স টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ক্রিকেটারের বাড়ি গায়ানায় এবং তিনি বর্তমানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলে খেলছেন।

অন্তত ১১ জন নারী, যাঁদের মধ্যে একজন কিশোরীও আছে, অভিযোগ করেছেন যে ওই ক্রিকেটারের মাধ্যমে তাঁদের কেউ যৌন নিপীড়ন, কেউ বিকৃত যৌনাচার আবার কেউ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়নি।

আরও পড়ুনঅনাগত সন্তানের বাবা দাবি করে সনকে ব্ল্যাকমেল, দুজন গ্রেপ্তার১৫ মে ২০২৫

স্পোর্টসম্যাক্স টিভি আরও জানিয়েছে, অভিযুক্ত ক্রিকেটারকে রক্ষা করার জন্য বেশ কয়েকবার ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলটি এ ব্যাপারে জানতে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের (সিডব্লুআই) সঙ্গেও যোগাযোগ করে।

ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি কিশোর সোয়ালো এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি

সম্পর্কিত নিবন্ধ