স্নাতকে দুই বান্ধবীর ইতিহাস গড়া ফল
Published: 13th, May 2025 GMT
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিন থেকেই গড়ে ওঠে তাঁদের বন্ধুত্ব। পড়াশোনাও চলে একসঙ্গে। স্নাতকে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়ার পর আনন্দে চোখ ভিজে ওঠে দুজনের। পেয়েছেন বিভাগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ফল, সিজিপিএ চারের মধ্যে চার।
বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহিয়া আকতার ও ফারিহা আহমেদের কথা। ২০২০ সালে তাঁরা জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগে ভর্তি হন। এটি তুলনামূলক কঠিন বিষয় হিসেবে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের গবেষণাগার ও ল্যাবের কার্যক্রম কিংবা ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
২০০৪ সালে বিভাগটি চালু হওয়ার পর এবারই প্রথম দুই শিক্ষার্থী স্নাতকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করলেন। গত বছরের শেষ দিকে ওই বিভাগে স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৬ মার্চ তাঁদের ফলাফল প্রকাশিত হয়। পরীক্ষায় অংশ নেন ২৮ জন। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীই সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫০-এর ওপরে পেয়েছেন।
ভালো ফল নিয়ে আগে তাহিয়া আকতারের গল্পটা শোনা যাক। এই শিক্ষার্থীর বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের উত্তর হালিশহর এলাকায়। ক্যাম্পাস থেকে বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর তাহিয়া ভেবেছিলেন মেডিকেলে ভর্তি হবেন। ভর্তি পরীক্ষাও দেন। পরে নীলফামারী সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ হয়; কিন্তু এত দূরে গিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তাহিয়া আকতারের ছিল না। তাই তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তাহিয়া বলেন, ‘শুরু থেকেই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছি। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতাম। তবে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরই করোনা মহামারির প্রভাব শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকতে হয়েছে। এ সময়ে পড়াশোনা গুছিয়ে নিয়েছি।’
ভালো ফল করতে হবে, এমন জিদ ছিল তাহিয়ার। তবে সর্বোচ্চ ফল অর্জন করতে পারবেন, এমনটা তিনি ভাবেননি। এই ফলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে। তাহিয়া বলেন, ‘প্রথম বর্ষ থেকেই চার-পাঁচটি টিউশনি করতে হয়েছে। পড়া শেষ করতে কখনো কখনো রাতে তিন ঘণ্টা ঘুমানোর সময় পেয়েছি। এমনকি স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা যখন চলছিল, তখনো চারটি টিউশনি করতে হয়েছে। ২০২১ সালে বাবা অসুস্থ হয়ে যান। ফলে পড়াশোনার খরচ মেটাতে হয়েছে টিউশনির টাকা থেকেই।’
ভবিষ্যতে দক্ষ গবেষক হতে চান তাহিয়া। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি নিয়ে যেসব গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে, সেসব নিয়মিত পড়ছেন তিনি। শিখছেন গবেষণার কলাকৌশল। তাহিয়া বলেন, মানুষের কাজে আসবে, এমন গবেষণা করতে চান তিনি। ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোন জিন দায়ী, তা নির্ণয়ের লক্ষ্যে গবেষণা শুরু করেছেন।
‘জটিল বিষয়গুলো বারবার পড়েছি’ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী ফারিহা আহমেদ। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার এই বাসিন্দাও ছোটবেলা থেকে জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তবে ভাগ্য তাঁকে নিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে।
কেন জিন প্রকৌশলে ভর্তি হলেন, এমন প্রশ্নে ফারিহা বলেন, ‘অন্য সব প্রকৌশলবিদ্যার চেয়ে জিন প্রকৌশল একটু আলাদা। কোনো যন্ত্র নয়; বরং প্রাণীর জিন নিয়েই এই বিষয়ের কাজ। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি অধ্যায়ে প্রাণীর জিন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা ছিল। সেটি আমাকে আগ্রহী করে তুলেছিল।’
ভর্তি হওয়ার পর ক্যাম্পাসে পাশে একটি মেসে ওঠেন ফারিহা। গত পাঁচ বছরে পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম তিনি চালিয়ে গেছেন সমান তালে। নিয়মিত ক্লাস করেছেন, ল্যাবের কাজও সামলেছেন। ফারিহা বলেন, ‘জিন প্রকৌশল একটু কঠিন। বিশেষ করে মেটাবলিজম নামে একটি কোর্স ছিল। অনেক বিক্রিয়া মেলাতে হতো। অত্যন্ত জটিল এই বিষয়গুলো বারবার পড়েছি। শিক্ষকেরাও বুঝতে সহযোগিতা করেছেন।’
ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর পরিবারের সবাই দারুণ খুশি। ফারিহা বলেন, ‘প্রতিটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে পড়েছি। পড়া যতক্ষণ শেষ হতো না, ততক্ষণই টেবিলে পড়ে থাকতাম। সেই পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’
ভবিষ্যতে মলিকুলার জেনেটিকস নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নিতে চান ফারিহা। রোগের প্রাথমিক স্তর শনাক্তকরণ ও কার্যকর চিকিৎসা কৌশল উন্নয়নে অবদান রাখতে চান তিনি।
দুই শিক্ষার্থীর এই ফলে খুশি বিভাগের শিক্ষকেরাও। তাঁদের গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক আদনান মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, এই দুই শিক্ষার্থী পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। পড়াশোনার বাইরেও তাঁদের বিশাল একটি জগৎ রয়েছে। সৃজনশীল হওয়ার কারণেই চমক জাগানো ফল করেছেন তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হওয় র প পর ক ষ কর ছ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী আর নেই
উপমহাদেশে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী আর নেই।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় রাজশাহী মহানগরীর রানীবাজার এলাকার নিজ বাসভবন ‘মোহিনী নিকেতন’-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
অমরেশ রায় চৌধুরী বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রাজশাহীর পঞ্চবটি শ্মশানে তাকে দাহ করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
১৯২৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার চৌদ্দরশি গ্রামে সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অমরেশ রায় চৌধুরী। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন তার মা রাজলক্ষ্মী রায় চৌধুরীর আগ্রহে উপমহাদেশের প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার ফরিদপুরের সুধীর লাল চক্রবর্তীর কাছে তার প্রথম হাতেখড়ি হয়। গুরু সুধীর লালের মৃত্যুর পর তিনি সিরাজগঞ্জের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতবিদ হরিহর শুক্লার কাছে কয়েক বছর তালিম নেন।
পরবর্তীতে ফরিদপুরের কোটালীপাড়ার সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তীর কাছে ধ্রুপদ, খেয়াল ও ঠুমরিতে দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নেন। নেত্রকোনার বিশিষ্ট শিল্পী ও সুরকার নিখিলচন্দ্র সেনের কাছে আধুনিক, রাগপ্রধান, অতুলপ্রসাদী, নজরুল সঙ্গীত ও শ্যামা সঙ্গীত শেখেন। পরবর্তীতে সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তীর ছেলে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী মানস চক্রবর্তীর কাছেও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নেন অমরেশ রায় চৌধুরী।
১৯৪৫ সালে বাইশরশি শিবসুন্দরী একাডেমি থেকে ম্যাট্রিক পাসের পর উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি নিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গীত চর্চা চালিয়ে যান অমরেশ রায় চৌধুরী। ছোটবেলা থেকেই রাগসঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল তার।
১৯৬১ সাল থেকে রাজশাহী মহানগরীর রানীবাজার এলাকায় ‘মোহিনী নিকেতন’-এ বাস করতেন অমরেশ রায় চৌধুরী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদক এবং ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
ঢাকা/কেয়া/রফিক