আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার রাতের পর আজ মঙ্গলবারও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ‘প্রহসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ শীর্ষক কর্মসূচিতে অংশ নিতে কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১২টার পর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘হামলা-মামলা-বহিষ্কার, মানি না, মানব না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভ শেষে কয়েকজন শিক্ষার্থী উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো বিচার হয়নি। ওই সময় আন্দোলনের অংশ হিসেবে যেসব শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল, পরে তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর একই শিক্ষার্থীদের আবার শোকজ করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে ‘প্রহসন’ বলে মনে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, কেবল তাঁদেরই কারণ দর্শানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জবাব দেওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রমাণ দিতে পারলে শাস্তি হবে না, না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। আমরা অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।’

এদিকে ৫ মে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অপ্রত্যাশিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। শিক্ষকদের দেওয়া সেই সাত কর্মদিবসের সময়সীমা ১৫ মে শেষ হবে।

উল্লেখ্য, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্য পদত্যাগ করেন। এরপর ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রহসনের নির্বাচনে অনিয়মে আরও যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদেরকে আমরা খুঁজছি: রাষ্ট্রপক্ষ

চার দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘দিনের ভোট রাতে করার’ অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাঁকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, ওই প্রহসনের নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে আর যাঁরা যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে খুঁজছেন তাঁরা। এ সম্পর্কিত তথ্য উদঘাটনের জন্য নূরুল হুদাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে এক বিএনপি নেতার করা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার দুপুরে সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। নতুন করে তাঁর আরও ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার। তাঁর সঙ্গে আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তাঁদের বক্তব্যে ২০১৮ সালের নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ও অনিয়মের কথা উঠে আসে। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত ছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য আরও তথ্য প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে করে নূরুল হুদাকে সিএমএম আদালতে আনা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা হাজতখানায় রাখার পর নূরুল হুদাকে হাজতখানা থেকে বের করে আনে পুলিশ। তখন দেখা যায়, নূরুল হুদার মাথায় পুলিশের হেলমেট। তার দুই হাত পেছনে, দুই হাতেই হাতকড়া। মাথা নিচু করে নূরুল হুদাকে হাজতখানার ফটক থেকে আদালতের লিফটের কাছে আনা হয়। পরে তাঁকে লিফটে করে সিএমএম আদালতের নবম তলায় এজলাস কক্ষে নেওয়া হয়। তখন সময় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট।

কাঠগড়ায় তোলার পর নূরুল হুদা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন পুলিশের একজন কনস্টেবল তাঁর দুই হাত পিছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হাতকড়া খুলে দেন। এরপর মাথার হেলমেটটিও খুলে দেন। তখন নূরুল হুদা কাঠগড়ার লোহার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এ সময় নূরুল হুদার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম তাঁর কাছে এগিয়ে যান। তিনি কথা বলতে থাকেন। এর ১০ মিনিট পর বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জুনাইদ এজলাসে আসেন।

এ সময় সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সরকার নূরুল হুদাকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে পাঁচটি কারণ একে একে তুলে ধরতে শুরু করেন।

রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যেসব যুক্তি দিল পুলিশ

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামসুজ্জোহা আদালতকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর নূরুল হুদাকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে করার নির্বাচনের অভিযোগসহ মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে নূরুল হুদা অনেক তথ্য দিয়েছেন। নূরুল হুদার দেওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য তাঁকে আবারও দশ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘নূরুল হুদা যেসব তথ্য দিয়েছেন সেসব তথ্য নথি সংক্রান্ত বিষয়। মামলার তদন্তের স্বার্থে এসব নতি উদ্ধার করা একান্ত প্রয়োজন। নথি উদ্ধার করার জন্য তাঁকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালে একটি পাতানো নির্বাচন হয়। এটি ছিল দাপ্তরিক সংঘবদ্ধ অপরাধ। নূরুল হুদার নির্দেশে অন্যান্য অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে তখন একটি পাতানো জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হয়েছে, সেই রহস্য উৎঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া দরকার।’

পুলিশ কর্মকর্তা শামসুজ্জোহা বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটন করা জরুরি। এজন্যই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রহসনের নির্বাচনে অনিয়মে আরও যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদেরকে আমরা খুঁজছি: রাষ্ট্রপক্ষ
  • সাবেক সিইসি নূরুল হুদাকে আবার রিমান্ডে চায় পুলিশ
  • ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে: আদালতে হাবিবুল আউয়াল
  • এবার ৩ দিনের রিমান্ডে সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল
  • ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে, আদালতে স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল
  • সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে
  • সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ, হাবিবুল আউয়ালের ১০ দিন রিমান্ড চায় পুলিশ