রোজ এক কাপ চানা বুট খেলে কী হয়, জানেন?
Published: 15th, May 2025 GMT
চানা বুট বেশ স্বাস্থ্যকর খাবার। কোনো এক বেলার স্ন্যাকস তো বটেই, রাতের খাবারের বিকল্পও হতে পারে এক কাপ চানা বুট। চানা বুটে আছে আমিষ, শর্করা এবং দেহের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ উপাদান। আরও আছে পর্যাপ্ত আঁশ। এ সম্পর্কে জানালেন টাঙ্গাইলের সরকারি কুমুদিনী কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান।
ওজন নিয়ন্ত্রণপর্যাপ্ত আঁশ ও আমিষ থাকায় চানা বুট খেলে আপনার সহজে ক্ষুধা লাগবে না। আবার এতে শর্করাও পাবেন। অর্থাৎ কর্মক্ষম ও সতেজ থাকার জন্য আপনি পর্যাপ্ত ক্যালরিও পাবেন তা থেকে। বুঝতেই পারছেন, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে রোজ চানা বুট খেতে পারেন। এভাবে ওজন কমানো সহজ হবে।
আঁশের উপকার এখানেই শেষ নয়পর্যাপ্ত আঁশ গ্রহণ করলে কোষ্টকাঠিন্য এড়ানো সহজ। রক্তের খারাপ চর্বি কমাতেও কাজে আসে এই আঁশ। তা ছাড়া আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে হুট করে রক্তের সুগার বেড়ে যায় না, যেমনটা বাড়ে সাদা ভাত খেলে। চানা বুটের মতো আঁশযুক্ত খাবার খেলে রক্তের সুগার বাড়ে ধীরে ধীরে, স্বাস্থ্যকরভাবে।
আরও পড়ুনকী খেলে আঁশ পাবেন২০ জানুয়ারি ২০১৭খনিজ উপাদানের উপকার অনেকচানা বুটে আছে ম্যাঙ্গানিজ, কপার, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়াম। চুল ও ত্বক সতেজ রাখার জন্য তো বটেই, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য এসব উপাদান আমাদের প্রয়োজন রোজ। এসবের মধ্যে জিংক ও সেলেনিয়াম অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। তার মানে তারুণ্য ধরে রাখতেও কাজে আসে এসব উপাদান। তা ছাড়া চানা বুটে আরও আছে সামান্য পটাশিয়াম ও আয়রন। তবে এই আয়রন দেহের কাজে লাগানোর জন্য এর সঙ্গে চাই ভিটামিন সি। অর্থাৎ টক ফল বা ফলের রসের সঙ্গে খেলে তবেই এই আয়রন কাজে লাগবে। হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতার জন্য সঠিক মাত্রায় পটাশিয়াম জরুরি। আয়রন রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক। তবে কেবল এক কাপ চানা বুটের আয়রনের ওপর নির্ভর করে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
বিকল্প আমিষচানা বুটে যে আমিষ থাকে, তা দেহের আমিষের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। তবে এটি উদ্ভিজ্জ আমিষ হওয়ায় একে দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, উদ্ভিজ্জ আমিষে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে না। সুস্থ থাকতে সারা দিনে চানা বুটের পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকেও আমিষ গ্রহণ করতে হবে। আপনি চাইলে এক কাপ চানা বুটের সঙ্গে একটা সেদ্ধ ডিম কুচি করে যোগ করে নিতে পারেন। ডিম প্রাণিজ আমিষ বলে তা প্রথম শ্রেণির আমিষ। অর্থাৎ এতে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব কটি অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে। চানা বুটে যে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলো নেই, সেসবের ঘাটতি মেটানো যায় এভাবে। অর্থাৎ চানা বুটের সঙ্গে ডিম যোগ করলে আমিষের মোট পরিমাণও বাড়ে, আবার আমিষের গুণগত মানও বাড়ে।
আরও পড়ুনঘন নাকি পাতলা ডাল, কোনটি বেশি উপকারী?১৪ অক্টোবর ২০২৪খেয়াল রাখুনচানা বুটে টক ফলের রস যোগ করলে আপনি ভিটামিন সির উপকারও পাবেন।
কাঁচা সবজি যোগ করলে পাবেন ভিটামিন বি।
চানা বুট সেদ্ধ করে খাওয়াই ভালো। তেল যোগ করা হলে ক্যালরির মাত্রা বেড়ে যাবে। তাতে ওজন নিয়ন্ত্রণ বাধাগ্রস্ত হবে।
আরও পড়ুনকোন ছোলা বেশি উপকারী—রান্না নাকি কাঁচা?১৮ মার্চ ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ক প চ ন পর য প ত র আম ষ য গ কর অর থ ৎ র জন য উপ দ ন উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুস্বাস্থ্যের জন্য কৈশোরে সঠিক পুষ্টি
কিশোরকালে শরীর ও মনের দ্রুত বৃদ্ধি ও পরিবর্তন ঘটে। শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি, হাড় ও পেশির গঠন, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নয়ন ও হরমোনের ভারসাম্য স্থাপিত হতে থাকে। তাই এই বয়সে পুষ্টিহীনতা শুধু সাময়িক দুর্বলতা নয়, বরং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ও জীবনমানকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করে।
সঠিক পুষ্টি না পেলে যা হয়ওজন-উচ্চতা দ্রুত বাড়ে বলে কিশোরকালে পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে পেশি ঠিকভাবে গড়ে ওঠে না, হাড়ের ঘনত্ব কমে, উচ্চতা কাঙ্ক্ষিত হয় না, সহজে ক্লান্তি লাগে। ফলে প্রাপ্ত বয়সে শরীর হয় দুর্বল ও সক্ষমতাও কমে যায়।
কিশোরকালে বিশেষ করে কিশোরীদের ক্ষেত্রে আয়রনের ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়। এ থেকে রক্তস্বল্পতা, মাথা ঘোরা, মনোযোগ কমে যাওয়া, শারীরিক পরিশ্রমে অসুবিধা, ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এটি পড়াশোনা ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
কৈশোরে মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও একাগ্রতার দক্ষতা তৈরি করে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি হলে শেখার ক্ষমতা কমে, স্মৃতিশক্তি দুর্বল, মানসিক চাপ সহ্যের ক্ষমতা কমে। এভাবে পুষ্টিহীনতা ধীরে ধীরে শিক্ষাগত অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে।
একজন কিশোরী অপুষ্টির শিকার হলে সে ভবিষ্যতে মা হলে তার গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়, জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হতে পারে। এ ছাড়া মা অপুষ্টিতে থাকলে শিশুর মধ্যেও অপুষ্টির ঝুঁকি থেকে যায়। একইভাবে অপুষ্টি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে, যাকে বলা হয় ‘অপুষ্টির দুষ্টচক্র’।
যেসব খাবার খেতে হবেশর্করার উৎস হিসেবে আছাঁটা চাল, গোটা গমের আটা, লাল চিড়া ও ওটস রাখা উচিত। নন-স্টার্চি সবজি যেমন শাকপাতা, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, করলা, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, গাজর ও মুলা ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস।
আমিষের জন্য দুধ, টকদই, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল ও শিমজাত খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি পাওয়া যায় দুধ, দই, পনির, ছোট মাছ, কচুশাক, শজনেপাতা, কুমড়ার বীজ ও রোদে হালকা হাঁটাহাঁটি থেকে। জিংকের জন্য মাংস, মাছ, ডাল ও কুমড়ার বীজ উপকারী।
আয়োডিনের জন্য দুধ, দই, ডিম, চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। আয়রনের চাহিদা পূরণে মাছ, মাংস, ডিম, কচুশাক, পুঁইশাক, তরমুজ, জাম, খেজুর, পাকা তেঁতুল ভালো। ভিটামিন সি পাওয়া যায় পেয়ারা, আমড়া, আমলকী, লেবু, জলপাই, জামরুল, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদিতে।
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, বাইরের অস্বাস্থ্যকর ভাজা-পোড়া খাবার, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও লবণাক্ত খাবার, সফট ড্রিংক পরিত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি পরিমিত মাত্রায় খাবার খাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ কৈশোরকালীন স্থূলতার জন্য দায়ী।
মো. নাহিদ নেওয়াজ, টেকনিক্যাল অফিসার, নিউট্রিশন, হীড বাংলাদেশ