মাহফুজ আলম কি টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন
Published: 15th, May 2025 GMT
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গতকাল বুধবার আক্রান্ত হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে তাঁর মাথার ওপর পানির বোতল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা জরুরি।
সম্প্রতি ফেসবুকে মাহফুজ আলমের এক পোস্টকে ঘিরে নানা রকম বাদানুবাদ চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে জীবননাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। গতকালের ঘটনা প্রমাণ করছে, মাহফুজ আলম টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। অনেকের ধারণা পাবলিক পরিসরে তাঁর জীবনঝুঁকি বাড়ছে।
মাহফুজ আলমকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। তাঁকে ক্লেদের ভান্ডার বানানো হচ্ছে। মাহফুজ আলম গণ-অভ্যুত্থানের একজন অগ্রগামী চিন্তক। জুলাই–পরবর্তী সময়ে তিনিসহ আরও অনেকে ‘অন্তর্ভুক্তি’র কথা বলছেন। বিভিন্ন মত ও পথ মিলিয়ে অভিন্ন নিশানা নির্মাণ করতে চান। তাঁর এ চিন্তা ও প্রকাশ মূলত তাঁকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। অনেকে তাঁকে গ্রহণ করতে পারছেন না।
যদিও অন্তর্ভুক্তি বা সমন্বয়বাদী চিন্তা নতুন কিছু নয়। অনেক গুণীজন এ বিষয়ে কাজ করেছেন। ক্ষীতিমোহন সেনের ভারতে হিন্দু-মুসলমানদের যুক্ত সাধনা, ইতিহাসবিদ ড.
এ ধারায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অসীম রায়ের দ্য ইসলামিক সিনক্রেটিস্টিক ট্র্যাডিশন ইন বেঙ্গল। বাঙালির সমন্বয়বাদী চিন্তা বুঝতে এগুলো আকরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। সমন্বয় ছাড়া অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়। বাঙালি রক্তে সংকর, চেতনায় যৌগিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘হে মোর চিত্ত, পুণ্য তীর্থে’ কবিতায় লিখেছেন—‘হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন/শক-হুন-দল পাঠান মোগল এক দেহে হল লীন’।
বাঙালির চিন্তার ইতিহাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মানুষ। একসময় এ অঞ্চলের মানুষ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা ও যূথবদ্ধ জীবনের বাসিন্দা ছিলেন। এতে পেরেক ঠুকেছে ব্রিটিশ। ধর্মের নামে বিভক্তি মনুষ্যত্ববোধকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি বসবাসের যোগ্যতা হারিয়েছে। ঘৃণা, আর পারস্পরিক অশ্রদ্ধার চাষ চলেছে। হাজারও অদেখা দেয়াল নির্মিত হয়েছে। অচলায়তন ভিত শক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনহাসিনার পতন নিয়েই কি খুশি থাকতে হবে১৫ জানুয়ারি ২০২৫কাজের কথা হলো, সমন্বয়বাদী বা অন্তর্ভুক্তিমূলক চিন্তার বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ অনেকাংশে এগিয়ে আছে, যা কেবল রাজনৈতিকভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ব্যাপার। এ জন্য দরকার দূঢ় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকারের অনুপস্থিতি ছিল দীর্ঘকাল। জুলাই গণ–অভ্যুত্থান এক আশাজাগানিয়া ব্যাপার। এ আন্দোলনে সর্বজনের অংশগ্রহণ ছিল। মূল বিষয় ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম পরে সেখানে যুক্ত করেছেন ‘অন্তর্ভুক্তি’ পদবাচ্যটি।
সম্প্রতি তিনি বলছেন, সবার জন্য দেশ। তাঁর এ প্রস্তাবনায় রাষ্ট্র বোঝার আধুনিক মনোভঙ্গি পাওয়া যায়। রাষ্ট্র মানুষের এক বড় সৃষ্টি। রাষ্ট্র যে সবার, সেই স্পষ্টতাও খুব জরুরি; আরও জরুরি রাষ্ট্র একটি পার্থিব বা ইহজাতিক প্রতিষ্ঠান, তা বোঝা।
রাষ্ট্র এজমালি সম্পত্তি। এর ওপর কোনো দল, মত বা আদর্শের পোশাক পরানো অন্যায্য। এ জন্য মাহফুজ আলম বাইনারি ভাঙতে চেয়েছেন—বাম-ডান, ধর্মনিরপেক্ষতা-ধর্মপ্রবণতা, বাঙালি-বাংলাদেশি। একাত্তর ও চব্বিশের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষার মিশেলে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির পাটাতন স্থির করতে চান।
এনসিপি যেন মেঘনা নদীর মোহনা, এখানে অনেকগুলো স্রোত, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি এসে মিশেছে। এনসিপির কাছ থেকে রাষ্ট্র বিনির্মাণে গণপরিষদ নির্বাচন, সংবিধান পুনর্লিখন, বিচার ও নির্বাচন—এই দাবিগুলো মোটাদাগে অগ্রগণ্য। জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে আছে সংস্কার এজেন্ডা। কিন্তু কেন জানি মানুষ কোনো কিছু নিয়ে স্পষ্ট হতে পারছে না, আস্থা পাচ্ছে না। সংশয় ও সন্দেহ যেন কাটছেই না।কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ সমাজের পরতে পরতে গড়ে উঠেছে, আদর্শিক ও মতাদর্শিক বিভক্তি, যা ইট-সিমেন্টের মতোই শক্ত। অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণে একদল বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রতিশ্রুতিশীল সঙ্গী পাওয়া সহজ কাজ নয়। ফলে মনে হতে পারে মাহফুজ আলমের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা, বোঝাপড়া ও রাজনৈতিক দর্শন তাঁকে নিঃসঙ্গতার দিকে নিয়ে যাবে, তিনি হয়তো সংকটে পড়বেন।
এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আদর্শকেন্দ্রিক অনড় ও অনমনীয় বিশ্বাস। তথাকথিত আদর্শভিত্তিক শ্রেষ্ঠত্বের বোধ। এমন সমাজ কেবল বড় আদর্শ বা সংখ্যা দেখে নয়, ছোট আদর্শ ও সংখ্যা দেখেও ভয় পায়। ছোট সংখ্যা বড়দের মধ্যে নানা ধরনের অস্বস্তি তৈরি করে। বড়রা এভাবে ছোটদের দ্বারা তাড়িত হচ্ছে। এ বড়করণ প্রক্রিয়ার নাম প্রান্তিকীকরণ।
আরেকটি প্রবণতা হলো আলাদাকরণ। আওয়ামী, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, ডান-বাম, সমতল-পাহাড়, হিন্দু-মুসলিম। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক সূচকগুলো বিবেচনায় নিয়ে এ সমাজে আলাদাকরণ প্রক্রিয়া তীব্রতর হয়েছে। এ আলাদাকরণ আজ বাস্তবতা। এই প্রান্তিকীকরণ ও আলাদাকরণের মূলে পেরেক ঠুকতে চান মাহফুজ আলম। তাঁর এ আকাঙ্ক্ষা খুব স্পষ্ট হয় মূলত ‘অন্তর্ভুক্তি’র ব্যাকরণে।
আরও পড়ুনরাজনৈতিক বন্দোবস্তের আলোচনায় জনগণ নেই ০৬ এপ্রিল ২০২৫কিন্তু মাহফুজ আলমের এ সচেতন পছন্দ আবার সংশয় জাগায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণে তাঁর অবস্থান দেখে। নিষিদ্ধকরণ কোনো ভালো পদক্ষেপ নয়। উন্নত আদর্শ দিয়ে মন্দ আদর্শকে পরাজিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ কেবল নেতাসর্বস্ব রাজনৈতিক দল নয়, এর রয়েছে কয়েক কোটি সমর্থক। একজন কৃষক, একজন শ্রমিক, মুটে-মজুরের রাজনৈতিক পছন্দ নিষিদ্ধকরণের অধিকার কে রাখেন?
ডেনমার্কের রাস্কিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যানঞ্জেলা কে. বুনো তাঁর ডেমোক্রেটিক ডিলিমাস: হোয়াই ডেমোক্রেসিস ব্যান পলিটিক্যাল পার্টিজ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা একটি উদ্বেগজনক কাজ। এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠিত হওয়া এবং বহুত্ববাদ ও সহনশীল ধারণার সঙ্গে সংঘাত তৈরি করে। যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু নির্বিচারে বন্ধ নয়। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ওপর জাতিসংঘ প্রণীত প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছিল।
আপাত মনে হতে পারে, মাহফুজ আলমের সতীর্থ ও সহযোগীরা অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বুকে ধারণ করেন। কিন্তু তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টানা অত সহজ নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শন ধারণ করছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। যমুনার সামনে ও শাহবাগে সম্প্রতি সমাবেশে অংশগ্রহণকারীর ধরন ও স্লোগান সেই প্রশ্ন জোরালো করে তুলছে।
এনসিপি যেন মেঘনা নদীর মোহনা, এখানে অনেকগুলো স্রোত, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি এসে মিশেছে। এনসিপির কাছ থেকে রাষ্ট্র বিনির্মাণে গণপরিষদ নির্বাচন, সংবিধান পুনর্লিখন, বিচার ও নির্বাচন—এই দাবিগুলো মোটাদাগে অগ্রগণ্য। জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে আছে সংস্কার এজেন্ডা। কিন্তু কেন জানি মানুষ কোনো কিছু নিয়ে স্পষ্ট হতে পারছে না, আস্থা পাচ্ছে না। সংশয় ও সন্দেহ যেন কাটছেই না।
একটি অস্বাভাবিক রাষ্ট্রকে স্বাভাবিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে কত দিন লাগবে, তা–ও বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন তাত্ত্বিক কাঠামো দাঁড় করানো জরুরি কাজ—এই আলাপ খুব এগোচ্ছে বলে মনে হয় না। জনগণ দেখছে, পতিত শেখ হাসিনা সরকারকে নিয়ত তাড়া করতে এনসিপির নেতাদের বড় সময় পার হয়ে যাচ্ছে।
এনসিপি একটি কথক ও গলাসর্বস্ব শ্রেণি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের প্রকাশের ক্ষুধা তীব্র। ইয়াভেল নোয়া হারারি তাঁর নেক্সাস গ্রন্থে উপযুক্ত বাক্যটি ব্যবহার করেছিলেন যা হলো, ‘সব সামাজিক মিথস্ক্রিয়া হলো ক্ষমতার সংগ্রাম। কারণ, মানুষ কেবল ক্ষমতার ব্যাপারে আগ্রহী।’ এনসিপির নেতাদের মধ্যে রাত জেগে টক শোতে অংশ নেওয়া এবং ফেসবুকনির্ভর প্রকাশের প্রাবল্য দেখা যাচ্ছে। মাহফুজ আলম গণ-অভ্যুত্থানকে ঘিরে চিন্তার অন্যতম প্রধান আঁধার হয়ে উঠেছিলেন। এখন তাঁর চিন্তাধারা এনসিপির চিন্তার সঙ্গে কতটা মিলছে, তা পরিষ্কার নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ঘিরে এক অযৌক্তিক কর্তৃত্বের বিকাশ ঘটেছে। ট্র্যাডিশনাল বুদ্ধিজীবীরা আড়ালে চলে যাচ্ছেন। ফেসবুক ও ইউটিউবকেন্দ্রিক নতুন ইনফ্লুয়েন্সার শ্রেণির উত্থান দেখা যাচ্ছে। এ শ্রেণি হলো আনসেন্সর ও আনএডিডেট, সেলফ রেগুলেটেড কর্তৃত্ব। তারা সত্য-অসত্যের মিশেলে ভাষ্য ও বয়ান হাজির করছে। তারাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেন্দ্রিক নতুন সামান্তপ্রভূ। তাদের অনেক প্রজা। অসত্য, ঘৃণা আর ক্লেদ তাদের কাঁচামাল।
উত্তর-সত্য পরিস্থিতে দুনিয়াজুড়ে এক নতুন কথোপজীবী গড়ে উঠেছে। লি ম্যাকেনটায়ার তাঁর পোস্ট ট্রুথ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, উত্তর-সত্য দুনিয়ায় মানুষ কঠিন সত্যের তুলনায় স্বস্তিদায়ক মিথ্যা শুনতে পছন্দ করে। নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রোসা উল্লেখ করেছেন, সত্যের তুলনায় অসত্য দৌড়ায় ছয় গুণ দ্রুতগতিতে। অসত্যের বাজার ছোট নয়। যোগাযোগমাধ্যমকেন্দ্রিক ব্যক্তি কর্তৃত্ববাদ নতুন প্রবণতা। কারণ, এখন সবার নিজস্ব সত্য তৈরি হয়েছে, আপাত মনে হচ্ছে সাধারণ কোনো সত্য নেই।
মাহফুজ আলম যে সাধারণ সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন, তা ব্যক্তির একান্ত সত্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় ‘অন্তর্ভুক্তি’র সিমেন্টিং সহজ নয়।
একসময় সতীর্থরা মাহফুজ আলমের কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক আশ্রয় পেয়েছিলেন। পটপরিবর্তনের পর তাঁরা যে সেই ছায়ার নিচে আছেন, এমনটি পুরোপুরি বলা যাচ্ছে না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুতি আর অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণে সবার সমর্থন পাওয়া এক বিষয়। কারণ, শেখ হাসিনার পতনের পর অনেকে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন। গণ-অভ্যুত্থানের অভিন্ন স্পিরিট সর্বজনীন স্পিরিটে দানা বাঁধছে না।
মাহফুজ আলম যে নিঃসঙ্গ হয়ে যেতে পারেন, তাঁর কিছু উপলক্ষ্য দেখা যাচ্ছে। মাহফুজ আলমকে ঘিরে প্রত্যাখ্যানের পরিধি বাড়ছে। তাঁর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। তাঁকে প্রত্যাখ্যান কেবল প্রকাশে নেই, অ্যাকশনের দিকে টার্ন করছে। যে মানুষদের ভেতর থেকে মাহফুজ আলম বেরিয়ে এলেন, কেবল সেই মানুষেরাই পারে তাঁর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে। সংকট যত গভীর হোক, পিছপা হওয়া যাবে না। অন্তর্ভুক্তির পথেই তাঁকে হাঁটতে হবে। মানবিক, জনকল্যাণমূলক ও কার্যকর রাষ্ট্র বিনির্মাণে ‘অন্তর্ভুক্তি’ দর্শন ছাড়া উন্নত কোনো বিকল্প দেখি না।
খান মো. রবিউল আলম: যোগাযোগ পেশাজীবী ও শিক্ষক
* মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম জ ক য গ য গম ধ র জন ত ক জন ত ক দ এনস প র কর ছ ন গ রন থ প রক শ ত হয় ছ আদর শ ক ষমত অসত য
এছাড়াও পড়ুন:
মহালছড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, ৩২ হাজার মানুষের ভোগান্তি
খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে মহালছড়ি-সিঙ্গিনালা সড়কের কাপ্তাই পাড়া সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী মহালছড়ির মুবাছড়ি ইউনিয়ন, রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার করল্যাছড়ি, সেলোন্যা, সাবেক্ষংসহ ৩০টি গ্রামের প্রায় ৩২ হাজার মানুষ।
মহালছড়ি-সিঙ্গিনালা সড়কের কাপ্তাই পাড়া সেতুটি ছোট হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ছোট্ট সেতুটিই উপজেলা সদরের সাথে একটি পুরো ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ার পাশাপাশি এর দুই পাশের সংযোগ সড়কের দেয়াল ধসে মাটি সরে গেছে। এতে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটি।
চলাচলের জন্য এ এলাকায় একটি বাইপাস সড়ক তৈরি করেছে এলজিইডি। তবে কাপ্তাই লেকের পানিতে সেটি ডুবে গেছে। বর্তমানে এই সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে কোনোমতে চলাচল করছেন এলাকাবাসী। তবে কোনো পণ্য বহন করতে পারছেন না। অথচ এই সেতু দিয়েই প্রায় ৩২ হাজার মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় নানা পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়।
করল্যাছড়ি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক কুন্ডল চাকমা, সিঙ্গিনালা মেশিন পাড়া নিবাসী বেতছড়ি জেনারেল ওসমানী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুগত চাকমা ও মনাটকে গ্রামের বাসিন্দা ভবদত্ত চাকমা জানান, এই সেতুটি ছোট হলেও জন গুরুত্বপূর্ণ। সড়কের দুই পাশের ধারক দেয়াল ধসে পড়ে মাটি সরে গেছে। এতে সেতু দিয়ে চলাচল ঝুঁকিতে পড়েছে। কোনোমতে সেতুর দুই পাশের কাঠের উপর দিয়ে চলাচলের কাজ চলছে। তবে পণ্য আনা-নেওয়া করা সম্ভব হচ্ছে না।
তারা জানান, রোগী নিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এলজিইডি থেকে একটি বাইপাস সড়ক তৈরি করে দিয়েছে। তবে তা এখন কাপ্তাই বাঁধের পানির নিচে ডুবে রয়েছে। দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি জানান তারা।
সেতুটি দীর্ঘ ৪০ বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে করা হয়েছিল। বিগত দুই বছরের অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের দেয়াল ভেঙে মাটি সরে যায়। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেটি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুইতি কারবারী বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে বহু লোকের আসা যাওয়া। সেতুটি নতুন করে নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।”
খাগড়াছড়ির স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমা বলেন, “পরপর দুই বছরের বন্যায় দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে গিয়ে সেতুটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি অনেক পুরানো সেতু। তড়িঘড়ি করে ডিজাইন করতে গিয়ে ডিজাইনে কিছু ত্রুটি ছিল। এ কারণে নতুন করে সেতু নির্মাণে দেরি হয়ে গেছে। ডিজাইন ফাইনাল হয়ে গেছে, এখন টেন্ডারে যাবে।”
ঢাকা/রূপায়ন/এস