কেফিয়াহ (ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী রুমাল) ও তরমুজের ছবি—এই দুটি ইহুদিবিদ্বেষের প্রতীক। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি প্রশিক্ষণে এমন কথা বলা হয়েছে। প্রশিক্ষণটির আয়োজক ছিল ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সংগঠন। ‘জুইশ কারেন্টস’ নামের একটি মার্কিন সাময়িকীর হাতে এ প্রশিক্ষণের বিস্তারিত তথ্য এসেছে। তারা এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

প্রশিক্ষণে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার নিয়ে চিন্তা করাকেও ইহুদিবিদ্বেষ হিসেব চিত্রিত করা হয়েছে। এমনকি কখনো কখনো ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকেও ইহুদিবিদ্বেষ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।ডোভ কেন্ট, ডায়াসপোরা অ্যালায়েন্সের জ্যেষ্ঠ পরিচালক

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ‘ডায়াসপোরা অ্যালায়েন্স’–এর জ্যেষ্ঠ পরিচালক ডোভ কেন্ট জুইশ কারেন্টসকে বলেন, ‘প্রশিক্ষণে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার নিয়ে চিন্তা করাকেও ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এমনকি কখনো কখনো ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকেও ইহুদিবিদ্বেষ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।’ তাঁর মতে, এসব কিছু আসলে ইহুদিদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে না।

ডায়াসপোরা অ্যালায়েন্স ইহুদিবিদ্বেষের (অ্যান্টি–সেমিটিজম) অপব্যবহার নিয়ে কাজ করে।

প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মূলধারার পশ্চিমা গণমাধ্যম ও জায়নবাদী গোষ্ঠীগুলো দাবি করছে, ইহুদিবিদ্বেষ নাকি এখন রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিবিদ্বেষবিরোধী সংগঠন অ্যান্টি-ডিফামেশন লিগের (এডিএল) প্রধান জনাথন গ্রিনব্ল্যাট সম্প্রতি সিএনএনকে বলেছেন, ২০১৫ সালের তুলনায় ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনা ১০ গুণ বেড়েছে। তাদের নতুন গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

তবে এডিএল স্বীকার করেছে, ২০২৪ সালে তারা ৯ হাজার ৩৫৪টি ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা খতিয়ে দেখেছে। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশই ছিল ‘ইসরায়েল বা জায়নবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট’।

এডিএলের যুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী যদি স্লোগান দেন, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, তাহলে সেটিও ইহুদিবিদ্বেষী উক্তি, ইহুদিদের জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য হবে।

শান্তিপূর্ণ গণহত্যাবিরোধী আন্দোলনকেও স্বভাবগতভাবে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। এ কারণেই এডিএলের মতো সংগঠনগুলো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ নিষিদ্ধের দাবি তুলছে। তাদের ভাষায়, ‘টিকটক নিয়ে আমাদের সত্যিই একটা সমস্যা আছে।’ এডিএলের এ কথার মর্মার্থ হলো নতুন প্রজন্ম যথেষ্ট ইসরায়েলপন্থী নয়।

আরও পড়ুনইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রতিবাদ করে বিশ্বখ্যাত আইসক্রিম কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা গ্রেপ্তার১৫ মে ২০২৫

বিপজ্জনক দৃষ্টিভঙ্গি

প্রতিদিন অনলাইনে ইসরায়েলের হাতে গাজায় ফিলিস্তিনি শিশুদের গণহত্যার ছবি দেখে অনেকে স্বাভাবিকভাবে নেতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া জানান। আবার অনেকে সেসব সহিংসতার পক্ষে প্রকাশ্যে গর্ব করে বেড়ান। যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, দেশটিতে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমেছে। বিশেষ করে ৪৯ বছরের কম বয়সী মানুষের বেশির ভাগের দৃষ্টিভঙ্গি এখন নেতিবাচক।

ইহুদি আধিপত্য ও ইসরায়েল সংকটে পড়লে সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, মূলত ইহুদিবিদ্বেষের কারণেই এমনটি হচ্ছে। ইহুদিবিদ্বেষ খুব পুরোনো ও অযৌক্তিক একধরনের ঘৃণা। শুধু ইহুদি হওয়ার কারণেই তারা এসবের শিকার হচ্ছে।

একজন ইহুদি হিসেবে আমি জানি, গাজায় চলমান গণহত্যা সত্ত্বেও অ-ইহুদিদের যখন ইহুদি সম্প্রদায়ের কাউকে ইসরায়েলকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন করতে দেখেন, তখন অনেক সময় তাঁরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হন।

শুধু ধর্মীয় কারণেই ইহুদিদের ঘৃণা করা হচ্ছে, এ দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক ও অনেকাংশে ভ্রান্ত। প্রকৃত ইহুদিবিদ্বেষের ক্ষেত্রে ইহুদি বা তাদের উপাসনালয়গুলো (সিনাগগ) নিশানা করা হয়, যা বিশ্বের দেশে দেশে ঘটছে। এটি সব মানুষের জন্যই উদ্বেগের বিষয়। শুধু ইহুদি হওয়ার কারণে ইহুদিদের ওপর হামলা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। অ্যান্টি–সেমিটিজম একটি অভিশাপ, যার বিরুদ্ধে শক্তভাবে লড়াই করতে হবে। পাশাপাশি বাকি সংখ্যালঘুদের প্রতিও ঘৃণার যে বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে।

কিন্তু ইসরায়েল ও ইহুদিধর্মকে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় সব মূলধারার জায়নবাদী গোষ্ঠী, ট্রাম্প প্রশাসন ও করপোরেট গণমাধ্যম এটা করছে। ফলে তথাকথিত ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু ইহুদিদের জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় আদতে কিছুই করা হচ্ছে না।

আবুধাবিতে শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ পরিদর্শন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবুধাবির যুবরাজ শেখ খালেদ বিন মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান (ডানে)। ১৫ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, একরাতে নিহত ৮১

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজায় হাসপাতালে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। আর উত্তর গাজায় হামলায় মধ্যরাতের পর থেকে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৫১ জন। মূলত হাসপাতালে হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই উত্তর গাজায় ওই হামলা চালায় ইসরায়েল।

বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা তীব্রতর করেছে এবং মধ্যরাত থেকে কমপক্ষে ৫১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে চিকিৎসকরা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৫ জন উত্তর গাজায় নিহত হয়েছেন।

আল জাজিরা বলছে, দক্ষিণ গাজার ইউরোপীয় এবং নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৩০ জনকে হত্যা করার কয়েক ঘণ্টা পরেই সর্বশেষ হামলাগুলো শুরু হয়েছে। হাসপাতালে হওয়া ওই হামলায় নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসা নিতে আসা একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।

এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৫২ হাজার ৯০৮ জনে পৌঁছেছে বলে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭৮০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও প্রায় ৭ হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ভারত সরকারের প্রতি আখতারের আহ্বান
  • আলোচনা ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়া ঠিক হবে না: খেলাফত মজলিস
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫২ হাজার ৯০০ ছাড়াল
  • গাজায় হাসপাতালেও হামলা চালাল ইসরায়েল, একরাতে নিহত ৮১
  • গাজায় হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, একরাতে নিহত ৮১