ভালোবাসার ভিলায় কাঁদলেন মার্তিনেজ, গন্তব্য অজানা
Published: 17th, May 2025 GMT
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ আবেগপ্রবণ মানুষ। হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক পাগলামিও করেন, আবার কেঁদেও ফেলেন। তবে ভেজা চোখের মার্তিনেজকে খুব বেশি দেখা যায়নি। ২০২২ সালে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর মাঠেই তাঁর উৎসবমিশ্রিত কান্নার ছবিটি সযত্নে বুকে আগলে রেখেছেন দলটির সমর্থকেরা। এমনই এক দৃশ্য গতকাল রাতে দেখলেন অ্যাস্টন ভিলার সমর্থকেরাও। শেষ বাঁশি বাজার পর বাঁ হাত দিয়ে একবার চোখ মুছলেন মার্তিনেজ। অশ্রুর ঢল ঠেকানোর চেষ্টা করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল ভেজা চোখে দর্শকদের উদ্দেশে তাঁর করতালি দেওয়ার সময়।
আরও পড়ুনব্রাজিলে ছেলে ও জামাইকেও নিয়ে যাচ্ছেন আনচেলত্তি১০ ঘণ্টা আগেভিলা পার্কে কাল রাতে টটেনহামকে ২–০ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। এ জয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলে পাঁচে উঠে এসে চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমে খেলার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করলেও সেই আলোচনা মিলিয়ে গেছে মার্তিনেজের কান্নায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, এই কান্নার কি হেতু? আর যাঁরা আন্দাজ করে নিয়েছেন কারণটা, তাঁরা দিয়েছেন ইঙ্গিত—ভিলার ঘরে এটাই কি শেষ ম্যাচ মার্তিনেজের?
গত বছর আগস্টে ভিলার সঙ্গে ২০২৯ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেন ৩২ বছর বয়সী মার্তিনেজ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে চলতি মৌসুমে (গতকাল রাতে) ঘরের মাঠে ভিলার শেষ ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজার পর কাঁদার কথা নয় মার্তিনেজের। কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে মেইল অনলাইন জানিয়েছিল, প্রিমিয়ার লিগের খরচনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে মার্তিনেজকে বিক্রি করে দিতে পারে ভিলা। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, সৌদি আরব থেকে প্রস্তাব আছে মার্তিনেজের জন্য। এ ছাড়া ইউরোপের বড় দুটি ক্লাবও নাকি মার্তিনেজকে কিনতে আগ্রহী, যদিও এ দুটি ক্লাবের নাম এখনো জানা যায়নি। তবে টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, খেলাধুলা–সংক্রান্ত কারণেই সৌদির প্রস্তাবে সাড়া দেবেন না মার্তিনেজ। বাকি রইল ইউরোপের দুটি ক্লাব।
আরও পড়ুনকেন ফুটবলাররা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কথা বলেন১২ ঘণ্টা আগেট্রান্সফারমার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, মার্তিনেজ এ মুহূর্তে বিশ্বের ১০ম সর্বোচ্চ দামি গোলকিপার। টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, প্রিমিয়ার লিগের চেয়ে নিম্নস্তরে কোনো লিগের দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই মার্তিনেজের। মেইল অনলাইন ও টেলিগ্রাফের খবর অনুযায়ী, ভিলা নাকি নতুন মৌসুমের কথা ভেবে স্কোয়াড ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছে। গোলপোস্টের নিচে মার্তিনেজের বদলি হিসেবে এস্পানিওলের হোয়ান গার্সিয়ার নামই বেশি শোনা যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমে।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ক্লারিন জানিয়েছে, অ্যাস্টন ভিলা কোচ উনাই এমেরি মার্তিনেজকে বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। দুবার করে ফিফার ‘বেস্ট’ গোলকিপার ও গোলকিপারদের ব্যালন ডি’অরজয়ী মার্তিনেজের ভিলায় ভবিষ্যৎ নিয়ে কাল রাতের ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি কোচ এমেরি, ‘দেখা যাক কী হয়। অবশ্যই এখানে (ভিলা পার্কে) এটাই শেষ ম্যাচ (চলতি মৌসুমে) এবং আমি আসলে জানি না।’
আর্সেনাল থেকে ২০২০ সালে ২ কোটি পাউন্ডে ভিলায় যোগ দেন মার্তিনেজ। এরপরই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। ডাক পান আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে। দুবার কোপা আমেরিকা জয়ের পাশাপাশি বিশ্বকাপ ও ফিনালিসিমাও জেতেন। আর্জেন্টিনার ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ে সেই টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারও হয়েছেন মার্তিনেজ। কিন্তু আর্সেনালে থাকতে শুধু অপেক্ষাতেই দিন কেটেছে তাঁর। ২০১০ সালে ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে যোগ দিয়ে দুই বছর পর সুযোগ পান মূল দলে। পরের ৮ বছরে আর্সেনালের হয়ে মাত্র ১৫ ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে বিভিন্ন ক্লাবে ধারে পাঠিয়ে রেখেছিল আর্সেনাল।
ভিলায় যোগ দেওয়ার পর নিয়মিত খেলার সুযোগ পান মার্তিনেজ। ক্লাবটির প্রতি নিজের ভালোবাসাও তিনি বুঝিয়েছেন ২০২৩ সালের মার্চে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর টটেনহাম তাঁকে পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু মার্তিনেজ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভিলায় তিনি সুখেই আছেন। এই ক্লাব ছেড়ে কোথাও যাবেন না। শুধু তা–ই নয়, ভিলার এ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাতেও বড় অবদান মার্তিনেজের। ভালোবাসার সেই ক্লাব এখন তাঁকে বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মার্তিনেজের চোখ ভেজাই স্বাভাবিক।
ভিলার হয়ে ২১১ ম্যাচ খেলেছেন মার্তিনেজ। ক্লাবটির হয়ে কোনো শিরোপা জিততে না পারলেও সমর্থকদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছেন। পাশাপাশি ভিলার হয়ে ১৮ হাজার মিনিটের বেশি মাঠে থাকার পাশাপাশি ৬৯ ম্যাচে ক্লিন শিটও আছে তাঁর।
৩৭ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের পাঁচে ভিলা। সমান ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ চেলসি গোল ব্যবধানে ভিলার চেয়ে এগিয়ে। ৩৬ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ভালোবাসার ভিলা যদি ছাড়তেই হয়, তবে চলে যাওয়ার আগে মার্তিনেজ নিশ্চয়ই লিগে শেষ ম্যাচে ভিলাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের টিকিট পাইয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন র গ লক প র আর স ন ল ব শ বক প
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক–জনবল নিয়োগসহ ৪ দাবিতে ময়মনসিংহ আইএইচটি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
ময়মনসিংহের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) শিক্ষক ও জনবল নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকালে পাঠ কার্যক্রম বন্ধ রেখে একাডেমিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি করা হয়।
নগরের মাসকান্দা এলাকায় আইএইচটির অবস্থান। কোনো জনবল নিয়োগ না হলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি বিভাগে ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি ব্যাচে ১৫৬ শিক্ষার্থী আছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান। গত ৪ মার্চ তিনি ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি হন। এরপর প্রশাসনিক দায়িত্বে আর কেউ নেই। তবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষক সপ্তাহে দুই দিন করে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
ক্যাম্পাসে আছে একটি চারতলা একাডেমিক ভবন, একটি পুরুষ ও একটি নারী আবাসিক হল ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আবাসন। পুরো চত্বরে ঘাস বড় হয়ে জঙ্গলময় পরিস্থিতি। একাডেমিক ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে আছে প্যাকেটবন্দী কিছু জিনিসপত্র। নিচতলার একটি কক্ষকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে কিছু চেয়ার ও একটি টেবিল রয়েছে। এ ছাড়া পুরো ভবনে কক্ষ থাকলেও নেই আসবাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগভিত্তিক কোনো শিক্ষক না থাকায় ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ প্রায় ছয় মাস। ছাত্রদের জন্য ব্যবহারিক কোনো যন্ত্রপাতি ও ক্লাসে পর্যাপ্ত আসবাব, যেমন চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ নেই। হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো আসবাব, বিছানা, চেয়ার ও টেবিল নেই; নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী। ২৫ জুন বেলা ১১টার দিকে ৯ লাখ টাকা বকেয়ার কারণে ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। পরে অবশ্য আবার সংযোগ দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন।
আজ পাঠ কার্যক্রম বর্জন করে সকাল ১০টা থেকে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের চারটি দাবির মধ্যে আছে, অবিলম্বে অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত ক্যাম্পাস করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আজ মানববন্ধনের পর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকলিপি ও পরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুফিদুল ইসলাম।
আরও পড়ুন১৫৬ শিক্ষার্থী থাকলেও নেই কোনো শিক্ষক–কর্মচারী ৮ ঘণ্টা আগেশিক্ষার্থী দেবী দেবনাথ বলেন, ‘সরকারের আছে আমাদের প্রশ্ন, যদি শিক্ষার সুব্যবস্থা না দিতে পারে, তাহলে এত টাকা খরচ করে, এত সুন্দর ভবন কেন করা হলো। ভর্তি হওয়ার সময় অনেক টাকা খরচ করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা যদি জানতাম, এখানে এসে ক্ষতি হবে, তাহলে ভর্তি হতাম না। রাষ্ট্র কেন আমাদের এত ক্ষতি করল? আমাদের সঙ্গে একপ্রকার দুর্নীতি করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মিছবাহ উদদীন আহমদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবল কাঠামো অনুমোদন ও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান।