কেন অবৈধ বেড়িবাঁধ কেটে ফেলা হচ্ছে না
Published: 19th, May 2025 GMT
কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য দিন দিন সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। সম্প্রতি এ নিয়ে প্রথম আলো দীর্ঘ প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এর আগেও এ দ্বীপের ওপর রাজনৈতিক ক্ষমতাচর্চা, দখলদারি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিকবার প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে। সর্বশেষ ঘটনায় এক হাজার একরের প্যারাবন পুড়িয়ে তৈরি করা চিংড়িঘের উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এই অভিযান নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সোনাদিয়ায় নতুন করে অন্তত এক হাজার একরের প্যারাবন ধ্বংস করে তৈরি হয়েছে সাতটি চিংড়িঘের। প্রকাশ্যে পেট্রল ঢেলে গাছপালা পুড়িয়ে এসব ঘের করা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিন হাজার একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে সেখানে নির্মিত হয়েছিল ৩৭টি চিংড়িঘের। এসব ঘের উচ্ছেদ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও গত ছয় মাসে তা কার্যকর হয়নি। এখন চিংড়িঘেরের সংখ্যা ৪৪।
এসব অবৈধ ঘের উচ্ছেদে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বরাবরের মতোই প্রশ্ন ছিল। প্রশাসনের আশ্রয়–প্রশ্রয়েই প্যারাবন ধ্বংস ও অবৈধ ঘের গড়ে উঠেছে বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা আছে। সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তখন চাপে পড়ে যে অভিযান চালানো হয়, সেগুলোকেও লোকদেখানো বলে সাব্যস্ত করতে চান অনেকে।
শুক্রবার অভিযান চালিয়ে মাত্র তিনটি চিংড়িঘেরের অস্থায়ী কিছু ঘর–গুদাম গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। চিংড়ি চাষের জন্য অবৈধভাবে তৈরি করা ঘেরের বাঁধও কাটেনি। আটক করা হয়নি দখলদার কাউকেও। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
ইউএনওর বক্তব্য থেকেই আমরা জানতে পারি, আগুন লাগিয়ে প্যারাবন ধ্বংসের ঘটনা থামছে না। বৃহস্পতিবার (১৫ মে ২০২৫) বিকেলেও আগুন দিয়ে গাছপালা পোড়ানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে কি চলতে থাকবে? শুধু তিনটি ঘেরের অস্থায়ী স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েই কি এ দখলদারি থামানো সম্ভব? কেন আদালতের নির্দেশনা মেনে সব কটি অবৈধ ঘের পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হচ্ছে না? কেন সব অবৈধ বাঁধ কেটে ফেলা হচ্ছে না? মহেশখালীতে জনমনে প্রতিষ্ঠিত যে কারা এসব প্যারাবন ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, কারা এসব অবৈধ চিংড়িঘেরের মালিক। ফলে অভিযানের সময় দখলদার ও শ্রমিক পালিয়ে গেছে বলে কাউকে ধরা যায়নি, এই যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা দেখতে চাই স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর সোনাদিয়ার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কতটা আন্তরিক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প য র বন ধ ব স দখলদ র প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
সোনাদিয়ায় তিনটি চিংড়িঘেরের স্থাপনা উচ্ছেদ, অক্ষত বেড়িবাঁধ
কক্সবাজারের মহেশখালীর প্ররিবেশ সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে প্যারাবন ধ্বংস করে নির্মিত তিনটি চিংড়িঘেরের অস্থায়ী স্থাপনা ( ঘর-গুদাম) গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। তবে কাটা হয়নি ঘেরের বাঁধ। দখলদারদের কাউকে আটকও করা হয়নি।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্যারাবন ধ্বংসের চিত্র দেখতে সোনাদিয়ায় যান। তাঁর সঙ্গে অভিযানে অংশ নেন পুলিশ, বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পরিদর্শনকালে প্যারাবনের গাছপালা ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া গাছপালা দেখতে পান দলের সদস্যরা। এ সময় তিনটি চিংড়িঘেরের অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর শেষ পৃষ্টায় ‘ প্যারাবন পুড়িয়ে নতুন চিংড়িঘের’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপে নতুন করে অন্তত এক হাজার একরের প্যারাবনের কেওড়া ও বাইনগাছ ধ্বংস করে তৈরি হয়েছে সাতটি চিংড়িঘের। এবার প্রকাশ্যে পেট্রল ঢেলে গাছপালা পুড়িয়ে এসব ঘের করা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৩ হাজার একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে সেখানে নির্মিত হয়েছিল ৩৭টি চিংড়িঘের। এসব ঘের উচ্ছেদ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও গত ছয় মাসে তা কার্যকর হয়নি। এখন চিংড়িঘেরের সংখ্যা ৪৪।
সোনাদিয়া থেকে ফিরে আজ বিকেলে ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, সরেজমিন পরিদর্শনের সময় প্যারাবনের গাছ কেটে চিংড়িঘের নির্মাণের সত্যতা পাওয়া গেছে। এমনকি গতকাল বিকেলেও আগুন দিয়ে গাছপালা পোড়ানো হয়েছে। আজ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার চিহ্ন দেখা গেছে।
দখলদারদের কেউ ধরা না পড়ার কারণ জানতে চাইলে ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যাহ বলেন, আজকের অভিযানে তিনটি চিংড়িঘেরের অস্থায়ীভাবে তৈরি বেশ কিছু স্থাপনা ( ঘর-গুদাম) গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানে নামার পর ঘেরের দখলদার ও শ্রমিকেরা পালিয়ে পাশের প্যারাবনে আত্মগোপন করেন। এ কারণে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ সময় গাছ কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তা ছাড়া দুটি চিংড়িঘেরে পানি চলাচলের স্লুইসগেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগুন দিয়ে প্যারাবন পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বন বিভাগকে বলা হয়েছে।
অভিযানে অংশ নেওয়া মহেশখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমিত বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপে কী পরিমাণ ধ্বংস যজ্ঞ চালানো হয়েছে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। প্যারাবন দখল করে চারদিকে বেড়িবাঁধ দিয়ে চিংড়িঘের নির্মাণের পর ভেতরের গাছপালা রাতের আঁধারে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে।
চিংড়িঘেরের জন্য পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্যারাবনের গাছপালা। পুড়ে গেছে ঘাসও। আজ দুপুরে কক্সবাজারের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন দ্বীপ সোনাদিয়ায়