মো. আবদুর রহমান পেশায় লোকোমোটিভ মাস্টার বা ট্রেনচালক। বয়স ৪৬ বছর। ২২ বছরের চাকরিজীবনে এবারের মতো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আর পড়েননি। ‘প্রকৃতির ডাকে’ সাড়া দিতে ট্রেন থেকে নেমেছিলেন তিনি। এতেই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পেয়েছেন কন্ট্রোল অর্ডার বা তলব নোটিশ। তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা সহকারী লোকোমাস্টার মো.

কাওছার আহম্মেদও কন্ট্রোল অর্ডার পেয়েছেন।

তবে কর্তৃপক্ষ পরে মৌখিকভাবে অর্ডারটি বাতিল করেছে। এর আগেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কোনো গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। আবদুর রহমান বলেন, ‘আমার স্ত্রী আর দশম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে বিষয়টি নিয়ে খুবই মন খারাপ করেছে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছেলে শুধু হাসে। বিষয়টি এত বিব্রতকর যে কাউকে বলাও যায় না।’

১৭ মে সকাল সাড়ে ছয়টায় ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় আন্তনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। ট্রেন চালাচ্ছিলেন আবদুর রহমান ও মো. কাওছার আহম্মেদ।

২০ মে সন্ধ্যায় মুঠোফোনে আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে ট্রেনটির তিন মিনিটের যাত্রাবিরতি ছিল। ওই স্টেশনে ট্রেন পোঁছায় সকাল ৮টা ৪৪ মিনিটে। তিনি বলেন, ‘ইঞ্জিনে টয়লেট নেই। প্রস্রাবের চাপ সামলাতে না পারলে মাঝেমধ্যে মোটা পলিথিন বা বোতলে সে কাজটি করতে হয়। কিন্তু পায়খানা ধরলে তো কিছু করার থাকে না। সেদিন ট্রেন থামার পর নেমে প্রথমে ইঞ্জিনের পেছনে গার্ডের রুমে যাই। সেখানে টয়লেটে তালা মারা দেখে ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনমাস্টারের কক্ষের টয়লেটে যাই। বিষয়টি ঢাকা কন্ট্রোলেও জানিয়েছি।’

আবদুর রহমান বলেন, স্টেশনমাস্টার ততক্ষণে পারাবত ট্রেনের সিগন্যাল দিয়েছেন। পরে তা বাতিল করে পেছনে থাকা চট্টগ্রামগামী ননস্টপ আন্তনগর ট্রেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেসকে আগে যাওয়ার জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়। এতে প্রায় ১৬ মিনিট চলে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াশরুমে যাওয়া-আসাসহ মোট ছয় মিনিট সময় লাগে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেসকে অগ্রাধিকার দেওয়া ও ওয়াশরুম ব্যবহারে ৩ মিনিট বিরতির সময়সহ মোট ২১ মিনিট সময় লাগে। গার্ড প্রকৃতির ডাক উল্লেখ করে ডিটেনশন বইয়ে ২১ মিনিট ব্যয়ের কথা লিখেছেন। আলাদা করে কোন কাজে কত সময় লেগেছে তা উল্লেখ করেননি।’

এ ঘটনায় ১৮ মে এক নির্দেশনায় ২০ মে (মঙ্গলবার) সকাল ৯টায় ডিআরএমের দপ্তরে এ দুই চালককে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

আবদুর রহমান ২০০৪ সালে সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এ পদের (গ্রেড ২ ও ১) পর ২০১৩ সালে সাবলোকোমাস্টার, ২০১৫ সালে লোকোমাস্টার (গ্রেড ২) এবং ২০১৭ সাল থেকে লোকোমাস্টার (গ্রেড ১) পদে কর্মরত। সাবলোকোমাস্টার হিসেবে ট্রেন চালাতে হয়নি বলে ওই দুই বছর টয়লেটের বিষয়টি নিয়ে তাঁকে চিন্তা করতে হয়নি।

১৭ মে ঘটনার দিন পারাবত এক্সপ্রেসে আবদুর রহমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সহকারী লোকোমাস্টার মো. কাওছার আহম্মেদ। ঘটনার পর থেকেই তিনি ফেসবুকে তলবের বিষয়টিসহ বিভিন্ন পোস্ট করেছেন। এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, লোকোমাস্টাররা চলন্ত ট্রেনে কীভাবে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন এ বিষয়টি কেউ ভেবে দেখেছেন কি না। দুই চালককে তলব নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনও শেয়ার করেছেন।

কাওছার আহম্মেদের এসব পোস্টে ইঞ্জিনে টয়লেট না থাকা ও চালকদের ভোগান্তি নিয়ে মন্তব্যকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ লিখেছেন, ‘চালকেরা কেন প্রস্রাব–পায়খানা করতে চাইবেন, তাঁরা তো রোবট।’ আবার কেউ কেউ বলেছেন, ‘এসি রুমে যে নীতিনির্ধারকেরা বসেন, তাঁরা তো আর চালকদের কষ্ট বুঝতে পারবেন না।’
কাওছার আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে মৌখিকভাবে বিষয়টি বাতিল করা হয়। আমরা ইঞ্জিনে টয়লেট থাকা কেন জরুরি তা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার ঘটনায় দুই চালকের বিরুদ্ধে তলব নোটিশ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ র রহম ন প রক ত র ড ক টয়ল ট ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

হাদিকে গুলির ঘটনায় কে এই ফয়সাল করিম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গতকাল পুরানা পল্টনে গুলি করা হয়েছে। প্রথম আলো খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, ফয়সাল করিম নামের এই ব্যক্তি কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হয়েছিলেন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ