‘প্রকৃতির ডাকে সাড়া’ দিতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ট্রেনচালক
Published: 22nd, May 2025 GMT
মো. আবদুর রহমান পেশায় লোকোমোটিভ মাস্টার বা ট্রেনচালক। বয়স ৪৬ বছর। ২২ বছরের চাকরিজীবনে এবারের মতো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আর পড়েননি। ‘প্রকৃতির ডাকে’ সাড়া দিতে ট্রেন থেকে নেমেছিলেন তিনি। এতেই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পেয়েছেন কন্ট্রোল অর্ডার বা তলব নোটিশ। তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা সহকারী লোকোমাস্টার মো.
তবে কর্তৃপক্ষ পরে মৌখিকভাবে অর্ডারটি বাতিল করেছে। এর আগেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কোনো গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। আবদুর রহমান বলেন, ‘আমার স্ত্রী আর দশম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে বিষয়টি নিয়ে খুবই মন খারাপ করেছে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছেলে শুধু হাসে। বিষয়টি এত বিব্রতকর যে কাউকে বলাও যায় না।’
১৭ মে সকাল সাড়ে ছয়টায় ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় আন্তনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। ট্রেন চালাচ্ছিলেন আবদুর রহমান ও মো. কাওছার আহম্মেদ।
২০ মে সন্ধ্যায় মুঠোফোনে আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে ট্রেনটির তিন মিনিটের যাত্রাবিরতি ছিল। ওই স্টেশনে ট্রেন পোঁছায় সকাল ৮টা ৪৪ মিনিটে। তিনি বলেন, ‘ইঞ্জিনে টয়লেট নেই। প্রস্রাবের চাপ সামলাতে না পারলে মাঝেমধ্যে মোটা পলিথিন বা বোতলে সে কাজটি করতে হয়। কিন্তু পায়খানা ধরলে তো কিছু করার থাকে না। সেদিন ট্রেন থামার পর নেমে প্রথমে ইঞ্জিনের পেছনে গার্ডের রুমে যাই। সেখানে টয়লেটে তালা মারা দেখে ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনমাস্টারের কক্ষের টয়লেটে যাই। বিষয়টি ঢাকা কন্ট্রোলেও জানিয়েছি।’
আবদুর রহমান বলেন, স্টেশনমাস্টার ততক্ষণে পারাবত ট্রেনের সিগন্যাল দিয়েছেন। পরে তা বাতিল করে পেছনে থাকা চট্টগ্রামগামী ননস্টপ আন্তনগর ট্রেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেসকে আগে যাওয়ার জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়। এতে প্রায় ১৬ মিনিট চলে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াশরুমে যাওয়া-আসাসহ মোট ছয় মিনিট সময় লাগে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেসকে অগ্রাধিকার দেওয়া ও ওয়াশরুম ব্যবহারে ৩ মিনিট বিরতির সময়সহ মোট ২১ মিনিট সময় লাগে। গার্ড প্রকৃতির ডাক উল্লেখ করে ডিটেনশন বইয়ে ২১ মিনিট ব্যয়ের কথা লিখেছেন। আলাদা করে কোন কাজে কত সময় লেগেছে তা উল্লেখ করেননি।’
এ ঘটনায় ১৮ মে এক নির্দেশনায় ২০ মে (মঙ্গলবার) সকাল ৯টায় ডিআরএমের দপ্তরে এ দুই চালককে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
আবদুর রহমান ২০০৪ সালে সহকারী লোকোমাস্টার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এ পদের (গ্রেড ২ ও ১) পর ২০১৩ সালে সাবলোকোমাস্টার, ২০১৫ সালে লোকোমাস্টার (গ্রেড ২) এবং ২০১৭ সাল থেকে লোকোমাস্টার (গ্রেড ১) পদে কর্মরত। সাবলোকোমাস্টার হিসেবে ট্রেন চালাতে হয়নি বলে ওই দুই বছর টয়লেটের বিষয়টি নিয়ে তাঁকে চিন্তা করতে হয়নি।
১৭ মে ঘটনার দিন পারাবত এক্সপ্রেসে আবদুর রহমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সহকারী লোকোমাস্টার মো. কাওছার আহম্মেদ। ঘটনার পর থেকেই তিনি ফেসবুকে তলবের বিষয়টিসহ বিভিন্ন পোস্ট করেছেন। এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, লোকোমাস্টাররা চলন্ত ট্রেনে কীভাবে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন এ বিষয়টি কেউ ভেবে দেখেছেন কি না। দুই চালককে তলব নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনও শেয়ার করেছেন।
কাওছার আহম্মেদের এসব পোস্টে ইঞ্জিনে টয়লেট না থাকা ও চালকদের ভোগান্তি নিয়ে মন্তব্যকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ লিখেছেন, ‘চালকেরা কেন প্রস্রাব–পায়খানা করতে চাইবেন, তাঁরা তো রোবট।’ আবার কেউ কেউ বলেছেন, ‘এসি রুমে যে নীতিনির্ধারকেরা বসেন, তাঁরা তো আর চালকদের কষ্ট বুঝতে পারবেন না।’
কাওছার আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে মৌখিকভাবে বিষয়টি বাতিল করা হয়। আমরা ইঞ্জিনে টয়লেট থাকা কেন জরুরি তা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ র রহম ন প রক ত র ড ক টয়ল ট ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে চেয়ারম্যান শূন্য জবির সিএসই বিভাগ, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে গত ১৪ দিন ধরে চেয়ারম্যান নেই।
গত ২ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে বিভাগটি কার্যত নেতৃত্বশূন্য। এ কারণে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে।
আরো পড়ুন:
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ
বিভাগে চেয়ারম্যান নিয়োগকে ঘিরে মূলত দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে দুই সিনিয়র অধ্যাপকের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে বিভাগে মাত্র দুইজন অধ্যাপক পালাক্রমে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর মধ্যে অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন দুইবার এবং অপরজন তিনবার দায়িত্বে ছিলেন। বিভাগে নতুন করে আরো চারজন শিক্ষক অধ্যাপক পদে উন্নীত হয়েছেন।
নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তাদের মধ্য থেকেই নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু পুরোনো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আবারো পদ দাবি করেন ড. নাসির উদ্দিন। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভাগের সব শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভা করে। শিক্ষকদের সম্মতিতে অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. পরিমল বালাকে অস্থায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনদিন পরই গত ১৪ সেপ্টেম্বর ড. নাসির উদ্দিন ড. পরিমল বালার কাছে একটি আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার পর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যান ডিন। শেষ পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে প্রশাসনের কাছে অব্যাহতি চান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন জানান, তিনি ইতোমধ্যে দুইবার চেয়ারম্যান ছিলেন। বিভাগে এখন নতুন তিনজন অধ্যাপক আছেন ঠিকই, কিন্তু জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে চেয়ারম্যান হওয়ার অধিকার তারই রয়েছে। তাই তাকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান পদ ডিনকে দেওয়ায় তিনি উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
চেয়ারম্যানবিহীন অবস্থায় প্রশাসনিক কার্যক্রম ও একাডেমিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। সিএসই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পলাশ বলেন, “আজ ১৪ দিন হয়ে গেলেও বিভাগে চেয়ারম্যান নেই। এতে আমরা একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অন্য বিভাগ থেকে কেনো চেয়ারম্যান দেওয়া হবে? আমাদের ছয়জন অধ্যাপকের মধ্য থেকেই নিয়োগ দিতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, কোনো বিভাগে যদি অধ্যাপক না বাড়ে তবে বিদ্যমান অধ্যাপকরা পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু নতুন কেউ অধ্যাপক হলে তাকেই চেয়ারম্যান করার নজির রয়েছে। এমনকি বর্তমান উপাচার্যের বিভাগেও একইভাবে নতুন অধ্যাপককে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। তবুও সিএসই বিভাগে সেই নিয়ম কার্যকর না হওয়ায় সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “চেয়ারম্যান নিয়োগে স্থায়ী সমাধানের জন্য আইন উপদেষ্টাদের কাছে মতামত চেয়েছি। এজন্যই অস্থায়ী সমাধান হিসেবে ডিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নোটিশ পাঠানোয় পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেছে, যা আমাদের জন্য বিব্রতকর।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী