জনবান্ধব ভূমি সেবায় অঙ্গীকারাবদ্ধ ভূমি মন্ত্রণালয়: ভূমি সচিব
Published: 22nd, May 2025 GMT
যেকোনো নাগরিক পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো সময় প্তাহের সাতদিনে দিবারাত চব্বিশ ঘণ্টাই কলসেন্টার ও নাগরিক ভূমিসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে পারছেন বলে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভূমি মেলা ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সচিব বলেন, “ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম নাগরিকদের জন্য স্বস্তিদায়ক। হয়রানিমুক্ত ও জনবান্ধব ভূমি সেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ভূমি মন্ত্রণালয় বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্য অর্জনে ভূমি মন্ত্রণালয় প্রযুক্তিগতভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নামজারি, ভূমি উন্নয়ন করা, পর্চা ও নকশা সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা শতভাগ অনলাইনভিত্তিক ও ক্যাশলেস করা হয়েছে।
সিনিয়র সচিব বলেন, “দেশব্যাপী ভূমি উন্নয়ন কর শতভাগ অনলাইনে আদায়ের ফলে রাজস্ব আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে অনলাইনে প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ নামজারি মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সারা দেশের মোট ৫১৬টি উপজেলা ও সার্কেল ভূমি অফিস এবং ৩৪৬৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু হয়েছে।এই সিস্টেম থেকে জুলাই-২৪ থেকে ১৫মে-২৫ পর্যন্ত প্রায় ২৯০ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ভূমি উন্নয়ন কর হতে প্রতিদিন ৩-৪ লাখ টাকা এবং অনলাইন খতিয়ান হতে প্রতি মাসে গড়ে ৩ লাখ ২১ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে। বর্তমানে ৬ কোটি ৫০ লাখের অধিক খতিয়ান অনলাইনে রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ হোল্ডিং ডাটা ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। নাগরিককে অনলাইনে দাখিলা প্রদান করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। প্রতিদিন সার্ভারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা সচল থাকলে দিনে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদয় করা সম্ভব।
প্রতিদিন ই-পর্চা থেকে সরকারের কোষাগরে প্রায় ১৪-১৮ লাখ টাকা জমা হয় জানিয়ে সালেহ আহমেদ বলেন, “জুলাই-২৪ থেকে মে-২৫ পর্যন্ত ই-পর্চা হতে সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ৪৫ কোটি টাকা। ডাক বিভাগের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ খতিয়ান এবং ১১ হাজারের অধিক মৌজা ম্যাপ জনগণের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর কর্মপরিবেশ উন্নতকরণ, রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারা দেশে ১৩৩০টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ করা হবে এবং ১৫০টি সমন্বিত উপজেলা ভূমি কমপ্লেক্স নির্মাণকল্পে ডিপিপি প্রণীত হয়েছে।”
২০২৬ সাল পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য উল্লেখ্য করে সিনিয়র সচিব বলেন, “ভূমি জরিপ একটি জটিল কাজ। এই কাজটি কম সময়ে নির্ভূলভাবে করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করে করা হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ভূমি অফিসে যেতে হবে না। এনআইডি দিয়েই পাওয়া যাবে জমির সব তথ্য।”
কৃষি ও বণভূমি রক্ষায় নিতীমালা প্রণয়নের কথাও জানান সিনিয়র সচিব।
রাজস্ব মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি রক্ষা।ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাগ্রতা সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং নাগরিকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার আশাবাদ পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
এবারের ভূমিমেলার প্রতিপাদ্য ‘নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করি,নিজের জমি সুরক্ষিত রাখি’। মেলা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ভূমি ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।
মেলায় মোট ১৯টি স্টল হতে নাগরিকদের ভূমি সংক্রান্ত সব সেবা দেওয়া হবে। এবারের ভূমি মেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে উদ্বুদ্ধ করা এবং সচেতন করা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান এজেএম সালাউদ্দিন নাগরী, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহম্মদ ইব্রাহিম,ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘রব্বানা হাবলানা’: পরিবারের জন্য এক অমূল্য দোয়া
‘হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের নেককারদের নেতা বানাও।’ এই কথাগুলো কোরআনের সুরা ফুরকানের ৭৪ নম্বর আয়াতে লিপিবদ্ধ আছে।
মূল আরবি দোয়াটির উচ্চারণ হলো, ‘রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইয়ুন ওয়াজাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।’
এটি শুধু একটি দোয়া নয়, বরং পরিবারের কল্যাণ, সন্তানের নেক আমল এবং নিজের নেতৃত্বের জন্য আল্লাহর কাছে এক হৃদয়গ্রাহী প্রার্থনা।
আরও পড়ুননবী সুলাইমান (আ.)–এর দোয়া১৪ মার্চ ২০২৪দোয়ার তাৎপর্যপবিত্র কোরআনের সুরা ফুরকানে আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। এই আয়াতে তাঁদের একটি আকাঙ্ক্ষা কথা প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাঁরা আল্লাহর কাছে এমন একটি পরিবারের প্রার্থনা করেন, যাঁরা তাঁদের চোখের শীতলতা এবং হৃদয়ের শান্তির উৎস হবে।
আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী বলেন, এই দোয়া মুমিনকে তাঁর পরিবারের জন্য দায়িত্বশীল হতে শেখায়। এটি কেবল স্ত্রী-সন্তানের ভালো থাকার প্রার্থনা নয়, বরং নিজেকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, যিনি নেককারদের পথ দেখাতে পারেন।
এই দোয়ার দ্বিতীয় অংশ, ‘আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানাও,’ বোঝায় যে একজন মুমিনের উচিত নিজের পরিবারকে নেক পথে পরিচালিত করা এবং সমাজে ন্যায় ও সত্যের পথপ্রদর্শক হওয়া। (মাআরিফুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৬৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১৯৯৮)
আরও পড়ুনদোয়া কীভাবে করতে হয়২০ এপ্রিল ২০২৫এটি কেবল স্ত্রী-সন্তানের ভালো থাকার প্রার্থনা নয়, বরং নিজেকে এমন একজন নেতা হিসেবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, যিনি নেককারদের পথ দেখাতে পারেন।কখন এই দোয়া করতে হয়‘রব্বানা হাবলানা’ দোয়াটি পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। যেকোনো সময় পড়া যায়—নামাজের পর, সিজদায় বা দৈনন্দিন জীবনে যখন ইচ্ছা। বিশেষ করে বিবাহিত জীবনে শান্তি, সন্তানের নেক আমল বা পারিবারিক সুখ কামনায় এই দোয়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করো, কারণ দোয়া ইবাদতের মূল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৩৭১)
এই দোয়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা, সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আল্লামা শানকিতি বলেন, এই দোয়া মুমিনকে তাঁর পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে। একটি নেককার পরিবারই সমাজের মূল ভিত্তি এবং এই দোয়া সেই ভিত্তি মজবুত করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। (শানকিতি, মুহাম্মদ আল-আমীন, আদ্বাউল বায়ান ফি ঈযাহিল কোরআন, পৃষ্ঠা ৪৭৮, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ২০০৫)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই, যে তার পরিবারের জন্য সর্বোত্তম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৯৭৭)
আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫