কাঙ্ক্ষিত দর না পেলেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে অস্থায়ী পাঁচটি পশুহাট ইজারা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এর মধ্যে চারটিই পেয়েছেন যুবদল, কৃষক দল ও মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশনের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া ইজারা দিতে না পারা তিনটি হাট থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাসিল আদায় করা হবে।

হাটগুলো ইজারায় উপযুক্ত দর না পাওয়ায় এবার চসিকের রাজস্ব আয় কমেছে দেড় কোটি টাকার ওপরে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবার পাঁচটি হাট থেকে রাজস্ব আসবে ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। গত বছর নগরীর সাতটি হাট থেকে আয় হয়েছিল ৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এবার ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব কমেছে। তবে তিনটি হাট থেকে চসিক হাসিল আদায় করায় সেখান থেকে কিছু আয় হবে। 

সিটি করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হাট ইজারার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় প্রাধান্য পায়নি। সর্বোচ্চ দরদাতাকেই ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এবার প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় হয়নি। হাটের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কম থাকায় নতুন করে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে যে দর পাওয়া গেছে, তাতেই ইজারা দেওয়া হয়েছে।

সিটি করপোরেশন থেকে জানা গেছে, নগরের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিডিএ বালুর মাঠ হাটের ইজারা পেয়েছেন বন্দর থানা যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন। তিনি হাটটির দর দেন সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তবে গতবার এই হাট ইজারা হয়েছিল ২ কোটি ২২ লাখ টাকায়। এ ছাড়া ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে টিএসপি মাঠের হাটটি ইজারা পেয়েছেন পতেঙ্গা থানা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক মো.

সালাউদ্দিন। হাটটির সরকারি দর ১৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা হলেও তিনি দিয়েছেন ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। এবারের নতুন অনুমোদন পাওয়া ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাড়া আলমগীর সাহেবের মাঠের হাটটির ইজারা পেয়েছেন কৃষক দল নেতা মো. আলমগীর। হাটটির নির্ধারিত দর ছিল ৫ লাখ টাকা। আলমগীর দিয়েছেন ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর নগরের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম হালিশহর মুনিরনগর আনন্দবাজারসংলগ্ন হাটের ইজারা পেয়েছেন যুবদল কর্মী খুরশীদ আলম। হাটটির জন্য তিনি দর দেন ২০ লাখ ৫ হাজার টাকা। নির্ধারিত দর ছিল ১৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

সিডিএ বালুর মাঠ হাটের দর প্রায় কোটি টাকা কম নিয়ে যুবদল নেতা নিজাম উদ্দিন বলেন, হাটটি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন ও যুবলীগ নেতা দেবাশীষ পাল নিয়ন্ত্রণ করতেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে কালো টাকা থাকায় গতবার অস্বাভাবিক দাম দিয়ে তারা ইজারা নিয়েছিলেন। আমাদের হাতে তো এত টাকা নেই। তার পরও নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দিয়ে নিয়েছি। 

এদিকে নগরের সবচেয়ে বড় কর্ণফুলী পশুর হাটের ইজারা পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। গত ১৮ বছর ধরে এই হাট তিনি ও তাঁর ছোট ভাই ইজারা নিচ্ছেন। এবার হাটটির নির্ধারিত দর ছিল ২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কিন্তু তারা দর দেন ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ নিয়ে ইজারাদার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, আগের তুলনায় হাটের জায়গা কমে গেছে। আবার নগরজুড়ে অবৈধ হাট বসে। এতে প্রত্যাশিত আয় হয় না। তাই এবার কম দর দিয়েছি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ধ র ত দর ট র ইজ র য বদল নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

সেবায় দুর্ভোগ, ৬ মাসেও হস্তান্তর হয়নি নতুন ভবন

৯ তলাবিশিষ্ট সুবিশাল ভবন নির্মাণের ছয় মাস পেরিয়েছে। এখনও স্থাপন করা হয়নি একটি লিফটও। যে কারণে ভবনটি হস্তান্তর করেনি গণপূর্ত বিভাগ। ফলে চালু করা যায়নি পিরোজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে করে উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। চিকিৎসার জন্য তাদের যেতে হচ্ছে খুলনা-বরিশালসহ দেশের বড় বড় শহরের হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হওয়ার সময় ১৯৮৬ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল। ১৯৯৭ সালে নতুন ভবনে চালু হয় ৫০ শয্যার হাসপাতাল। ২০০৫ সালে সেটি ১০০ শয্যার উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। নদীবেষ্টিত পিরোজপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই এখানে থাকতে চাইতেন না। জেলার মানুষকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে হতো খুলনা বা বরিশালে। এখন দিনে সহস্রাধিক রোগী আসেন।
সূত্র জানায়, ১০০ শয্যার হাসপাতালে অধিকাংশ সময়ই রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় দ্বিগুণ। শয্যা না পেয়ে রোগীদের মেঝে ও বারান্দায় থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হতে হয় রোগী ও তার স্বজনের। বাড়তি চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক-নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরও।
পিরোজপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শেখপাড়ার বাসিন্দা মনিরুল আলম সেলিম বলেন, বর্তমান ১০০ শয্যার হাসপাতালে ডাক্তারের সংকট। সামান্য চিকিৎসা দিয়েই খুলনা বা বরিশাল পাঠিয়ে দেওয়া হয় রোগীকে। এলাকার গরিব ও সাধারণ মানুষ উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতাল-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হোটেল ব্যবসায়ী পারভেজ আকন বলেন, জেলা হাসপাতালের নতুন ভবন মাসের পর মাস পড়ে আছে। তাই রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোগী বাড়ায় ২০১৭ সালে এই হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১৯ সালে ১২ তলা ভিতবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ শুরু করে পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগ। শুরুতে সাততলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন ও বরাদ্দ পেয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরে আরও দুটি তলা সম্প্রসারণ করে ৯ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়।
প্রথম দরপত্র অনুযায়ী ৪০ কোটি টাকার কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড। ৬ কোটি টাকার অষ্টমতলা ও ৫ কোটি টাকার নবম তলার নির্মাণের কাজ করে খান বিল্ডার্স ও কহিনূর কনস্ট্রাকশন। নবনির্মিত আধুনিক এ ভবনে সিসিইউ, আইসিইউ বিভাগসহ শতাধিক কেবিন আছে। পাশাপাশি পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ইউনিট, করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর আলাদা ওয়ার্ড আছে। এই ভবনে চারটি লিফটের জায়গা আছে।
শুরুতে ২০২০ সালের জুনে ভবনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তিন দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় ভবন নির্মাণের মূল কাজ। লিফট স্থাপন না করায় ছয় মাসেও ভবনটি হস্তান্তর হচ্ছে না। 
জেলা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রের ভাষ্য, নতুন ভবনে চারটি আধুনিক লিফট স্থাপনের জন্য ২০২২ সালে চার দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। কোনো ঠিকাদারই এ দরপত্রে অংশ নেননি। ওই সময়ে লিফট স্থাপনে বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বাজারদরের চেয়ে বরাদ্দ অনেক কম থাকায় ঠিকাদাররা আগ্রহী হননি বলেও জানায় সূত্রটি।
এ বিষয়ে পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) মো. রাইসুল ইসলাম জানান, লিফট স্থাপনের জন্য ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রাক্কলন জমা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বরাদ্দ পেলে নতুন দরপত্র আহ্বান করবেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের সীমানা দেয়াল নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
নতুন ভবনে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবলও পাওয়া যাবে বলে মনে করেন সিভিল সার্জন মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, এখানে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এলে জেলাবাসীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হবে না। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র হয় না নিউমুরিং টার্মিনালে
  • সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি হলেন আলমগীর হোসেন
  • লন্ডনের বৈঠকে ঠিক হয় ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন: মির্জা ফখরুল
  • দুদকের তদন্তাধীন প্রকল্পে অর্থছাড়ের সুপারিশ
  • সেবায় দুর্ভোগ, ৬ মাসেও হস্তান্তর হয়নি নতুন ভবন
  • অভিনয়ে নিজেকে ভাঙার মিশনে সামিরা খান মাহি