বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া সরকারের জন্য ভালো হবে
Published: 25th, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেসব উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তাঁদের সরিয়ে দেওয়া সরকারের জন্য ভালো হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। রোববার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
নুরুল হক বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবেই জানিয়েছি, যেসব উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে আমাদের আন্দোলনকারী ছাত্রনেতার মধ্যে যাঁরা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাঁরা যেহেতু একটি দল করেছেন এবং বাইরে এ কথাটি প্রচলিত আছে, এ দলটি সরকারের সুবিধা পাচ্ছে এবং সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। সেই কারণে আমরা বলেছি যে এই দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনসিপির দুজন উপদেষ্টা, তাঁদেরকে অপসারণ করা বা তাঁদেরকে বুঝিয়ে পদত্যাগের দিকে আপনার নিয়ে যাওয়া এটা সরকারের জন্য একটা ভালো দিক হবে।’
নুরুল হক বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আরও একজন উপদেষ্টা (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা) নিয়ে তারা দ্বিমত পোষণ করেছে। সংগত কারণেই এ রকম বিষয়গুলোকে সরকার যেন ইতিবাচকভাবে আমলে নেয় এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং উত্তরের প্রশাসকের হিযবুত তাহ্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে—এ বিষয়গুলোতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন তাঁরা।
সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, সরকার যেন সামরিক বাহিনীসহ পুরো প্রশাসনকে আস্থায় নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে যেন সরকারের একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বোঝাপড়া) থাকে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা সে বিষয়টায় গুরুত্ব দিয়েছেন যে যোগাযোগটা আগের চেয়ে আরও যেন ঘন ঘন হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন চট্টগ্রাম বন্দর এবং রাখাইনে করিডর দেওয়ার বিষয়ে আপাতত সিদ্ধান্ত না নেয়, এমন আহ্বান জানিয়েছেন নুরুল হক। তিনি বলেন, নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই করুক, সেটা চান তাঁরা।
‘আমরা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টা যেন একটা সুনির্দিষ্ট মাসের কথা বলেন যে এই মাসে সম্ভাব্য নির্বাচনটা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকার অভ্যন্তরীণভাবে কিংবা বাহ্যিকভাবে যে চাপগুলো কিংবা নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তারা অনুভব করছে বা করবে, সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের পরিপূর্ণ সহযোগিতা করব,’ বলেছেন নুরুল হক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ল হক সরক র র ন সরক র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভুলে যাবেন না, শরীরচর্চা একটি সুন্নত
খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়াম আধুনিক জীবনে প্রায়ই অবহেলিত হয়, বিশেষ করে ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু ইসলামে খেলাধুলার একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, যা নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে শুরু হয়েছে। তিনি নিজে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
শরীরচর্চার আধ্যাত্মিক উপকারিতাশরীরচর্চা ইসলামে একটি ভুলে যাওয়া সুন্নাহ, যা আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এটি আমাদের মনোযোগ ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, সম্প্রদায়ের বন্ধন জোরদার করে এবং হারাম থেকে দূরে রাখে। যেমন:
দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২১. মনোযোগ ও অবিচলতা গড়ে তোলে
ইসলাম আমাদের নিজেকে উন্নত করতে ও পরকালে উত্তম স্থান অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে শেখায়। শরীরচর্চা এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক; কারণ, এটি মনোযোগ, সংগ্রাম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আমাদের মন ও শরীরকে শক্তিশালী করে।
শারীরিক ব্যায়ামের সময় আমরা যখন মাত্রা অতিক্রম করে যাই, তখন তাৎক্ষণিক আরাম ত্যাগ করে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানসিক শক্তি অর্জন হয়।
আরও পড়ুনউত্তম ব্যবসায়ী হওয়ার নববি কৌশল০৯ জুন ২০২৫২. সমাজের শক্তি বৃদ্ধি করে
ইসলামে সামাজিক ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই এক উম্মাহর অংশ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এই যে তোমাদের উম্মাহ, এটা তো একই উম্মাহ, আর আমি তোমাদের রব, অতএব আমার ইবাদত করো।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯২)
জুমার নামাজ, হজের মতো ইবাদত আমাদের সম্প্রদায়ের বন্ধনকে শক্তিশালী করে।
দলগত খেলাধুলা বা ব্যায়াম অনুশলীন এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. হারাম থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়
আধুনিক সমাজে হারাম ক্রিয়াকলাপ—যেমন মদ্যপান, অবৈধ সম্পর্ক, জুয়া বা অনৈতিক কনটেন্ট—সহজলভ্য। এই প্রলোভনগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা, বিশেষ করে তরুণদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের সময় ও শক্তিকে ইতিবাচক কাজে লাগাতে সাহায্য করে। জিমে শরীরচর্চা বা মাঠে শারীরিক প্রশিক্ষণ আমাদের মনকে হারাম থেকে দূরে রাখে এবং দ্বীনের প্রতি নিবেদিত রাখে।
সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২)
শরীরচর্চা আমাদের স্বাস্থ্য ও সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা আমাদের দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য কল্যাণকর।
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫হাদিসে উল্লিখিত খেলাধুলানবীজি (সা.)-এর জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজে বিভিন্ন শারীরিক কসরতের মতো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর প্রশংসা করেছেন। কিছু উল্লেখযোগ্য খেলা হলো:
দৌড়: হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮)
বোঝা যায়, শুধু পুরুষ নয়, নারীদের জন্যও এ ধরনের খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শরীরচর্চা করা অনুমোদিত।
তিরন্দাজি: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তিরন্দাজি অনুশীলন করো, কারণ এটি তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯১৭)
তিরন্দাজি শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়ায়।
আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।হজরত আয়েশা (রা.), সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮ঘোড়দৌড়: নবীজি (সা.) ঘোড়দৌড়ের প্রশংসা করেছেন এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,৫৮৫)
সাঁতার: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তিরন্দাজি এবং ঘোড়সওয়ারি শেখাও।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬,৫৮২)
কুস্তি: নবীজি (সা.) একবার নিজেই রুকানা নামক একজন ব্যক্তির সঙ্গে কুস্তি লড়েছিলেন এবং তাঁকে পরাজিত করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৭৮)
এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে খেলাধুলা শুধু শারীরিকভাবে উপকারী নয়, বরং এটি সুন্নাহের একটি অংশ। নবীজির (সা.) জীবন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। আধুনিক বিশ্বে যেখানে সামাজিক বিভেদ ও হারামের প্রলোভন আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে, সেখানে এই খেলাধুলা ও শরীরচর্চা আমাদের দ্বীন ও সমাজকে শক্তিশালী করতে পারে।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫