পুশইন নিয়ে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দেখতে চায় না জনগণ
Published: 12th, July 2025 GMT
বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ক্রমাগত ভারতীয় পুশইনের প্রতিবাদে এবং এসব লোকজনকে পুশব্যাক করার দাবিতে রাজধানীতে নাগরিক সমাবেশ হয়েছে।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের উদ্যোগে এ নাগরিক সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী কথিত ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ধরতে অভিযান চলছে ভারতে। ‘অবৈধ অভিবাসী’ সন্দেহে বিভিন্ন রাজ্যে গ্রেপ্তার হওয়া মুসলমান এবং বাংলা ভাষাভাষীদের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় এনে তাদের তুলে দেওয়া হয় বিএসএফের হাতে। আর বিএসএফ সময় ও সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় তাদের।
৭ মে প্রথম দফায় খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়িতে ৬৬ এবং কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আরও ৩৬ জনকে দিয়ে শুরু হওয়া ‘পুশইন’ এখনও অব্যাহত রয়েছে। তারা বলেন, শুধু মে মাসেই ১ হাজার ২২২ জনকে ঠেলে দিয়েছে ভারত। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ২৪ দিনে মোট ১ হাজার ২২২ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারত।
বক্তারা বলেন, ভারতবিরোধী বড় বড় কথা বলে সস্তা বাহবা পাওয়া যেতে পারে। অথচ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমি বাতিল করা হয়নি, তিস্তা প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, ভেঙে পড়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা, অবাধ বিচরণ করছে অবৈধ ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতো নতজানু পররাষ্ট্রনীতিও লক্ষণীয়। এদেশের জনগণ আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দেখতে চায় না, দেশের মানুষ এখন স্বনির্ভর, জবাবদিহি ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির সম্পূর্ণ নতুন বাংলাদেশ চায়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিন সীমান্ত দিয়ে ৩৮ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
বাংলাদেশের তিন জেলার সীমান্ত দিয়ে আরও ৩৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত বুধবার গভীর রাত ও বৃহস্পতিবার সকালে তাদের ঠেলে পাঠানো হয়। পরে তাদের আটক করে পুলিশে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাদের মধ্যে ১৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের ও দু’জন পুরুষ। বিএসএফ বিজয়পুর বিওপির ১১৪৮/৪ এস থেকে প্রায় ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আড়াপাড়া এলাকায় তাদের ঠেলে দিলে আটক করে বিজিবি। আটকদের বাড়ি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, পটুয়াখালী, মৌলভীবাজার, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইলে।
নেত্রকোনা ৩১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম কামরুজ্জামান বলেন, তারা ৬ মাস থেকে ১২ বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতের দিল্লি গিয়েছিলেন। তাদের সেখানকার বিভিন্ন এলাকা থেকে একত্র করে বুধবার দিল্লির নাজিরাবাদ বিমানবন্দর দিয়ে উড়োজাহাজে আসামে আনা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে বিজয়পুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাদের দুর্গাপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ ১০ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে পুলিশে দিয়েছেন দুর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। আটক সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। তাদের মধ্যে চার শিশু, তিন নারী ও তিন পুরুষ রয়েছেন। লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা নিজেদের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছেন। তারা জানান, প্রায় ১০ বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে যান। সেখান থেকে বিএসএফ তাদের ধরে সীমান্ত পথে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে সাতজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে বিজিবি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি বাগেরহাট, ফরিদপুর, খুলনা ও বরগুনা জেলায়। ২০২১ সালে করোনাকালে ভারতে যান তারা। সবাই দিল্লিতে থাকতেন। বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শকের আহাম্মেদ বলেন, সাতজনকে থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি।
ভারতীয় ও রোহিঙ্গাদেরও ঠেলে দিচ্ছে বিএসএফ: বিজিবিপ্রধান
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বিএসএফ ভারতের নাগরিক ও রোহিঙ্গাদেরও বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। পুশইনের শিকারদের মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের কিছু নাগরিক ও রোহিঙ্গাকেও তারা জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শুরু থেকে আমরা এর কড়া প্রতিবাদ করে আসছি।’
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের বীরউত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেন বিজিবি মহাপরিচালক। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।