দিন যত যাচ্ছে, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদেরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এখন রোগটির প্রকোপ দেখে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি হচ্ছে, এমন এলাকায় বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এটা করতে না পারলে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬৯ জন। এর মধ্যে গত জুনেই আক্রান্ত ছিল ৫ হাজার ৯৫১। আর জুলাই তো আরও ভয়াবহ কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩ হাজার ৭৭৩ জনে গিয়ে ঠেকেছে।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুও বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫৪ জন। প্রথম পাঁচ মাসে মৃত্যু হয় ২৩ জনের। এরপর জুনে ১৯ জন আর জুলাইয়ের ১১ দিনেই মারা গেছেন ১২ জন। মোট মৃত্যুর অর্ধেকই ঢাকার দুই সিটিতে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি এলাকায় ২২ জন ও ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় ৫ জন মারা গেছেন।

ঢাকার দুই সিটি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী মশা নিধন কাজ করেছে তারা। পাশাপাশি বিশেষ কিছু কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মশার প্রজননস্থলের সন্ধান ও তা ধ্বংসে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে সভা, সেমিনার, প্রচারপত্র বিতরণ, স্বেচ্ছাসেবী সম্পৃক্ত করাসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।

মেয়র আসে মেয়র যায়, আশ্বাস শুনি, কিন্তু ডেঙ্গু থেকেই যায়। কারণ, মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি এক করে ফেলা। কিউলেক্স মশাকে টার্গেট করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে কোনো দিনও তা হবে না। অধ্যাপক কবিরুল বাশার, কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ

বছরব্যাপী কাজ করেও দুই সিটির মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘মেয়র আসে মেয়র যায়, আশ্বাস শুনি, কিন্তু ডেঙ্গু থেকেই যায়। কারণ, মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি এক করে ফেলা। কিউলেক্স মশাকে টার্গেট করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে কোনো দিনও তা হবে না। কিউলেক্স হয় নালা, নর্দমা, ডোবা ও পচা পানিতে। যারা ওষুধ ছিটায়, তারাও এসব জায়গাতেই ওষুধ দেয়। কিন্তু সেসব জায়গায় এডিস মশার প্রজনন খুবই খুবই কম।’

দুই সিটির ১৩টি ওয়ার্ডে উচ্চ ঝুঁকি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রতিবছর এডিস মশা নিয়ে জরিপ করে। কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় এডিস মশার লার্ভা কী পরিমাণে আছে, সেই ধারণা পাওয়া যায় জরিপের ব্রেটো ইনডেক্স (বিআই) থেকে। আইইডিসিআরের গত ৭–১৭ ফেব্রুয়ারিতে চালানো জরিপ অনুযায়ী, উত্তর সিটির ছয়টি ওয়ার্ডে ব্রেটো ইনডেক্স বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। দক্ষিণ সিটিতে এমন ওয়ার্ড ছিল ৭টি। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা উত্তর সিটির ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ২, ৮, ১১, ১২, ২২ ও ৩৪। দক্ষিণ সিটিতে উচ্চ ঝুঁকিতে ছিল ৩, ৪, ২২, ৩১, ৪১, ৪৬ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড।

এ বিষয়ে উত্তর সিটির স্বাস্থ্যপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বা আক্রান্ত রোগী বেশি, এমন ২৫টি ওয়ার্ডে বিশেষভাবে মশার উৎস ধ্বংস ও অপসারণ করা হচ্ছে। মশার যেসব উৎস সরানো যায় না, সেগুলোয় ওষুধ ছিটানো বা পানি জমে থাকে, এমন উৎসে নোভালুরন ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডে বিশেষ কার্যক্রম চলছে।

দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নিশাত পারভীন প্রথম আলোকে জানান, প্রতিদিনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর তালিকা ধরে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হবে। যেখানে কীটতত্ত্ববিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০টি অঞ্চলে একটি করে তদারকি দল গঠন করা হয়েছে। দলের সদস্যরা মশা নিধনের কর্মীদের উপস্থিতি, কীটনাশক প্রয়োগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি বাসাবাড়ি, আঙিনা ও ছাদ পরিদর্শনের বিষয়গুলো নিশ্চিত করবেন।

কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবিরুল বাশার মনে করেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। এ ক্ষেত্রে দুই সিটির করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হোম টু হোম অ্যাপ্রোচে’ (বাড়ি বাড়ি) যেতে হবে। যেটাকে চিরুনি অভিযান বলা হয়। প্রতিটি বাসায় এডিসের প্রজননস্থল খোঁজা, ধ্বংস করা ও লার্ভা নিধনের ওষুধ ছিটাতে হবে। কোনো বাসায় এডিসের লার্ভা প্রথম ও দ্বিতীয়বার পেলে সতর্ক করার পর তৃতীয়বার থেকে জরিমানা করতে হবে।

এই জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এডিস মশা হয় বাড়ি, বাড়ির আঙিনায়, বাড়ির বাইরে অফিস-আদালতে, যেখানে ছোট–বড় পাত্র আছে, বেজমেন্টের জমা পানিতে, নির্মাণাধীন ভবনে। কিন্তু এসব স্থানে মশকনিধনকর্মীরা যান না, অনেক সময় যেতেও পারেন না। এমন অনেক জায়গা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ওই জায়গায় করপোরেশনকে কাজ করতে হবে, পাশাপাশি নগরবাসীর সচেতনতা ও সম্পৃক্ততাও প্রয়োজন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আলাদাভাবে সারা বছর উৎস ধ্বংস, লার্ভা নিধন, প্রজননের হটস্পট ব্যবস্থাপনা ও জনগণকে সম্পৃক্ত করার কাজটি করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত এল ক য় য় এড স প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেট বোর্ডে ১৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার, কমেছে জিপিএ-৫

সিলেট বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় এবারের পাসের হার ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা গত ১৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী।
সিলেট বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর ২০০৬ সাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ক্রমেই বেড়েছে। ওই বছর পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এবারই প্রথম সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৬০ শতাংশের নিচে নেমেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত ফলাফল তুলে ধরেন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফলাফলে সব সূচকে এগিয়ে আছেন ছাত্রীরা। এবারের পরীক্ষায় ৪১ হাজার ৪০৮ জন ছাত্রী অংশ নিয়ে ২২ হাজার ১ জন পাস করেছেন। পাসের হার ৫৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২১ জন ছাত্রী।

অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৪৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ২৭ হাজার ৭৬৪ জন ছাত্র। এর মধ্যে পাস করেছেন ১৩ হাজার ৮৭০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৮১ জন।

বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৩৭৯ জন। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৪৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৫৩ জন। ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭০ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া, সিলেট বোর্ডের অধীনে এবারের পরীক্ষায় চারটি প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেননি।

বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ৬৯ হাজার ১৭২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৩৫ হাজার ৮৭১ জন; জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৬০২ জন। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত করোনা মহামারি, বন্যা পরিস্থিতি এবং ছাত্র আন্দোলনের কারণে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়নি। এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা ও ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্যের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া কলেজ শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি কম হওয়াও পাসের হার কম হওয়ার অন্যতম কারণ।

আনোয়ার হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, সিলেট বোর্ডের পাসের হার বৃদ্ধি করতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগভিত্তিক যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ