ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের শঙ্কা, বাড়ি বাড়ি অভিযানের পরামর্শ
Published: 12th, July 2025 GMT
দিন যত যাচ্ছে, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদেরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এখন রোগটির প্রকোপ দেখে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি হচ্ছে, এমন এলাকায় বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এটা করতে না পারলে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬৯ জন। এর মধ্যে গত জুনেই আক্রান্ত ছিল ৫ হাজার ৯৫১। আর জুলাই তো আরও ভয়াবহ কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩ হাজার ৭৭৩ জনে গিয়ে ঠেকেছে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুও বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫৪ জন। প্রথম পাঁচ মাসে মৃত্যু হয় ২৩ জনের। এরপর জুনে ১৯ জন আর জুলাইয়ের ১১ দিনেই মারা গেছেন ১২ জন। মোট মৃত্যুর অর্ধেকই ঢাকার দুই সিটিতে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি এলাকায় ২২ জন ও ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় ৫ জন মারা গেছেন।
ঢাকার দুই সিটি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী মশা নিধন কাজ করেছে তারা। পাশাপাশি বিশেষ কিছু কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মশার প্রজননস্থলের সন্ধান ও তা ধ্বংসে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে সভা, সেমিনার, প্রচারপত্র বিতরণ, স্বেচ্ছাসেবী সম্পৃক্ত করাসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
মেয়র আসে মেয়র যায়, আশ্বাস শুনি, কিন্তু ডেঙ্গু থেকেই যায়। কারণ, মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি এক করে ফেলা। কিউলেক্স মশাকে টার্গেট করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে কোনো দিনও তা হবে না। অধ্যাপক কবিরুল বাশার, কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞবছরব্যাপী কাজ করেও দুই সিটির মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘মেয়র আসে মেয়র যায়, আশ্বাস শুনি, কিন্তু ডেঙ্গু থেকেই যায়। কারণ, মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি এক করে ফেলা। কিউলেক্স মশাকে টার্গেট করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে কোনো দিনও তা হবে না। কিউলেক্স হয় নালা, নর্দমা, ডোবা ও পচা পানিতে। যারা ওষুধ ছিটায়, তারাও এসব জায়গাতেই ওষুধ দেয়। কিন্তু সেসব জায়গায় এডিস মশার প্রজনন খুবই খুবই কম।’
দুই সিটির ১৩টি ওয়ার্ডে উচ্চ ঝুঁকিস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রতিবছর এডিস মশা নিয়ে জরিপ করে। কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় এডিস মশার লার্ভা কী পরিমাণে আছে, সেই ধারণা পাওয়া যায় জরিপের ব্রেটো ইনডেক্স (বিআই) থেকে। আইইডিসিআরের গত ৭–১৭ ফেব্রুয়ারিতে চালানো জরিপ অনুযায়ী, উত্তর সিটির ছয়টি ওয়ার্ডে ব্রেটো ইনডেক্স বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। দক্ষিণ সিটিতে এমন ওয়ার্ড ছিল ৭টি। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা উত্তর সিটির ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ২, ৮, ১১, ১২, ২২ ও ৩৪। দক্ষিণ সিটিতে উচ্চ ঝুঁকিতে ছিল ৩, ৪, ২২, ৩১, ৪১, ৪৬ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড।
এ বিষয়ে উত্তর সিটির স্বাস্থ্যপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বা আক্রান্ত রোগী বেশি, এমন ২৫টি ওয়ার্ডে বিশেষভাবে মশার উৎস ধ্বংস ও অপসারণ করা হচ্ছে। মশার যেসব উৎস সরানো যায় না, সেগুলোয় ওষুধ ছিটানো বা পানি জমে থাকে, এমন উৎসে নোভালুরন ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডে বিশেষ কার্যক্রম চলছে।
দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নিশাত পারভীন প্রথম আলোকে জানান, প্রতিদিনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর তালিকা ধরে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হবে। যেখানে কীটতত্ত্ববিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০টি অঞ্চলে একটি করে তদারকি দল গঠন করা হয়েছে। দলের সদস্যরা মশা নিধনের কর্মীদের উপস্থিতি, কীটনাশক প্রয়োগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি বাসাবাড়ি, আঙিনা ও ছাদ পরিদর্শনের বিষয়গুলো নিশ্চিত করবেন।
কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবিরুল বাশার মনে করেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। এ ক্ষেত্রে দুই সিটির করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হোম টু হোম অ্যাপ্রোচে’ (বাড়ি বাড়ি) যেতে হবে। যেটাকে চিরুনি অভিযান বলা হয়। প্রতিটি বাসায় এডিসের প্রজননস্থল খোঁজা, ধ্বংস করা ও লার্ভা নিধনের ওষুধ ছিটাতে হবে। কোনো বাসায় এডিসের লার্ভা প্রথম ও দ্বিতীয়বার পেলে সতর্ক করার পর তৃতীয়বার থেকে জরিমানা করতে হবে।
এই জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এডিস মশা হয় বাড়ি, বাড়ির আঙিনায়, বাড়ির বাইরে অফিস-আদালতে, যেখানে ছোট–বড় পাত্র আছে, বেজমেন্টের জমা পানিতে, নির্মাণাধীন ভবনে। কিন্তু এসব স্থানে মশকনিধনকর্মীরা যান না, অনেক সময় যেতেও পারেন না। এমন অনেক জায়গা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ওই জায়গায় করপোরেশনকে কাজ করতে হবে, পাশাপাশি নগরবাসীর সচেতনতা ও সম্পৃক্ততাও প্রয়োজন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আলাদাভাবে সারা বছর উৎস ধ্বংস, লার্ভা নিধন, প্রজননের হটস্পট ব্যবস্থাপনা ও জনগণকে সম্পৃক্ত করার কাজটি করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত এল ক য় য় এড স প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ঘাতক যতই প্রভাবশালী হোক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি খেলাফত মজলিসের
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় বীভৎস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘাতক যতই প্রভাবশালী হোক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের। এই হত্যাকাণ্ড জাহেলি যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহমদ আবদুল কাদের এসব কথা বলেন। দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
খুনিদের শাস্তির দাবি জানিয়ে আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ডে যে রোমহর্ষ ও বীভৎস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা জাহেলি যুগের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। একজন জীবন্ত মানুষকে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করা হচ্ছে, আর লোকজন দাঁড়িয়ে তা দেখছে। সন্ত্রাসীদের হাতে কোনো মারণাস্ত্র না থাকলেও নির্মম ঘটনায় কেউ বাধা দিতে এগিয়ে আসেনি। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ঘাতক যতই প্রভাবশালী হোক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড–পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত ভূমিকা হতাশাজনক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার দুই দিন পর প্রশাসনের টনক নড়ে। ইতিমধ্যে মূল অপরাধীদের বাদ দিয়ে মামলার অভিযোগ এসেছে। যৌথ বাহিনীর টহল চললেও এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না।’
আধিপত্যবাদী ও চাঁদাবাজদের নিপীড়ন জনগণ আর সহ্য করবে না বলে মন্তব্য করেন আহমদ আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ঘাতক ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই স্থানীয় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় উঠে এসেছে। এভাবে প্রায় এক বছর নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বে বিএনপিসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।
আহত ও জখম হয়েছে অসংখ্য সাধারণ মানুষ। ৫ আগস্ট–পরবর্তীতে এগুলো কখনো মেনে নেওয়া যায় না। হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ হতে হয়েছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তাই আধিপত্যবাদী ও চাঁদাবাজদের সাবধান হয়ে যেতে হবে। জনগণ আগের মতো নিপীড়ন মুখ বুঝে আর সহ্য করবে না। দেশপ্রেমিক ইসলামি শক্তি ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা সবার মধ্যে সুস্থ রাজনীতির চর্চা দেখতে চাই।’
খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক শায়খুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি রায়হান আলী প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন।