অবসর জীবনে গিয়ে অনেকে আর্থিকভাবে অসচ্ছলতার মধ্যে পড়েন। কয়েক দশক চাকরির পর সরকারি চাকরিজীবীরা যে পেনশনের টাকা পান, সেই টাকা ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ না করার জন্য শেষ বয়সে অনেক অবসরভোগী নানা ধরনের বিপত্তিতে পড়েন।

তাই অবসর জীবনের সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা করা উচিত। কর্মজীবন শেষ হওয়ার পর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনি আগেভাগেই প্রস্তুতি নেন। সঠিক পরিকল্পনা করলে অবসর জীবনে অর্থকষ্টের ভয় থাকে না। পাশাপাশি স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন সম্ভব হয়। বাংলাদেশে এখন চলছে জনসংখ্যাভিত্তিক অর্থনৈতিক সুবিধার সময়। এখন তরুণ জনগোষ্ঠী বেশি। কয়েক বছর পর থেকে ধীরে ধীরে বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়বে। তাই বেশি বয়সের আর্থিক পরিকল্পনা করা দরকার।

এবার দেখা যাক কী ধরনের আর্থিক পরিকল্পনা করলে আপনি অবসর জীবনেও ভালো থাকবেন। নিজের কষ্টের উপার্জিত টাকা কীভাবে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করবেন, তা দেখে নিন।

১.

ভবিষ্যতের প্রয়োজন ঠিক করুন

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর। এই হিসাবটি ধরলে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা বেসরকারি কর্মকর্তা ৬০ বছর বয়সের পর অবসরে যান। এর পরের ১৫-২০ বছরের আর্থিক পরিকল্পনা করতে পারেন। প্রথমেই ঠিক করুন, অবসর জীবনে প্রতি মাসে কত টাকা খরচ হতে পারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ, যাতায়াত, ভ্রমণ, উৎসব, সামাজিক অনুষ্ঠানের কত খরচ হতে পারে, তা ভেবে দেখুন।

২. সম্পদ ও আয় কত

অবসরে যাওয়ার পর আপনার সঞ্চয়, জমি, ফ্ল্যাট, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার ইত্যাদির হিসাব করে নিন। এর মূল্য কত, তা–ও বিবেচনায় নিন। এসব উৎস থেকে আয় কত আসে, তা হিসাব করে দেখুন। এ ছাড়া পেনশন আয়ের হিসাবও করুন। এরপর দেখে নিন, অবসর জীবনে এসব খাত থেকে আপনার প্রতি মাসে বা বছরে আয় কত হয়। এই আয় আপনার জীবনযাপনে কতটা সচ্ছলতা দেবে, তা চিন্তা করুন।

৩. বিনিয়োগের পরিকল্পনায় কী দেখবেন

অবসর জীবনে কোথায় বিনিয়োগ করবেন, তা আগে ঠিক করে রাখুন। তবে যেখানে ঝুঁকি কম, সেখানেই বিনিয়োগ করতে হবে। এমন বেশ কিছু বিনিয়োগ ক্ষেত্র আছে। যেমন সঞ্চয়পত্র। কারণ, সঞ্চয়পত্রে গ্যারান্টিসহ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মুনাফা বা রিটার্ন পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অবসর জীবনে সবচেয়ে নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ।

বেসরকারি খাতের ব্যক্তিদের জন্য সরকার ২০২৩ সালে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। বর্তমানে চালু থাকা সর্বজনীন পেনশন স্কিমগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস। এর মাধ্যমে কর্মজীবী, অনিয়মিত আয়ের মানুষ ও প্রবাসীরা পেনশন সুবিধার আওতায় আসার সুযোগ পাচ্ছেন।

এ ছাড়া ডিপোজিট পেনশন স্কিমের (ডিপিএস) মাধ্যমে মাসিক অল্প টাকা জমিয়ে বড় অঙ্ক তৈরি করা যায়। শেয়ারবাজারেও বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে এখানে অবশ্যই ঝুঁকির কথা বিবেচনা করতে হবে।

এ ছাড়া জমিজমা, ফ্ল্যাটের পাশাপাশি স্বর্ণালংকার বিনিয়োগ করতে পারেন। এটি অবশ্য বেশি অর্থ বিনিয়োগের বিষয়। এ জন্য আপনাকে নিজের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে।

৪. অবসরে ঋণমুক্ত থাকুন, চাপ কম নিন

অবসরকালীন সময়ে ঋণমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। এতে আপনার ওপর মানসিক চাপ কম থাকবে। এ জন্য অবসরের আগে যতটা সম্ভব ঋণ কম নিন। যাতে অবসর জীবনে ঋণ পরিশোধের চাপে কম পড়েন। তাই অবসরে যাওয়ার আগেই ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকঋণের বোঝা কমিয়ে ফেলুন।

৫. স্বাস্থ্যবিমা করুন

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা যায়। তাই অবসর জীবনে চিকিৎসা খরচের চাপ কমাতে স্বাস্থ্যবিমা করতে পারেন। ভালো মানের স্বাস্থ্য বিমা থাকলে বড় ধরনের আর্থিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যবিমাকে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করুন।

৬. খরচে মিতব্যয়ী হন, তবে নিজেকে বঞ্চিত করে নয়

অবসর জীবনে আনন্দ ও মানসিক প্রশান্তি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের এমন প্রশান্তি দরকার। তাই বিনোদন ও ভ্রমণের জন্য আলাদা সময় বের করুন। এ জন্য বাড়তি বাজেট রাখতে পারেন।

৭. অর্থনীতির রূপান্তর ও মূল্যস্ফীতি ভুলে যাবেন না

আজকে যে টাকার মূল্যমান আছে, তা ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে। বর্তমানে ১ হাজার টাকা দিয়ে যা কিনতে পারেন, তা দিয়ে ১০ বছর পর ওই সব পণ্য কিনতে পারবেন না। মূল্যস্ফীতি হবেই। তাই এসব মূল্যস্ফীতির কথা বিবেচনায় এনে ভবিষ্যৎ খরচের কথা হিসাব করুন। আজ যা পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে, ১০ বছর পর তা অপ্রতুল হয়ে যেতে পারে। তাই মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় কিছু বিনিয়োগ এমনভাবে করবেন, যেন ভবিষ্যতে আয় বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতির চাপেও প্রয়োজন যেন মেটানো যায়।

৮. জরুরি তহবিল গঠন করুন

বিপদ–আপদসহ যেকোনো সময় আপনি আর্থিক সংকটে পড়তে পারেন। তাই অন্তত ৩-৬ মাসের খরচের সমান জরুরি তহবিল গঠন করে রাখতে পারেন, যা অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার মতো পরিস্থিতিতে কাজে আসবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প নশন স সরক র ধরন র আপন র করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমি একা হয়ে গিয়েছিলাম’—তামিমের আবেগঘন স্বীকার

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল সমকালের সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে তার আন্তর্জাতিক অবসর অপ্রত্যাশিত বা আবেগঘটিত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। বরং ছয় থেকে আট মাস ধরে চলা দৃঢ় মানসিক চাপ ও দল থেকে বঞ্চনার কারণেই তিনি বাধ্য হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দিতে।

তামিম বলেন, ‘যখন ২০২৩ সালে খবরটা দিলাম, অনেক মিডিয়া ধারণা করেছে আবেগে ছেড়েছি। কিন্তু সত্যিই, আমি দীর্ঘ সময় সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম।’

এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তামিম যোগ করেন, ‘সেখানে আমি একা অনুভব করতে শুরু করি। আমি সব সময় সবাইকে নিয়ে গল্প করতে পছন্দ করি। আড্ডা দিতে ভালোবাসি। হঠাৎ এসব থেকে আমাকে একা করে দেওয়া হলো। সেই অভাবটা আমি মেনে নিতে পারিনি।’

তামিম জানালেন, ‘অবসর জানাতে আমার পরিবারের সঙ্গেই কথা হয়েছে। হ্যাঁ, যেদিন ঘোষণা দিয়েছি, সেদিন আবেগাপ্লুত ছিলাম। তবে বেশ আগেই যে প্রেক্ষাপট তৈরি হতে শুরু করেছে, তা অনেকেই জানেন না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোস্তাফিজ, রিশাদসহ আরও যাঁরা আছেন বিগ ব্যাশের ড্রাফটে
  • বেশি টাকা কামাতে ভারত দল থেকে নায়ারকে অবসর নিতে বলেছিলেন এক তারকা ক্রিকেটার
  • সঞ্চয়পত্র কেনায় ১০ পরামর্শ
  • নতুন চক্রে ফাইনালে চোখ শ্রীলঙ্কার
  • টাইমড আউট নিয়ে ম্যাথুজ, ‘আমাকে টার্গেট করা হয়েছিল’
  • ‘আমি একা হয়ে গিয়েছিলাম’—তামিমের আবেগঘন স্বীকার