আজমেরী হক বাঁধন। অভিনেত্রী ও মডেল। ঈদে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘এশা মার্ডার’। প্রথমবারের মতো এ সিনেমায় পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। চরিত্রটিতে বেশ সাড়া পাচ্ছেন। সানী সানোয়ার পরিচালিত এ সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।

‘এশা মার্ডার : কর্মফল’ সিনেমা দিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। কেমন লাগছে?
সিনেমাটিতে আমি যে রকম সাড়া চেয়েছিলাম, সে রকম পাচ্ছি। এটি আমাকে বেশ আনন্দ দিয়েছে। একটা নারীপ্রধান গল্প; যেখানে নায়ক নেই, সেই রকম একটি সিনেমা হাউসফুল যাবে, দর্শকের উপড়ে পড়া ভিড় হবে– তা ভাবিনি। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি।

দর্শকের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
আমি সব সময় দর্শকের কাছে থাকতে চেয়েছি। আমি ওই মানুষটা হতে চাইনি, যে আকাশের তারা হয়ে ঘুরে বেড়াবে। সাধারণ জনগণ তাকে দূর থেকে দেখবে। যাকে ছোঁয়া যায়, যার কষ্ট অনুভব করা যায়, যার আনন্দ উপভোগ করা যায়–সে রকম একটা মানুষ হতে চেয়েছি। হলে হলে ঘোরার সময় ভক্তরা বলেন, ‘আপু আপনি যখন জিতে যান, তখন আমাদের মনে হয় আমরাই জিতে গেছি।’ এটি  আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কমপ্লিমেন্ট। আমার সাফল্য তাদের ছুঁয়ে যায়। দর্শকের এই অভূতপূর্ব সাড়া আমি সারাজীবন মনে রাখব। একটা উদ্দেশ্য নিয়ে সিনেমাটি করেছি। সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে দর্শকের কারণেই। আমি চেয়েছিলাম– দর্শক সিনেমাটি দেখবেন এবং এটি নিয়ে কথা বলবেন। সেটি হচ্ছে। এটি দর্শকমনে নাড়া দিচ্ছে। তারা নিজেদের ট্রমাগুলোর সঙ্গে কানেক্ট করতে পেরেছেন।

সিনেমাটি চালানোর জন্য আপনি সিঙ্গেল স্ক্রিন হল মালিকদের ঝুঁকি নিতে বলেছেন। কোন ভাবনা থেকে এমনটি মনে করছেন?
সিনেমাটি সাধারণ মানুষের দেখার জন্য। এটি তাদেরই গল্প। মফস্বল থেকে উঠে আসা এক মেয়ের গল্প। সিঙ্গেল স্ক্রিনে না যাওয়া পর্যন্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এটি কানেক্ট করতে পারবে না। আমার বিশ্বাস, এটি সিঙ্গেল স্ক্রিনেও দর্শক পছন্দ করবেন। কারণ এখন পর্যন্ত যারাই দেখেছেন, তাদের অনেকেই কাঁদতে কাঁদতে হলে থেকে বের হয়েছেন। তারা সিনেমার গল্প ও চরিত্রের সঙ্গে নিজেদের কানেক্ট করতে পেরেছেন। সিঙ্গেল স্ক্রিনের প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের আবারও অনুরোধ জানাব, আপনারা সিনেমাটি চালাবেন, একটু ঝুঁকি নিয়েই দেখুন। সব সময় একই ধরনের সিনেমা চালাবেন, এটা তো হয় না। আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। আমাদের পাশে থাকেন, ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেন। স্টার সিনেপ্লেক্সে ভায়োলেন্স দিয়ে ভরা সিনেমাগুলোই হাউসফুল যাচ্ছে। সেসব সিনেমায় ক্রিমিন্যাল কিংবা ক্রাইমকে গ্লোরিফাই করা হচ্ছে। সত্যি বলতে কী, আমার অভিনীত সিনেমার সব শো কিন্তু হাউসফুল যাচ্ছে না। তার পরও সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সামাজিক ও ইন্ডাস্ট্রির দায়বদ্ধতা থেকে সিনেমাটি চালিয়ে যাচ্ছে। স্টার সিনেপ্লেক্স বা যমুনা ব্লকবাস্টার কর্তৃপক্ষ যখন এ দায়িত্ব পালন করছে, সিঙ্গেল স্ক্রিনের মালিকরা কেন এটি পারবেন না? তাদেরও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। নতুন নতুন টেস্টের সিনেমাকে দর্শক পর্যন্ত নিতে হবে। তাদের রুচি পরিবর্তনেরও তো আমাদের দায়িত্ব আছে। 

ঈদে অন্যান্য সিনেমা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ঈদে ‘তাণ্ডব’ ছাড়া সব সিনেমাই দেখেছি। আমাদের দেখা সবচেয়ে ভালো সিনেমা ‘উৎসব’। অসাধারণ একটি সিনেমা। এটি অনেক জেন্ডার সেনসেটিভ, পলিটিক্যালি অ্যাওয়ার সিনেমা। দর্শকের প্রতি সন্তুষ্ট যে তারা এ ধরনের সিনেমা দেখছেন।

সিনেমার প্রচার-প্রচারণার রথ একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সব সময়। কখনও ক্লান্ত লাগে না? 
একা পথ চলতে চলতে অভ্যেস হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেই শক্তি দিয়েছেন আমি যেন একা একা একটি সিনেমাকে টেনে যেতে পারি। সুপারস্টারের সঙ্গে কাজ করছি বলে হলে দর্শক আসবেন– এই আশা করে ঘরে বসে থাকা যাবে না। আমরা সমাজ পরিবর্তনের জন্য কিছু করতে চাই। সেই কাজগুলো তো মানুষকে দেখাতে হবে।

মেয়ের কাছ থেকে আপনি কতটা সাপোর্ট পাচ্ছেন?
আমার সব শক্তির উৎস মেয়ে মিশেল আমানি সায়রা। মেয়ের জন্মের পর আমি যে টিকে আছি,  তার পুরো কৃতিত্ব আমার মেয়ের। ও খুবই সাপোটিভ। ঈদের পর থেকে এত ব্যস্ত ছিলাম যে, ওর সঙ্গে ঠিকভাবে সময় কাটানো হয়নি। ঈদের দিন ‘এশা মার্ডার : কর্মফল’ সিনেমা দেখে বাসায় ফিরে মনটা ভেঙে গিয়েছিল। হলে খুব কম লোক ছিল। তা দেখে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। তখন সে বলেছিল, ‘মা, আজ ঈদের দিন। সবাই ব্যস্ত। বিশ্বাস করো, সিনেমা দেখতে লোক আসবেই। আমার সঙ্গে সিনেমাটি দেখার পর সে বলেছিলে, ‘এটি তোমার সেরা কাজগুলোর একটি।’ আর মেয়েই আমার কাজের বড় সমালোচক। আবার সেই সবচেয়ে বড় ভরসাও। ওর প্রতিটি পদক্ষেপ শক্তি হয়ে পাশে থেকেছে।

চলচ্চিত্রের এই সময়কে কীভাবে দেখছেন?
চলচ্চিত্রে নতুন জোয়ার এসেছে। নতুন নতুন নির্মাতারা আসছেন কাজ করতে। তাদের যত সুযোগ দেওয়া হবে, ইন্ডাস্ট্রি তত পরিবর্তন হবে। যারা সফল নির্মাতা, প্রযোজক আছেন তাদের মানসিক পরিবর্তন দরকার। সমাজের প্রতি তাদের যে দায়বদ্ধতা আছে, সেটা যদি তারা সচেতনভাবে বুঝতেন, তাহলে আরও ভালো হতো। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আরও এগিয়ে যেত।  

নতুন কাজ শুরুর বিষয়ে কী ভাবছেন?
শিগগিরই নতুন একটি সিনেমায় কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। যখন শুটিংয়ে যাবো, তখন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাব। ডিসেম্বরে আরও একটি সিনেমার কাজ শুরু হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার আসল কারণ জানালো তদন্তকারী সংস্থা

ভারতের আহমেদাবাদে গত মাসে ২৬০ যাত্রী নিয়ে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, উড্ডয়নের তিন সেকেন্ড পরেই বিমানটির ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচগুলো প্রায় একইসঙ্গে ‘চালু’ অবস্থা থেকে ‘বন্ধ’ অবস্থায় চলে যায়। ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। খবর সিএনএনের।

শনিবার (১২ জুলাই) ভারতের এভিয়েশন দুর্ঘটনা তদন্তকারীদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কারণে বোয়িং–৭৮৭ ড্রিমলাইনারটির গতি দ্রুত কমতে শুরু করে এবং নিচের দিকে নামতে থাকে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানটি ১৮০ নট গতিতে পৌঁছানোর পর মাত্র ১ সেকেন্ডের ব্যবধানে দুইটি ইঞ্জিনের জ্বালানি কাট-অফ সুইচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে এক পাইলটকে অপর পাইলটকে জিজ্ঞেস করতে শোনা যায়, তিনি কেন জ্বালানি বন্ধ করেছেন। জবাবে ‘অপর পাইলট বলেন, তিনি জ্বালানি বন্ধ করেননি।’

আরো পড়ুন:

সংসার ভাঙছে নয়নতারার?

লর্ডসে ব্যতিক্রমী ধৈর্য, রুটের ৯৯ রানে ভর করে লড়াইয়ে ইংল্যান্ড

এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করা হলেও ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। ইঞ্জিন রিস্টার্টের প্রক্রিয়ায় থাকতেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। সেসময় বিমানের র‍্যাম এয়ার টারবাইন (আরএএম) চালু হয়ে যায়, যা জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার অংশ। বিমানটি রানওয়ে পার হয়ে খুব দ্রুত উচ্চতা হারিয়ে ফেলে এবং পাশের বিজে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হোস্টেলে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়।

তদন্তকারীরা বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকে উদ্ধার করা ৪৯ ঘণ্টার ফ্লাইট ডেটা ও দুই ঘণ্টার ককপিট অডিও বিশ্লেষণ করে এই তথ্য খুঁজে বের করতে সমর্থ হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা যে, সেগুলো সহজে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ডেভিড সোসি বলেন, “এই সুইচগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে নাড়াচাড়া করার জন্য তৈরি। দুই ইঞ্জিনের জ্বালানি কাট-অফ সুইচ অনিচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল।”

দুর্ঘটনাগ্রস্ত ফ্লাইট ‘এআই ১৭১’-এ ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক। এছাড়াও, মাটিতে থাকা বেশ কয়েকজন লোক নিহত হন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের বাসিন্দা। সব মিলিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬০ জনে।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করছে এবং দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পাশে রয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “এআই ১৭১ ফ্লাইট দুর্ঘটনায় যেসব পরিবার প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাই এবং এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে আছি।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ