আমি একা সিনেমা টেনে নিয়ে যেতে পারি, সে শক্তি আমার আছে: বাঁধন
Published: 18th, June 2025 GMT
আজমেরী হক বাঁধন। অভিনেত্রী ও মডেল। ঈদে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘এশা মার্ডার’। প্রথমবারের মতো এ সিনেমায় পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। চরিত্রটিতে বেশ সাড়া পাচ্ছেন। সানী সানোয়ার পরিচালিত এ সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
‘এশা মার্ডার : কর্মফল’ সিনেমা দিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। কেমন লাগছে?
সিনেমাটিতে আমি যে রকম সাড়া চেয়েছিলাম, সে রকম পাচ্ছি। এটি আমাকে বেশ আনন্দ দিয়েছে। একটা নারীপ্রধান গল্প; যেখানে নায়ক নেই, সেই রকম একটি সিনেমা হাউসফুল যাবে, দর্শকের উপড়ে পড়া ভিড় হবে– তা ভাবিনি। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি।
দর্শকের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
আমি সব সময় দর্শকের কাছে থাকতে চেয়েছি। আমি ওই মানুষটা হতে চাইনি, যে আকাশের তারা হয়ে ঘুরে বেড়াবে। সাধারণ জনগণ তাকে দূর থেকে দেখবে। যাকে ছোঁয়া যায়, যার কষ্ট অনুভব করা যায়, যার আনন্দ উপভোগ করা যায়–সে রকম একটা মানুষ হতে চেয়েছি। হলে হলে ঘোরার সময় ভক্তরা বলেন, ‘আপু আপনি যখন জিতে যান, তখন আমাদের মনে হয় আমরাই জিতে গেছি।’ এটি আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কমপ্লিমেন্ট। আমার সাফল্য তাদের ছুঁয়ে যায়। দর্শকের এই অভূতপূর্ব সাড়া আমি সারাজীবন মনে রাখব। একটা উদ্দেশ্য নিয়ে সিনেমাটি করেছি। সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে দর্শকের কারণেই। আমি চেয়েছিলাম– দর্শক সিনেমাটি দেখবেন এবং এটি নিয়ে কথা বলবেন। সেটি হচ্ছে। এটি দর্শকমনে নাড়া দিচ্ছে। তারা নিজেদের ট্রমাগুলোর সঙ্গে কানেক্ট করতে পেরেছেন।
সিনেমাটি চালানোর জন্য আপনি সিঙ্গেল স্ক্রিন হল মালিকদের ঝুঁকি নিতে বলেছেন। কোন ভাবনা থেকে এমনটি মনে করছেন?
সিনেমাটি সাধারণ মানুষের দেখার জন্য। এটি তাদেরই গল্প। মফস্বল থেকে উঠে আসা এক মেয়ের গল্প। সিঙ্গেল স্ক্রিনে না যাওয়া পর্যন্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এটি কানেক্ট করতে পারবে না। আমার বিশ্বাস, এটি সিঙ্গেল স্ক্রিনেও দর্শক পছন্দ করবেন। কারণ এখন পর্যন্ত যারাই দেখেছেন, তাদের অনেকেই কাঁদতে কাঁদতে হলে থেকে বের হয়েছেন। তারা সিনেমার গল্প ও চরিত্রের সঙ্গে নিজেদের কানেক্ট করতে পেরেছেন। সিঙ্গেল স্ক্রিনের প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের আবারও অনুরোধ জানাব, আপনারা সিনেমাটি চালাবেন, একটু ঝুঁকি নিয়েই দেখুন। সব সময় একই ধরনের সিনেমা চালাবেন, এটা তো হয় না। আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। আমাদের পাশে থাকেন, ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেন। স্টার সিনেপ্লেক্সে ভায়োলেন্স দিয়ে ভরা সিনেমাগুলোই হাউসফুল যাচ্ছে। সেসব সিনেমায় ক্রিমিন্যাল কিংবা ক্রাইমকে গ্লোরিফাই করা হচ্ছে। সত্যি বলতে কী, আমার অভিনীত সিনেমার সব শো কিন্তু হাউসফুল যাচ্ছে না। তার পরও সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সামাজিক ও ইন্ডাস্ট্রির দায়বদ্ধতা থেকে সিনেমাটি চালিয়ে যাচ্ছে। স্টার সিনেপ্লেক্স বা যমুনা ব্লকবাস্টার কর্তৃপক্ষ যখন এ দায়িত্ব পালন করছে, সিঙ্গেল স্ক্রিনের মালিকরা কেন এটি পারবেন না? তাদেরও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। নতুন নতুন টেস্টের সিনেমাকে দর্শক পর্যন্ত নিতে হবে। তাদের রুচি পরিবর্তনেরও তো আমাদের দায়িত্ব আছে।
ঈদে অন্যান্য সিনেমা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ঈদে ‘তাণ্ডব’ ছাড়া সব সিনেমাই দেখেছি। আমাদের দেখা সবচেয়ে ভালো সিনেমা ‘উৎসব’। অসাধারণ একটি সিনেমা। এটি অনেক জেন্ডার সেনসেটিভ, পলিটিক্যালি অ্যাওয়ার সিনেমা। দর্শকের প্রতি সন্তুষ্ট যে তারা এ ধরনের সিনেমা দেখছেন।
সিনেমার প্রচার-প্রচারণার রথ একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সব সময়। কখনও ক্লান্ত লাগে না?
একা পথ চলতে চলতে অভ্যেস হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেই শক্তি দিয়েছেন আমি যেন একা একা একটি সিনেমাকে টেনে যেতে পারি। সুপারস্টারের সঙ্গে কাজ করছি বলে হলে দর্শক আসবেন– এই আশা করে ঘরে বসে থাকা যাবে না। আমরা সমাজ পরিবর্তনের জন্য কিছু করতে চাই। সেই কাজগুলো তো মানুষকে দেখাতে হবে।
মেয়ের কাছ থেকে আপনি কতটা সাপোর্ট পাচ্ছেন?
আমার সব শক্তির উৎস মেয়ে মিশেল আমানি সায়রা। মেয়ের জন্মের পর আমি যে টিকে আছি, তার পুরো কৃতিত্ব আমার মেয়ের। ও খুবই সাপোটিভ। ঈদের পর থেকে এত ব্যস্ত ছিলাম যে, ওর সঙ্গে ঠিকভাবে সময় কাটানো হয়নি। ঈদের দিন ‘এশা মার্ডার : কর্মফল’ সিনেমা দেখে বাসায় ফিরে মনটা ভেঙে গিয়েছিল। হলে খুব কম লোক ছিল। তা দেখে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। তখন সে বলেছিল, ‘মা, আজ ঈদের দিন। সবাই ব্যস্ত। বিশ্বাস করো, সিনেমা দেখতে লোক আসবেই। আমার সঙ্গে সিনেমাটি দেখার পর সে বলেছিলে, ‘এটি তোমার সেরা কাজগুলোর একটি।’ আর মেয়েই আমার কাজের বড় সমালোচক। আবার সেই সবচেয়ে বড় ভরসাও। ওর প্রতিটি পদক্ষেপ শক্তি হয়ে পাশে থেকেছে।
চলচ্চিত্রের এই সময়কে কীভাবে দেখছেন?
চলচ্চিত্রে নতুন জোয়ার এসেছে। নতুন নতুন নির্মাতারা আসছেন কাজ করতে। তাদের যত সুযোগ দেওয়া হবে, ইন্ডাস্ট্রি তত পরিবর্তন হবে। যারা সফল নির্মাতা, প্রযোজক আছেন তাদের মানসিক পরিবর্তন দরকার। সমাজের প্রতি তাদের যে দায়বদ্ধতা আছে, সেটা যদি তারা সচেতনভাবে বুঝতেন, তাহলে আরও ভালো হতো। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আরও এগিয়ে যেত।
নতুন কাজ শুরুর বিষয়ে কী ভাবছেন?
শিগগিরই নতুন একটি সিনেমায় কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। যখন শুটিংয়ে যাবো, তখন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাব। ডিসেম্বরে আরও একটি সিনেমার কাজ শুরু হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
হাউজবোট নিয়ন্ত্রণসহ ৬ দাবি টাঙ্গুয়ার হাওরবাসীর
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরকে বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে হাউজবোটের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃপক্ষের আরোপিত শর্ত মেনে পরিচালনা করাসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়েছে। ‘হাওর অঞ্চলবাসী’র ব্যানারে বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয়।
হাওর অঞ্চলবাসীর দাবিগুলো হলো– পর্যটন ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে প্লাস্টিক, ব্যবহৃত পলিথিন, বোতল প্রভৃতি সংগ্রহ করে সরকার নির্ধারিত স্থানে ফেলা বা রিসাইকেল করার ব্যবস্থা; সরকারি উদ্যোগে টাঙ্গুয়ার হাওরে সুনির্দিষ্ট দায়দায়িত্বসহ পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রকাশ ও প্রচার; জেলা প্রশাসকের সহায়তায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে মনুষ্যবর্জ্য ব্যবস্থাপনা; মানুষের চলাচল, অবস্থান, শব্দ, আলো প্রভৃতি যাতে পাখি, মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণীর ক্ষতি না করে, সেরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জেলা প্রশাসন কর্তৃক নিয়মিত মনিটরিং করা।
মানববন্ধনে হাওর অঞ্চলবাসীর প্রধান সমন্বয়ক ড. হালিম দাদ খান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এলাকার অন্যতম হচ্ছে রামসার সাইট। সেখানে অবাধে পাখি উড়ে বেড়ায়, মাছেরা সাঁতার কাটে। বর্তমানে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবসার ফলে এই চিত্র উধাও হতে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ২০০ হাউজবোটে হাজার হাজার পর্যটক সময়ে-অসময়ে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে, রাত্রিযাপন করছে। তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসা পলিথিন, প্লাস্টিক, বোতল ও মনুষ্যবর্জ্য পানিতে পড়ে স্বচ্ছ পানিকে দূষিত করছে। মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠছে। কৃষি কাজেরও অসুবিধা হচ্ছে। উচ্চ শব্দের গান-বাজনা, উদ্দাম নৃত্য, রাতের উজ্জ্বল আলোর কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ২০১৮ সালের পাখিশুমারী অনুযায়ী টাঙ্গুয়ার হাওরে জলচর পাখির সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজারে।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ উমর খৈয়াম, হাওর উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন, হাওর অঞ্চলবাসীর সমন্বয়ক জাকিয়া শিশির, সদস্য জেসমিন নূর, বোরহান উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী; প্রাণী ও প্রকৃতি রক্ষা ফাউন্ডেশনের ইবনুল সাঈদ রানা, হাওর অঞ্চলবাসী ঢাকা জেলার সদস্যসচিব কামরুল হাসান প্রমুখ।