আয়ুষ্মান খুরানা ও তাহিরা কাশ্যপ বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় দম্পতি। তাঁদের রসায়ন ও বোঝাপড়া ভক্তরা দারুণ পছন্দ করেন। তবে তাঁদের শুরুর সময়টা সহজ ছিল না। দাম্পত্য জীবনের শুরুতে ভীষণ আর্থিক কষ্টে কেটেছে তাঁদের সময়। এমনও দিন পার করতে হয়েছে, যখন বাজার করার মতো টাকাও তাঁদের হাতে থাকত না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিয়ের শুরুর দিকের কঠিন সময়ের স্মৃতি তুলে ধরেছেন তাহিরা।

‘দ্য অফিশিয়াল পিপল অব ইন্ডিয়া’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাহিরা জানিয়েছেন, বিয়ে–পরবর্তী সময় তাঁদের জন্য ছিল ভীষণ কঠিন। কারণ, আয়ুষ্মান তখন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা ছিলেন না। আয়ুষ্মানের কাছে তখন তেমন আয় ছিল না। তাহিরার রোজগারে চলত সংসার। তাহিরাও একসময় বেকার হয়ে পড়েন, তখন সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালান তিনি। কিন্তু একটা সময় পর তা–ও শেষ হয়ে যায়। এ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও মা–বাবার কাছ থেকেও সাহায্য চাননি তাহিরা।
নিজেদের অবস্থার কথা বলতে গিয়ে তাহিরা বলেন, ‘এই ছেলেটার (আয়ুষ্মান) কোনো ধারণাই ছিল না যে ঘরে বাজার কীভাবে আসছিল। আমার ব্যাংকের সঞ্চয় আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায়। খুব খারাপ পরিস্থিতি দেখতে হয় আমাদের। কোনো দিন কারও কাছ থেকে টাকা চাইনি, এমনকি বাবা-মায়ের কাছ থেকেও না।’

আয়ুষ্মান ও তাহিরা পরিবার.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আয় ষ ম ন

এছাড়াও পড়ুন:

নেতানিয়াহু কেন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে টানতে মরিয়া?

গত ১৩ জুন বিনা উস্কানিতে ইরানে সামরিক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তেহরানের সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পাশাপাশি দেশটির জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বসহ শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে আইডিএফ। জবাবে পাল্টা আক্রমণ করেছে ইরান। ষষ্ঠ দিনের মতো পাল্টাপাল্টি আক্রমণে বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধের পরিসর বিস্তৃত হলে ‘ছোট্ট’ ইসরায়েলের পক্ষে তা সামাল দেওয়া মোটেই সহজ হবে না। ফলে প্রধান মিত্রদের টেনে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলমান সংঘাতের শুরুর দিকেই ইরানের সেনাপ্রধানসহ ১৪ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এছাড়া বেসামরিক নাগরিকসহ নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। ইরানের পাল্টা হামলায় প্রায় ৩০ জনের মতো নিহত হয়েছে ইসরায়েলেও। এ যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে এখনো ‘ক্যালকুলেট’ করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।

দীর্ঘদিন ধরে একটি বিস্তৃত সংঘাতের উস্কানি দেওয়ার চেষ্টায় ছিল ইসরায়েল। সেই দিকেই এগুচ্ছে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি। ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। সম্প্রতি সিরিয়ায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্যও কৃতিত্ব দাবি করেছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। এখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খা-মেনিকে হত্যা করে সরকার উৎখাতের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন তারা। কিন্তু ইরানের সুরক্ষিত সামরিক স্থাপনা ধ্বংস এবং দেশটির নেতৃত্বকে উৎখাত করার মতো সক্ষমতা ইসরায়েলের একার নেই। ফলে পশ্চিমা মিত্রদের প্রত্যক্ষ সহায়তা প্রয়োজন। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কৌশল- সংঘাত আরও বিস্তৃত করা; যাতে ওয়াশিংটনকে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে বাধ্য করা যায়। এছাড়া ইরানের সঙ্গে পুরোনো দ্বন্দ্ব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ইরান সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করে ‘বড় শয়তান’ আর তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র ইসরায়েলকে মনে করে ‘ছোট শয়তান’।

ইসরায়েলকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা
ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর দ্বিতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয় ইরান। দুই দেশের সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণই ছিল। তবে সম্পর্ক বদলে যায় ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর। আর ওই সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে। তেহরানের উত্থানকে তারা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ও ইসরায়েলি আধিপত্যের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে উদীয়মান আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে দমন করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন কৌশল হল এই অঞ্চলে ভারসাম্য বজায় রাখা।

১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেন যখন কুয়েত আক্রমণ করেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র ইরান ও ইরাক উভয়কেই লক্ষ্য করে দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ নীতির দিকে মনোনিবেশ করে। একইসাথে এই অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। সে সময় ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা।

১৯৯৬ সালের মে মাসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ওই সময় ক্লিনটন প্রশাসনের মধ্যে ইসরায়েলপন্থী নীতিনির্ধারকরা ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিল। সেই বছরের শেষ নাগাদ, ‘আ ক্লিন ব্রেক: আ নিউ স্ট্রেটিজি ফর সিকিউরিং দ্য রিলম’ শীর্ষক একটি কৌশলগত নীল নকশা প্রকাশিত হয়। সেই নিরাপদ ‘রাজ্য’ যুক্তরাষ্ট্র নয় বরং সেটি ছিল ইসরায়েল।

ন্যাটোর প্রাক্তন কমান্ডার জেনারেল ওয়েসলি ক্লার্ক ২০০৩ সালে প্রকাশ করেন- ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পরপরই বুশ প্রশাসনের নব্য রক্ষণশীলরা মধ্যপ্রাচ্যকে ইসরায়েলের পক্ষে পুনর্গঠনের জন্য একটি ব্যাপক পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। আফগানিস্তানে তালেবানদের উৎখাতের পর পরিকল্পনাটি ছিল- সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে আক্রমণ ও বিভক্ত ফেলা। দেশগুলো হলো- ইরাক, লেবানন, সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান, সোমালিয়া এবং অবধারিতভাবে ইরান।

‘দ্য ইসরায়েল লবি অ্যান্ড ইউএস ফরেন পলিসি’ বইতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন মেয়ারশাইমার এবং স্টিফেন ওয়াল্ট দৃঢ়ভাবে যুক্তি দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থী শক্তি ইরাক আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল। তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই অঞ্চলে তাদের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়- এমন যেকোনো সরকারকে দুর্বল বা অপসারণের জন্য কাজ করেছে। বলাবাহুল্য, এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ক্লার্কের তালিকাভুক্ত দেশ। তবে এই কৌশল বাস্তবায়নে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইরান। কয়েক দশক ধরে নিষেধাজ্ঞা, বিচ্ছিন্নতা ও পশ্চিমা অস্থিতিশীলতা অভিযান সত্ত্বেও ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিপ্লবী ভিত্তি বহিরাগত চাপ ও শাসন পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অনন্যভাবে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তি হিসেবে থাকার আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেই এমন কৌশল নিয়েছে ইসরায়েল। তবে তেলআবিবের এই অভিলাষ ‘ব্যাকফায়ার’ হতে পারে। এক্ষেত্রে কৌশলগত ব্যর্থতায় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও একটি ব্যয়বহুল ও অজেয় যুদ্ধে টেনে আনতে পারে।

পারমাণবিক অস্ত্রের অজুহাত
গত ২৫ বছর ধরে নেতানিয়াহু ক্রমাগত সতর্ক করে আসছেন যে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে মাত্র ‘সপ্তাহ দূরে’। তবে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে এমন কোনো প্রমাণ আজও মেলেনি।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য স্থায়ী সদস্যরা (জার্মানিসহ) ইরানের সঙ্গে একটি যুগান্তকারী চুক্তিতে পৌঁছায়। চুক্তিটি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত। এটি ইরানকে এনপিটির কাঠামোর মধ্যে থেকে কঠোর আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দিয়েছিল। তবে নেতানিয়াহু ও মার্কিন কংগ্রেসে তার মিত্ররা চুক্তিটি বাতিল করার জন্য প্রচারণা শুরু করে।

২০১৮ সালে তারা ট্রাম্পকে জেসিপিওএ থেকে সরে আসতে রাজি করাতে সফল হয়। তারপর থেকে ট্রাম্প ও বাইডেন উভয় প্রশাসনই ‘সর্বোচ্চ চাপ’ দেওয়ার কৌশল অনুসরণ করে আসছে। সেই থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, আর্থিক বিধিনিষেধ ও রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা আরোপ করে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

যদিও তাদের এই কৌশল পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করেছে। মাত্র ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে তা ৬০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তেহরানের সংগ্রহে বর্তমানে ৪০০ কেজিরও বেশি ইউরেনিয়াম রয়েছে, যা দিয়ে অন্তত ১০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরি করা সম্ভব।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর, নতুন একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই চুক্তিতে রাজি করানো গেলে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে। প্রচারণার সময় তিনি নতুন যুদ্ধ এড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সমর্থনের পাশাপাশি ইরানে হামলাও প্রশংসা করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।

এদিকে নিজে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে যেকোনো আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক সক্ষমতা বিকাশেরও বিরোধিতা করে আসছে। তারা ১৯৮১ সালে ইরাকে এবং ২০০৭ সালে সিরিয়ায় পারমাণবিক চুল্লিতে বোমা হামলা চালিয়েছিল। যদিও এখন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি।

কৌশলগত ভুল হিসাব
২০২৫ সালের এপ্রিলে ইরানকে ৬০ দিনের একটি আল্টিমেটাম দেন ট্রাম্প। ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা কার্যকরভাবে শেষ করে দিতে চুক্তি সই করতে ছিল ওই সময় বেধে দেওয়া। পাঁচ দফা আলোচনার পর, ১৫ জুন ষষ্ঠ দফা আলোচনার জন্য নির্ধারিত ছিল। তবে এর দুদিন আগে ইরানে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল। আর এই হামলার বিষয়ে ওয়াশিংটন অবহিত ও তাদের এতে সমর্থন ছিল বলে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন।

তাদের এই প্রতারণা কাজ করেছিল। ১৩ জুন ইসরায়েল একটি বড় ধরনের হামলা চালিয়ে ২০ জনেরও বেশি ঊর্ধ্বতন ইরানি সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে। তাদের লক্ষ্য কেবল আলোচনাকে ভন্ডুল করা ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা ছিল না বরং ইরানের সামরিক নেতৃত্ব ও পারমাণবিক বিশেষজ্ঞদের পঙ্গু করা। আর মূল এজেন্ডা ছিল খোমেনি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের আশা।

ওই হামলার পর নেতানিয়াহু যখন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন; ইসরায়েলিরা উল্লসিত হয়েছিলেন- তখন ট্রাম্প কিছুটা কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কারণ, বিশ্বের বহু বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ ইসলামী প্রজাতন্ত্রের জন্য শোকবার্তা লিখছিলেন এবং আনন্দ করছিলেন। কিন্তু এই ঘটনায় মার্ক টোয়েনের সেই বিখ্যাত ঘটনা মনে পড়ে যায়। তিনি একবার ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন- ‘আমার মৃত্যুর খবর অত্যন্ত অতিরঞ্জিত।’ ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, ‘প্রথম গুলি কে চালায় তা মূখ্য নয়, বরং শেষ গুলি কে চালায় সে জয়ী হয়’।

যদি কেউ এই সংঘাতের পরবর্তী তারিখগুলোতে বিজয়ীদের নির্ধারণ করতে চায়- যেমন ১৯৮০ সালের অক্টোবরে ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ১৯৮২ সালের আগস্টে লেবাননে ইসরায়েলি আক্রমণ, অথবা ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ এবং ২০০৩ সালের মার্চ মাসে ইরাক- তাহলে তারা প্রতিটি ক্ষেত্রেই ফলাফলের ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করত।

যাইহোক, বর্তমান সংঘাতে, ইরান তাৎক্ষণিক ও জোরালো প্রতিক্রিয়া জানায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নতুন কমান্ডার নিয়োগ করেন, যারা তেল আবিব, হাইফা ও অন্যান্য ইসরায়েলি শহরগুলোকে লক্ষ্য করে প্রতিশোধ হিসেবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের বিশাল আক্রমণ চালান। ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রতিক্রিয়ার পরিধি এবং মাত্রা এটি ছিল অভূতপূর্ব।

তাদের এই আক্রমণে নাস্তানাবুদ হয়ে যায় ইসরায়েল। ব্যর্থ হয় শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। লক্ষ লক্ষ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়। গর্বিত আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ডুবে যায়। তবে ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য নেতানিয়াহুর আহ্বান উদ্ধত, অতিআত্মবিশ্বাসী ও ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে।

বাক্সবন্দী ইসরায়েল

ইসরায়েল একটি ভয়াবহ কৌশলগত দ্বিধাগ্রস্ততার মুখোমুখি। মার্কিন সামরিক সাহায্য ছাড়া তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে পারবে না। তারা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন আনতে পারবে না। কয়েক দশক ধরে প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে নেতানিয়াহু উন্মত্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে টেনে আনার চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে, ট্রাম্প গুরুতর বাধার সম্মুখীন। তার অনেক সমর্থকও এ যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার তীব্র বিরোধিতা করেছে। ফলে ইরানের সাথে যুদ্ধ তার অভ্যন্তরীণ এজেন্ডাকে বিপন্ন করতে পারে এবং চীনের মতো ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাছাড়া, এই অঞ্চলে মার্কিন স্থাপনাগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েক ডজন ঘাঁটিতে ৯০ হাজার মার্কিন সেনা (বেশিরভাগই যুদ্ধের পরিবর্তে সহায়তা এবং রসদ সরবরাহের ভূমিকায়) অবস্থান করছে, যার মধ্যে অনেকগুলো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরিসরের মধ্যে রয়েছে।

একটি বৃহত্তর সংঘাত ইরানকে হরমুজ প্রণালী অবরোধ করতে প্ররোচিত করতে পারে, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের ২১ শতাংশ প্রবাহিত হয়, অথবা উপসাগরীয় অঞ্চলে তেলক্ষেত্রগুলোতে আক্রমণ করতে পারে- যা সম্ভাব্যভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে বলা যায় ইসরায়েল নিজেকে বাক্সবন্দী করে ফেলেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি ভবিষ্যতে তিনটি সংকটের সূত্রপাত হতে পারে

১. দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ: এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল ও ইরান একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে। যদিও এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। ইরান যদি আরও হামলার শিকার হয় এবং পাল্টা ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে থাকে তাহলে ইসরায়েলের পরাজিত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। এতে ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা ধ্বংসের চেষ্টা ব্যর্থ হবে এবং দেশটি আরও পরমাণু সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।

২) মার্কিন হস্তক্ষেপ: যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে এবং তেহরানকে একটি নতুন চুক্তিতে বাধ্য করতে চাইছে। কিন্তু এটি বিশ্ব অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করতে পারে। ইরানের আদর্শ এবং রাশিয়া ও চীনের সাথে তার কৌশলগত সম্পর্কের কারণে মার্কিন লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা কম।

৩) আঞ্চলিক সংঘাত: একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধ একাধিক পক্ষকে আকৃষ্ট করে। বিদ্যমান নিয়মকানুন ভেঙে বিশ্বব্যাপী সংঘাতের সূত্রপাত ঘটায়। কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন যে এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করতে পারে।

নেতানিয়াহু যদি যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে টেনে আনতে ব্যর্থ হন এবং ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ভেঙে ফেলতে না পারেন বা শাসনব্যবস্থার পতন ঘটাতে না পারেন, তাহলে ইসরায়েলের প্রতিরোধ ক্ষমতা স্থায়ীভাবে দুর্বল হয়ে যাবে। এই ধরনের আঘাত ইসরায়েলকে গাজায় তার ধ্বংসাত্মক গণহত্যা বন্ধ করতে বাধ্য করবে। একইসঙ্গে অপ্রতিরোধ্য আঞ্চলিক আধিপত্যের অভিলাষ ত্যাগ করতেও বাধ্য করতে পারে।

ভ্লাদিমির লেনিন একবার বলেছিলেন- ‘এমন কিছু দশক আছে যেখানে কিছুই ঘটে না; আবার এমন কিছু সপ্তাহ আছে যেখানে দশক ঘটে।’ আগামী সপ্তাহগুলোতে বিশ্ব হয়তো সেই ঐতিহাসিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

লেখক: সামি আল-আরিয়ান
জন্মসূত্রে ফিলিস্তিনি আরিয়ান একজন লেখক, শিক্ষাবিদ, বক্তা ও মানবাধিকার কর্মী। তুরস্কের ইস্তাম্বুল জাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইসলাম অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সে (সিআইজিএ) পরিচালক হিসেবে কর্মরত।

(মিডল ইস্ট  আই থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তর করেছেন অনি আতিকুর রহমান)

সম্পর্কিত নিবন্ধ