নবীনবরণে দেখা সেই ছেলেটিকে খুঁজছি
Published: 18th, June 2025 GMT
‘আব্বা, আমি আয়া পড়ছি’
ঈদের ছুটি প্রায় শেষ। কাল ভার্সিটিতে চলে যাব। সকাল থেকেই বাড়ির জন্য মন পুড়ছে। বাবার কথা মনে পড়ছে। মনটা ভীষণ ভারী। তাই জুমার নামাজ শেষে একবার বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়েছি। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছি, আমার বাবা আমার প্রতি অবিচার করেছেন। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আমি বলতেই পারি, অন্য দুই সহোদর যতটুকু পিতৃস্নেহ পেয়েছে, তার তুলনায় আমি কম পেয়েছি। এই অদ্ভুত অনুযোগ শুনে বাবা যেন অকস্মাৎ আমার পিঠে হাত রেখে বলছেন, ‘বাবা জিমু, তোমারে তো আমি অনেক আদর করিরে ফুত। সবারত্তে বেশি আদর করি। ভালো কইরা ফইরো।’
ঘটনার আকস্মিকতায় কবরের পাশে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকি। কেমন করে এমন দিব্যকর্ণপ্রাপ্ত হলাম! বাবার মৃত্যুর সময় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ঢাকায় ছিলাম। শুনেছি মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত বাবা নাকি আর্তনাদ করে গেছেন, ‘আমার ফুত কই? কোনসম আইবো?’ তাঁর জীবদ্দশায় আর আমাকে দেখতেও পাননি। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি এলে রোজ একবার বাবার কাছে যাই। রোজ বলি, ‘এই তো আব্বা, আমি আয়া পড়ছি।’
মোয়াজ্জিম হুসাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রিয় মানুষকে নিয়েআমার জীবনের একটি অংশ আপনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি যেকোনো সমস্যায় আপনাকে সব সময় পাশে পেয়েছি। আপনি ছায়ার মতো আমার পাশে ছিলেন। আপনার সঙ্গে যখনই কথা বলি, মনের সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। আমার কখনো নিজেকে একা মনে হয়নি। আপনি চিরদিন আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় থাকবেন। আমি বাকি জীবন আপনার পরামর্শে এগিয়ে যেতে চাই। জীবনের বাকি সময় আপনার আদর্শে বেঁচে থাকতে চাই।
ফারহান নাজীব, গাজীপুর
সেই ছেলেটাকে খুঁজছিকলেজে নবীনবরণের ভিড়ে প্রথম দেখা। চোখে চোখ পড়তেই বুকটা ধক করে উঠল। প্রেম মনে হয় একেই বলে। লম্বা, ছিপছিপে গড়ন, শেভ করা মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম। টানা কয়েক মিনিটে পুরো চেহারাটা স্ক্যান করলাম ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে। তারপর একপলকে কোথায় যেন হারিয়ে গেল! সেই মুখটা আর খুঁজেই পাইনি, একটা বছর কেটে গেল। সব বিভাগের ক্লাসেই ঘুরে ঘুরে খুঁজেছি, পাইনি। দেখা যদি নাইবা দেবে আর, তবে কেন এমন করে প্রেমের আগুনে পোড়ালে। গাঢ় সবুজ পাঞ্জাবির সেই নাম না–জানা ছেলেটিকে কোথায় খুঁজে পাব?
বুশরা, কুমিল্লা
আপনার প্রিয় ঋতুআপনার প্রিয় ঋতু বর্ষা এসে গেছে! ভেবেছিলাম আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু পারলাম না। কারণ, আপনার আইডি তখন নিদ্রায়। কিছুদিন পর আবারও শীতনিদ্রা ভেঙে আপনি এলেন। মিচকে শয়তানের মতো আমিও আপনার আইডিতে ঢুঁ মারি প্রতিনিয়ত। আপনার শেয়ার করা পোস্টগুলো দেখে হাসি। কিছু একটা লিখতে গিয়েও লেখা হয়ে ওঠে না, যদি সুযোগসন্ধানী মনে করেন। একটি নাটকের জনপ্রিয় চরিত্রের কারণে আপনার ‘পারমিতা’ নামটি আমাদের বাসায় দিনে বেশ কয়েকবার উচ্চারিত হয়। তখন অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করে। তবে আমার মনে হয় আপনার নামটি উপন্যাসেই ভালো মানায়। দিন শেষে অনুপম রায়ের কাছ থেকে ধার নিয়ে বলি-
‘যদি কোনোদিন তুমি দু’হাত দিয়ে ঝিনুক কুড়াও
নেই আমি সেই অল্প ভাঙা গল্পগুলোয়.
বাকিটুকু আপনিই নাহয় গাইলেন।
হিমু, কক্সবাজার
আরও পড়ুনপালিয়ে না এলে জীবনটা হয়তো এত সুন্দর হতো না০৮ এপ্রিল ২০২৩আমাকে যেদিন খুঁজে পাবে নাআমি হেরে যাওয়া মানুষের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি। আমার মনে হয়, একটা দুঃখী মানুষ, হেরে যাওয়া মানুষের পাশে থাকলে সে জিতে যাবে। দেখলাম, আমাকে পাশে পাওয়ার পর সে নতুনভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা খুঁজে পেয়েছে। আমি তাকে যেকোনো মূল্যে জেতাতে চাই। তবে শর্ত একটাই, জেতার পর আমি আবার অপরিচিত হয়ে যাব।
মারিয়ানা, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
লেখা পাঠানোর ঠিকানামনের বাক্সে পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘মনের বাক্স’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘মনের বাক্স’)
ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA
আরও পড়ুনপ্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন স্ত্রী২৮ আগস্ট ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য শ বব দ য ল আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ভুলে যাবেন না, শরীরচর্চা একটি সুন্নত
খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়াম আধুনিক জীবনে প্রায়ই অবহেলিত হয়, বিশেষ করে ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু ইসলামে খেলাধুলার একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, যা নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে শুরু হয়েছে। তিনি নিজে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
শরীরচর্চার আধ্যাত্মিক উপকারিতাশরীরচর্চা ইসলামে একটি ভুলে যাওয়া সুন্নাহ, যা আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এটি আমাদের মনোযোগ ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, সম্প্রদায়ের বন্ধন জোরদার করে এবং হারাম থেকে দূরে রাখে। যেমন:
দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২১. মনোযোগ ও অবিচলতা গড়ে তোলে
ইসলাম আমাদের নিজেকে উন্নত করতে ও পরকালে উত্তম স্থান অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে শেখায়। শরীরচর্চা এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক; কারণ, এটি মনোযোগ, সংগ্রাম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আমাদের মন ও শরীরকে শক্তিশালী করে।
শারীরিক ব্যায়ামের সময় আমরা যখন মাত্রা অতিক্রম করে যাই, তখন তাৎক্ষণিক আরাম ত্যাগ করে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানসিক শক্তি অর্জন হয়।
আরও পড়ুনউত্তম ব্যবসায়ী হওয়ার নববি কৌশল০৯ জুন ২০২৫২. সমাজের শক্তি বৃদ্ধি করে
ইসলামে সামাজিক ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই এক উম্মাহর অংশ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এই যে তোমাদের উম্মাহ, এটা তো একই উম্মাহ, আর আমি তোমাদের রব, অতএব আমার ইবাদত করো।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯২)
জুমার নামাজ, হজের মতো ইবাদত আমাদের সম্প্রদায়ের বন্ধনকে শক্তিশালী করে।
দলগত খেলাধুলা বা ব্যায়াম অনুশলীন এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. হারাম থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়
আধুনিক সমাজে হারাম ক্রিয়াকলাপ—যেমন মদ্যপান, অবৈধ সম্পর্ক, জুয়া বা অনৈতিক কনটেন্ট—সহজলভ্য। এই প্রলোভনগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা, বিশেষ করে তরুণদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের সময় ও শক্তিকে ইতিবাচক কাজে লাগাতে সাহায্য করে। জিমে শরীরচর্চা বা মাঠে শারীরিক প্রশিক্ষণ আমাদের মনকে হারাম থেকে দূরে রাখে এবং দ্বীনের প্রতি নিবেদিত রাখে।
সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২)
শরীরচর্চা আমাদের স্বাস্থ্য ও সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা আমাদের দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য কল্যাণকর।
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫হাদিসে উল্লিখিত খেলাধুলানবীজি (সা.)-এর জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজে বিভিন্ন শারীরিক কসরতের মতো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর প্রশংসা করেছেন। কিছু উল্লেখযোগ্য খেলা হলো:
দৌড়: হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮)
বোঝা যায়, শুধু পুরুষ নয়, নারীদের জন্যও এ ধরনের খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শরীরচর্চা করা অনুমোদিত।
তিরন্দাজি: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তিরন্দাজি অনুশীলন করো, কারণ এটি তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯১৭)
তিরন্দাজি শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়ায়।
আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।হজরত আয়েশা (রা.), সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮ঘোড়দৌড়: নবীজি (সা.) ঘোড়দৌড়ের প্রশংসা করেছেন এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,৫৮৫)
সাঁতার: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তিরন্দাজি এবং ঘোড়সওয়ারি শেখাও।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬,৫৮২)
কুস্তি: নবীজি (সা.) একবার নিজেই রুকানা নামক একজন ব্যক্তির সঙ্গে কুস্তি লড়েছিলেন এবং তাঁকে পরাজিত করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৭৮)
এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে খেলাধুলা শুধু শারীরিকভাবে উপকারী নয়, বরং এটি সুন্নাহের একটি অংশ। নবীজির (সা.) জীবন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। আধুনিক বিশ্বে যেখানে সামাজিক বিভেদ ও হারামের প্রলোভন আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে, সেখানে এই খেলাধুলা ও শরীরচর্চা আমাদের দ্বীন ও সমাজকে শক্তিশালী করতে পারে।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫