আইএমও নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে নরওয়েসহ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন দাবি
Published: 18th, June 2025 GMT
২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের ক্যাটাগরি ‘সি’ এর সদস্য হিসেবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। আসন্ন এ নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে নরওয়েসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন দাবি করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
বুধবার (১৮ জুন) বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করতে এলে উপদেষ্টা এ দাবি জানান।
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম কান্ট্রি। আমাদের একটি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মোট চারটি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিভিন্নভাবে নদ-নদী ও মেরিটাইম সেক্টরের উপর নির্ভরশীল। বিদ্যমান তিনটি বৃহৎ সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে।”
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রশংসা করলেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত
কুয়েতে ঈদের দিন রাষ্ট্রদূত ও প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়
তিনি বলেন, “অন্তত ৫৪টি প্রধান নদীবন্দর রয়েছে। হাজারের উপর নদ-নদী দেশজুড়ে জালের মতো বিস্তৃত। দেশে ১০ হাজার কিলোমিটারের অধিক বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ নৌপথ রয়েছে। দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরকে আরো এগিয়ে নিতে এবং মেরিটাইম সেক্টরের বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখতে বাংলাদেশ আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘোষণা করেছে।”
উপদেষ্টা বাংলাদেশের সামুদ্রিক ঐতিহ্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত অবস্থান এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান অবদান তুলে ধরে বলেন, “মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের শক্তিশালী অংশগ্রহণ রয়েছে। মেরিটাইম সেক্টরের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার (আইএমও) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরের বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী বিষয়েও বাংলাদেশের ভূমিকা রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ হাজারের বেশি জাহাজ, ৯৫টি সমুদ্রগামী ও ২০ হাজারের বেশি উপকূলীয় জাহাজ আসে।”
তিনি টেকসই সামুদ্রিক উন্নয়নের প্রতি দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আইএমও’র কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থনের কথা জানান।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জাহাজ শিল্পে নরওয়ে সরকারকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাহাজ পুনঃব্যবহার খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ১২০ এর বেশি নারীসহ ২১ হাজার প্রশিক্ষিত নাবিক দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নাবিক কল্যাণ ও জেন্ডার অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখছে।”
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বলেন, “দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জাহাজ নির্মাণ ও পুনঃব্যবহার খাতে নরওয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। নরওয়ের বিভিন্ন কোম্পানিও জাহাজ শিল্পসহ অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।”
এ সময় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আইএমও কনভেনশন বাস্তবায়ন, ডিজিটালাইজেশন এবং সমুদ্র দূষণ রোধে বাংলাদেশের সতর্ক অবস্থানের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে পরিবেশ সুরক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, “মাতারবাড়ি ও মোংলা গভীর সমুদ্র বন্দরের ডকইয়ার্ড নির্মাণে নরওয়ে কারিগরি সহায়তা ও আর্থিক বিনিয়োগ করতে পারে। নরওয়ে সরকারের মতো বাংলাদেশ সরকারও সমুদ্রে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনতে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে বন্দরগুলোকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনতে অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে। নরওয়ে সরকার বাংলাদেশের বন্দরগুলোকে গ্রিন পোর্টে রূপান্তরিত করতে সহযোগিতা করবে বলে আশা করছি।”
রাষ্ট্রদূত এসব বিষয়ে বাংলাদেশকে নরওয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, “নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে। আসন্ন আইএমও নির্বাচনেও বাংলাদেশের প্রার্থীতার পক্ষে নরওয়ে সরকার সমর্থন করবে।” তিনি বাংলাদেশ সরকারকেও এ নির্বাচনে নরওয়ের সমর্থন জানানোর অনুরোধ জানান।
সাক্ষাৎকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ আইএমও এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর হিসেবে ২০২৪-২৫ মেয়াদে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
ঢাকা/এএএম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক উন স ল উপদ ষ ট নরওয় র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েল ম্যাচের লভ্যাংশ নোবেলজয়ী এনজিওর মাধ্যমে গাজার মানুষদের দেবে নরওয়ে
নরওয়ে ফুটবল ফেডারেশন (এনএফএফ) জানিয়েছে, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচের লভ্যাংশ ‘ডক্টরস উইথআউট বর্ডারস’ এনজিওকে দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সাহায্য দেয় ১৯৯৯ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী এই সংস্থা। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আগামী ১১ অক্টোবর ‘আই’ গ্রুপ থেকে অসলোয় স্বাগতিক হয়ে ইসরায়েলের মুখোমুখি হবে নরওয়ে।
যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত এমন ৭০টি দেশে জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে ‘ডক্টরস উইথআউট বর্ডারস’। এই স্বাধীন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে পথচলার বিষয়টি গতকাল জানায় এনএফএফ।
আরও পড়ুনইউনাইটেডের জার্সি পরে আসায় নিজেদের কর্মীকে ছাঁটাই করল ম্যান সিটি৪ ঘণ্টা আগে২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর গাজায় সামরিক হামলা চালায় ইসরায়েল এবং তাতে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ওই অঞ্চলে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এনএফএফ সভাপতি লিসে ক্লাভেনেস বিবৃতিতে বলেন, ‘২৬ বছরের মধ্যে এই প্রথম ছেলেদের কোনো আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে আমাদের। একই সময়ে এই ম্যাচটি এমন এক সময়ে খেলা হচ্ছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে মারাত্নক মানবিক বিপর্যয় ঘটছে...ওই অঞ্চলে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে, আমরা তা দেখে উদাসীন থাকতে পারি না এবং থাকব না; বিশেষ করে গাজায় সাধারণ মানুষদের ওপর যেভাবে হামলা চালানো হচ্ছে।’
ক্লাভেনেস বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘আমরা লভ্যাংশ এমন একটি সংস্থাকে দিতে চাই, যারা গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন জীবন বাঁচায় এবং জরুরি সাহায্য পাঠায়। ডক্টরস উইথআউট বর্ডারস ঠিক এই কাজই করে।’
এনএফএফ জানিয়েছে, তাদের ঘোষণার পর নরওয়ের অন্যতম বড় একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এই এনজিওর মাধ্যমে গাজায় ৩ লাখ ৫ হা্জার ডলার সাহায্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।
আরও পড়ুননাটকীয়তা ও রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের অপেক্ষা৬ ঘণ্টা আগেইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া মানুষদের সাহায্যের সিদ্ধান্ত গত মাসেই জানিয়েছিল নরওয়ে ফুটবল। গাজায় হামলা চালিয়েও ইসরায়েল কীভাবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নিচ্ছে, সে বিষয়ে এর আগে ফিফাকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন ক্লাভেনেস। তিনি বলেছিলেন, ‘ফুটবলকে অবশ্যই এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার ও প্রতিষ্ঠিত আইনি আদর্শকে অবমূল্যায়িত করে।’
গাজার শিশুদের একটি ফুটবল প্রজেক্টের মাধ্যমে সহায়তা করেছে এনএফএফ। ফিলিস্তিনের স্কুল ও শরণার্থীশিবিরগুলোর সঙ্গেও দীর্ঘমেয়াদি কাজ শুরু করেছে তারা।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, অসলোর উল্লেভাল স্টেডিয়ামে নরওয়ে-ইসরায়েল ম্যাচের সব টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। তবে এই ম্যাচের ২৩ হাজার টিকিট বিক্রি করে এনএফএফ কী পরিমাণ লাভ করবে তা জানা যায়নি। স্টেডিয়ামটির আসনসংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি। ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচ হওয়ায় স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত নিরাপত্তাবলয় থাকবে।
‘আই’ গ্রুপ থেকে ৫ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে নরওয়ে। ৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইতালি। ৫ ম্যাচে ইতালির সমান পয়েন্ট নিয়ে তিনে ইসরায়েল। ১৯৯৮ সালের পর এবারই প্রথম (২০২৬) বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে নরওয়েকে।