রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে প্রায় ৯ বছর আগে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মামলায় সাতজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২২৯ পৃষ্ঠার রায়টি প্রকাশ করা হয়। এ মামলায় বিচারিক আদালত ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আলোচ্য হত্যাকাণ্ডের নির্মমতা, নৃশংসতা, ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসীদের সামগ্রিক নিষ্ঠুর আচরণ এবং এ ঘটনার ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়া বিবেচনায় নিয়ে আপিলকারী আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে বলে আমরা মনে করি।

মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন), আসামিদের আপিল এবং জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাংলায় রায় লিখেছেন। এর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিচারপতি সহিদুল করিম।

আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া সাতজন হলেন– রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাবশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ।

হলি আর্টিসান বেকারিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে নৃশংস হামলা চালানো হয়। দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে কুপিয়ে ও গুলি করে ২২ জনকে হত্যা করা হয়। জিম্মিদের মুক্ত করতে অভিযান চালাতে গিয়ে বোমা হামলায় নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা।

এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান নব্য জেএমবির এই সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ ছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরও দুটি ধারায় তাদের কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে সাত আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়ার ব্যাখ্যায় হাইকোর্ট বলেছেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও এ সাত আপিলকারী ষড়যন্ত্র ও ঘটনায় সহায়তা করেছেন, যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ষড়যন্ত্র ও ঘটনায় (জঙ্গি হামলা) সহায়তার কারণে সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এর ধারা ৬-এর ১ উপধারার (ক) (আ) দফায় বর্ণিত অপরাধে তারা দোষী। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট ধারা-উপধারার সঠিক উপলব্ধি না করে আপিলকারীদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, যা সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নয়। যে কারণে উক্ত রায়টি হস্তক্ষেপযোগ্য।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব চ রপত র রহম ন আম ত য ন ওরফ

এছাড়াও পড়ুন:

গোবিপ্রবিতে ২ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষসহ আহত ১৫

তুচ্ছ ঘটনায় গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান ‘নবনীতক-৯’ ঘিরে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।

এতে বিশ্ববিধ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া শেখ রাসেল হল, বিজয় দিবস হল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভাঙচুর চালিয়েছে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৩০ জুলাই) দিবাগত রাত ১টার দিকে শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান ‘নবনীতক-৯’ ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় দিবস হলে দুই বিভাগের মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে সংঘর্ষের সূচনা হয়। এ ঘটনায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত শিক্ষা সমাপনী কনসার্টটি বাতিল করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

পাবনায় মসজিদ নির্মাণ নিয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত, দুই পক্ষের মামলা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত আনুমানিক ১টার দিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে র‌্যাগ ডে’র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স করা নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এর একপর্যায়ে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা, স্টাম্প, ব্যাট, হকিস্টিক, জিআই পাইপসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

একপক্ষ ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকের নেতৃত্বে শেখ রাসেল হলে হামলা চালিয়ে বিভিন্ন কক্ষের জানালার কাঁচ ভাঙচুর করেন। অন্যপক্ষ পাল্টা হামলা চালিয়ে এএসভিএম  বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকের কক্ষের আসবাবপত্র বাইরে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়াও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন তারা।

এ সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুজ্জামান রাজীব, বিজয় দিবস হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, ফার্মেসি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলাম, শাহিনুর রহমান এবং ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

এর মধ্যে গুরুতর আহতাবস্থায় সাতজনকে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মারামারির বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, “একাডেমিক ভবনে প্রোগ্রাম চলাকালে আমাদের বিভাগের ২-৩ জন জুনিয়র সামনে চেয়ার নিয়ে বসতে যায়। তখন আমাদের অন্য জুনিয়ররা বলে ‘ভাই, আপনি এমনি সামনে বসলে তো আমরা কিছু দেখতে পারি না।’ এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। তবে তখনই বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়।”

তিনি বলেন, “এরপর আমরা সবাই রুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে ৪০-৫০ জন ছেলে আমাদের ধাওয়া দেয়। আমরা দৌড়ে বিজয় দিবস হলে আশ্রয় নিই। কিন্তু ওরা বাঁশ ও কাঠ হাতে নিয়ে বিজয় দিবস হলে ঢুকে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের বিভাগের ৫-৬ জন শিক্ষার্থী আহত হন। হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মার খাওয়ার পর রাগান্বিত হয়ে তারা বের হয় এবং শেখ রাসেল হলের দিকে যায়।”

এ ব্যাপারে প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজীব বলেন, “হল প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত আছে, প্রশাসন তাদের সবাইকে সবোচ্চ শাস্তি যেটা আছে তা নিশ্চিত করবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আজ মিটিং করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে দোষীদের খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি দেবে। এটা উপাচার্যের বার্তা।”

‘নবনীতক-৯’ শিরোনামে আয়োজিত শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হওয়ার কথা রয়েছে।

ঢাকা/বাদল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের শিল্পপতি অনিল আম্বানির দেশত্যাগ ঠেকাতে ‘লুক আউট’ নোটিশ
  • গোবিপ্রবিতে ২ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষসহ আহত ১৫
  • হাতিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে থাকা সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার