মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত স্থগিত করায় কৌশলগত সংকটে পড়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য, ইরানের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ফর্দো পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু এ স্থাপনাটি এত গভীরে নির্মিত যে তা ইসরায়েলের বোমা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা কঠিন।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, ট্রাম্প হয়তো শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা শক্তিশালী বোমাবাহী যুদ্ধবিমান ইরানে পাঠাবেন। যার সাহায্যে ফর্দোর মতো স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও দুই সপ্তাহ সময় নেবেন। এই বাড়তি সময় ইসরায়েলের জন্য উভয় সংকট সৃষ্টি করেছে।

ট্রাম্পের জন্য অপেক্ষার মধ্যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে গিয়ে ইসরায়েল দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী আকাশ প্রতিরক্ষার অস্ত্রভান্ডার খরচ করে ফেলছে। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে কিছু অঞ্চলকে বেশি সুরক্ষা দিয়ে অন্য এলাকাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে হচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে, বেসামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার আশঙ্কা ততই বাড়ছে।

আকাশসীমা বন্ধ থাকায় এবং অনেক অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইসরায়েলের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে। যুদ্ধ যত দ্রুত শেষ হবে, তত দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

মার্কিন সহায়তার অপেক্ষা না করে ইসরায়েল চাইলে নিজ উদ্যোগে ফর্দোতে হামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের হাতে থাকা যুদ্ধবিমান ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে অভিযান চালানোর ঝুঁকি নিতে পারে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, ইসরায়েল এমনকি কমান্ডো পাঠিয়ে ভেতরে ঢুকে কেন্দ্রটি ধ্বংস করার চেষ্টা চালাতে পারে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে দম্ভ করে বলেছিলেন, ইসরায়েল একাই এগোতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সব লক্ষ্য অর্জন করব, তাদের (ইরানের) সব পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার ক্ষমতা আমাদের আছে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল একতরফা হামলার পথ বেছে নিলে তা বিপজ্জনক হবে এবং এর প্রভাবও সীমিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ইতামার রবিনোভিচ বলেন, ‘আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো সক্ষম হতাম, তবে এত দিনে তা করে ফেলতাম।’

ইসরায়েলের জন্য আরেকটি বিকল্প হতে পারে। তা হলো, ফর্দোতে হামলা না চালিয়ে ইসরায়েলের একতরফাভাবে যুদ্ধ বন্ধ করে দেওয়া।

তবে এই পথে হাঁটলে ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কর্মসূচির একটি বড় অংশ অক্ষত রয়ে যাবে। ইসরায়েলি ও পশ্চিমাদের আশঙ্কা, এর ফলে ভবিষ্যতে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে, যা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের ঝুঁকি থেকেই যাবে।

এই মুহূর্তে ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধ থামানোর পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিচ্ছে না। বরং দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখন প্রকাশ্যে ইরানি শাসনব্যবস্থা ধ্বংসের কথা বলছে। এমনকি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের পক্ষে বাস্তবে খামেনির সরকারকে উৎখাত করা কঠিন হলেও এসব বক্তব্যের সুর থেকে বোঝা যায়, ইসরায়েল অন্তত আরও কিছুদিন আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

শুক্রবার ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ইরানের অভ্যন্তরে ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানের ব্যাপারে উগ্রবাদী ইহুদিদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষায়ও ইহুদিদের এ মতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দল ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

জোট গঠন দোষ হলে অধিকাংশ দলই দল দোষী: জাপা নেতা আনিসুল

জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘আজকে যেমন জামায়াত, হেফাজত, ইসলামী আন্দোলন একধরনের জোট গঠনের চেষ্টা করছে। নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টিও জোট গঠন করেছিল। জোট গঠন করা যদি দোষ হয়, সে দোষে বাংলাদেশের অধিকাংশ দলই দোষী।’

আনিসুল ইসলাম আরও বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো বিপ্লবী পার্টি নয়। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের কৌশল হিসেবে জাতীয় পার্টির একটি জোট করে ও নির্বাচিত হয়ে সংসদে যায়।

আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টির এক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম এ কথা বলেন। জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ চেয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি এবং চলমান জাতীয় রাজনীতি নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

আনিসুল ইসলাম বলেন, আজ যারা জাতীয় পার্টিকে দোসর হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়, তারাও একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করেছে। এমনকি তারা সংসদে ছিল। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন করেছে, তেমনি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করার জন্যও একাধিক বৈঠক করেছে জাপা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির অনাগ্রহের কারণে সেই জোট গঠন হয়নি। জাতীয় পার্টি কোনো বিপ্লবী পার্টি নয়। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের কৌশল হিসেবে জাতীয় পার্টির একটি জোট করে ও নির্বাচিত হয়ে সংসদে যায়।

জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে জামায়াতের দাবি প্রসঙ্গে জাপার এই নেতা বলেন, জাপা কিন্তু জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি জানায়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে, জাতীয় পার্টি তার বিরোধিতা করেছিল। তিনি মনে করেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। দল নিষিদ্ধের দাবি আগামী দিনের রাজনীতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্য খুবই জরুরি। জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ইতিমধ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। কে বিএনপির লোক, আর কে জামায়াতের লোক, দেখা হচ্ছে। সেভাবেই লোকজন বসানো হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট দেশের রাজনীতিতে বিবর্তন হয়েছে। এখান থেকে রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। অনেকেই এই বিপ্লবকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলতে চান। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর অনুরোধ, একাত্তরের সঙ্গে কোনো কিছু যাতে তুলনা করা না হয়। যাঁরা বিপ্লব সংঘটিত করেছেন, তাঁরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু গত এক বছরে সারা দেশে চর দখলের মতো হাট–বাজার, টার্মিনাল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জমি, বাড়ি দখল হয়েছে; যা বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাশা করেনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়ার কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, কো–চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পূজা ভাটকে চুমু খাওয়া নিয়ে ‘মহেশ ভাট বিতর্ক’, আসল ঘটনা কী ছিল?
  • জোট গঠন দোষ হলে অধিকাংশ দলই দল দোষী: জাপা নেতা আনিসুল