ট্রাম্পের ইরান হামলার সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহ স্থগিতে কি চিন্তা বেড়ে গেল ইসরায়েলের
Published: 20th, June 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত স্থগিত করায় কৌশলগত সংকটে পড়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য, ইরানের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ফর্দো পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু এ স্থাপনাটি এত গভীরে নির্মিত যে তা ইসরায়েলের বোমা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা কঠিন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, ট্রাম্প হয়তো শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা শক্তিশালী বোমাবাহী যুদ্ধবিমান ইরানে পাঠাবেন। যার সাহায্যে ফর্দোর মতো স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও দুই সপ্তাহ সময় নেবেন। এই বাড়তি সময় ইসরায়েলের জন্য উভয় সংকট সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্পের জন্য অপেক্ষার মধ্যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে গিয়ে ইসরায়েল দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী আকাশ প্রতিরক্ষার অস্ত্রভান্ডার খরচ করে ফেলছে। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে কিছু অঞ্চলকে বেশি সুরক্ষা দিয়ে অন্য এলাকাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে হচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে, বেসামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার আশঙ্কা ততই বাড়ছে।
আকাশসীমা বন্ধ থাকায় এবং অনেক অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইসরায়েলের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে। যুদ্ধ যত দ্রুত শেষ হবে, তত দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
মার্কিন সহায়তার অপেক্ষা না করে ইসরায়েল চাইলে নিজ উদ্যোগে ফর্দোতে হামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের হাতে থাকা যুদ্ধবিমান ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে অভিযান চালানোর ঝুঁকি নিতে পারে। কিছু বিশ্লেষকের মতে, ইসরায়েল এমনকি কমান্ডো পাঠিয়ে ভেতরে ঢুকে কেন্দ্রটি ধ্বংস করার চেষ্টা চালাতে পারে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে দম্ভ করে বলেছিলেন, ইসরায়েল একাই এগোতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সব লক্ষ্য অর্জন করব, তাদের (ইরানের) সব পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার ক্ষমতা আমাদের আছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল একতরফা হামলার পথ বেছে নিলে তা বিপজ্জনক হবে এবং এর প্রভাবও সীমিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ইতামার রবিনোভিচ বলেন, ‘আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো সক্ষম হতাম, তবে এত দিনে তা করে ফেলতাম।’
ইসরায়েলের জন্য আরেকটি বিকল্প হতে পারে। তা হলো, ফর্দোতে হামলা না চালিয়ে ইসরায়েলের একতরফাভাবে যুদ্ধ বন্ধ করে দেওয়া।
তবে এই পথে হাঁটলে ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কর্মসূচির একটি বড় অংশ অক্ষত রয়ে যাবে। ইসরায়েলি ও পশ্চিমাদের আশঙ্কা, এর ফলে ভবিষ্যতে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে, যা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের ঝুঁকি থেকেই যাবে।
এই মুহূর্তে ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধ থামানোর পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিচ্ছে না। বরং দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখন প্রকাশ্যে ইরানি শাসনব্যবস্থা ধ্বংসের কথা বলছে। এমনকি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের পক্ষে বাস্তবে খামেনির সরকারকে উৎখাত করা কঠিন হলেও এসব বক্তব্যের সুর থেকে বোঝা যায়, ইসরায়েল অন্তত আরও কিছুদিন আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
শুক্রবার ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ইরানের অভ্যন্তরে ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানের ব্যাপারে উগ্রবাদী ইহুদিদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষায়ও ইহুদিদের এ মতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দল ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৪০৩ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
২০২৪ সালে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৪০৩ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, সাত কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব না দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একতরফা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হওয়া সহিংসতায জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে ১২৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনাটি অধিকতর তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির দ্বিতীয় সভায় ১২৮ জনসহ মোট ৪০৩ শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ওই সময় করা অপরাধের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তার কারণ দর্শাতে লিখিত জবাব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রক্টর কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে একতরফা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাঁদের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ সব হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এ তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন; মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আযহারুল ইসলাম মামুন; শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের কামাল উদ্দীন রানা ও সাধারণ সম্পাদক মিশাত সরকার; হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শহিদুল হক শিশির ও মোহাম্মদ হোসেন; সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের তানভীর শিকদার; বিজয় একাত্তর হলের সজীবুর রহমান ও আবু ইউনুস; জগন্নাথ হলের কাজল দাস ও অতনু বর্মন; সূর্য সেন হলের মারিয়াম জামান খান সোহান ও সিয়াম রহমান; ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের জাহিদুল ইসলাম ও শরীফ আহনেদ মুনিম; অমর একুশে হলের এনায়েত এইচ মনন ও ইমদাদুল হক সোহাগ; ফজলুল হক মুসলিম হলের আনোয়ার হোসেন নাঈম ও আবু হাসিব মুক্তর নাম রয়েছে।
ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে রোকেয়া হলের সভাপতি অন্তরা দাস পৃথা ও সাধারণ সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসাইন; শামসুন নাহার হলের খাদিজা আক্তার ও নুসরাত রুবাইয়াত নীলা; শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কোহিনূর আক্তার রাখি ও সানজিনা ইয়াসমিন; বেগম সুফিয়া কামাল হলের পূজা কর্মকার ও সভাপতি রিমা আক্তার ডলি; কুয়েত মৈত্রী হলের সভাপতি রাজিয়া সুলতানা কথা ও সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল হাওয়া আঁখি জান্নাতুল হাওয়া আঁখির নাম রয়েছে।
জানতে চাইলে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, যাঁদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে, তাঁদের সনদ বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হবে। এ বিষয়ে সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নোটিশটি মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।