টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের একাংশে সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার দুই বছর না যেতেই কিছু স্থানে সুরক্ষা ব্লক ধসে পড়েছে। এ ছাড়া সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। চলতি বর্ষায় ব্লক ধসে আবার ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। তাঁরা বলছেন, সড়কটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের মধ্যে ৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার সংস্কারে ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। একনেকের অনুমোদন পেয়ে ২০২০ সালে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে কে এন্টারপ্রাইজ। নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। সড়কের দুই পাশঘেরা খাল থাকায় নিরাপত্তার জন্য সড়কের পাশে মাটি ঠেকিয়ে রাখার সুরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে ‘প্যালাসাইডিং ব্লক’ বসানো হয়। কিন্তু এখন সেই ব্লক ধসে পড়ায় টেকসই নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জুলাইয়ে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। জোয়ার-ভাটার ধাক্কায় ওই বছরের জুনে হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ এক দশক সড়কটির ভাঙা অংশে হেঁটে বা নৌকায় যাতায়াত করতে হয়েছে এলাকাবাসীকে। পরে ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্প অনুমোদন দেয়।

আমাদের জামানতের ৫ শতাংশ টাকা এখনো কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। ক্ষয়ক্ষতি হলে অবশ্যই মেরামত করব। বিষয়টি জেনে প্রকৌশলী পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।—আবদুল জব্বার, স্বত্বাধিকারী, মেসার্স জে কে এন্টারপ্রাইজে

গত বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটারে পূর্ব পাশে ১৫টি স্থানে এবং পশ্চিম পাশে ৫টি স্থানে ব্লক ধসে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ভরাখালের ওপর নির্মিত সেতুর দক্ষিণ পাশে সড়কটি তিন-চার ইঞ্চির মতো ধসে গেছে। বর্ষার টানা বৃষ্টিতে সড়কটিতে আরও নতুন নতুন স্থানে ব্লক ধসে পড়ছে।

স্থানীয় শ্রমিক নজির আহমদ বলেন, বৃষ্টিতে ব্লকগুলো ধসে পড়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। শাহপরীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘এক দশকের ভোগান্তির পর এই সড়ক সংস্কার করা হয়েছিল। এখন এত অল্প সময়ে ধস মানে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সরকারের উচিত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।’

সড়কপথেই এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে পৌঁছান। এ ছাড়া এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন শতাধিক লবণবোঝাই ট্রাক ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা পর্যটক আসাদুল্লাহ বলেন, ‘সড়কটি মিঠামইনের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। দুই পাশে পানি আর লবণমাঠের দৃশ্য নজর কাড়ে। কিন্তু এই ধস উদ্বেগজনক।’

শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, সড়কের পাশে যে ব্লক বসানো হয়েছে, সেগুলোর নিচে ভালোভাবে মাটি চাপা দেওয়া হয়নি। তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করা হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ও কাতারপ্রবাসী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দুই বছরের মাথায় সড়কে ধস—এটা অনিয়ম ছাড়া সম্ভব নয়। তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে কে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জামানতের ৫ শতাংশ টাকা এখনো কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। ক্ষয়ক্ষতি হলে অবশ্যই মেরামত করব। বিষয়টি জেনে প্রকৌশলী পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের সুরক্ষা ব্লক ধসে পড়েছে—বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। অনিয়ম থাকলে সেটিও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প ব যবস থ এই সড়ক ই বছর সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দপ্তরের অধীন ২৯ কিমি সরু সড়কে চলাচলে ঝুঁকি

নওগাঁ সদর উপজেলার কাঁঠালতলী মোড় থেকে আত্রাই পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার সড়ক এক সময় ছিল নাটোর ও বগুড়ায় যাওয়ার প্রধান মাধ্যমে। আশির দশকের আগে এটি ছিল ইটের সলিং রাস্তা। পরবর্তী সময়ে পাকা করা হলেও আর প্রশস্ত হয়নি। বর্তমানে সড়কের বেশির ভাগ অংশের প্রস্থ মাত্র ১০ থেকে ১২ ফুট। ফলে দুই দিক থেকে আসা গাড়ির মুখোমুখি হলে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণহানিও হয়েছে অনেকে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ৪৫ বছর ধরে যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ নওগাঁ-রাণীনগর-আত্রাই আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। ফলে তিনটি উপজেলার লাখো মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা সড়কটি পরিণত হয়েছে ‘মরণফাঁদে’। সরু সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক এবং যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। সড়কটির দুই অংশ দুই সরকারি দপ্তরের অধীন হওয়ায় প্রশস্তকরণের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির আধুনিকায়ন ও প্রশস্তকরণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলা দেশের প্রান্তিক এ জনপদের মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সড়কটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। রাণীনগর মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন তিন উপজেলার লাখো মানুষ যাতায়াত করেন। সরু হওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ দীর্ঘদিনেও সড়কটি প্রশস্ত করা হয়নি।
বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে এ সড়কে ইঞ্জিনচালিত ভটভটি উল্টে একজন নিহত ও দু’জন আহত হন। ফেব্রুয়ারি মাসে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত যানের সংঘর্ষে প্রাণ হারান দু’জন। একজন আহত হন। গত এপ্রিল মাসে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গত বছরের আগস্টে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে একজন নিহত হন। আহত হন একজন। এর বাইরে ছোট অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে ঘন জনবসতি। রয়েছে হাটবাজার, ধানের চাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন পণ্যবাহী ট্রাক, অটোরিকশা, ভটভটি, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ অসংখ্য ছোট-বড় যানবাহন এ সড়ক ব্যবহার করে। অথচ প্রশস্ত ও ডিভাইডার নেই। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সংস্কারও করা হয়নি।
সড়কটির প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ রয়েছে নওগাঁ সড়ক বিভাগের অধীনে। আর বাকি ১৭ কিলোমিটার রাণীনগর থেকে আত্রাই পর্যন্ত অংশ ‘ছোট যমুনা নদীর বাঁধ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়। এ মালিকানা জটিলতা সড়ক প্রশস্তকরণে অন্যতম বাধা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
‘রক্তদহ-লোহচূড়া বিল নিষ্কাশন স্কিম’ প্রকল্পের আওতায় ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ আত্রাই-রাণীনগর অংশে সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানান নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ না থাকায় বাঁধ প্রশস্ত করা যাচ্ছে না। ২৮ কিলোমিটার অংশ পুনর্নির্মাণের জন্য ডিপিপি পাঠানো হয়েছে।
সড়কের কিছু অংশ ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে নওগাঁ সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দীক বলেন, সড়কটি দ্রুত প্রশস্ত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান বলেন, সড়কটি তিনটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত ও কৃষিপণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। পথ এতটাই সরু যে, বড় আকারের একটি যানবাহন চলাচল করাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আধুনিকায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দপ্তরের অধীন ২৯ কিমি সরু সড়কে চলাচলে ঝুঁকি
  • নড়াইলে ভারী বৃষ্টিতে আঞ্চলিক সড়কে ধস
  • সড়কের খানাখন্দে বৃষ্টির পানি, দুর্ঘটনার ঝুঁকি
  • মধ্য পীরেরবাগের সড়কটিতে বর্জ্য ডাম্পিং কবে বন্ধ হবে