৬৭ কোটি টাকায় সংস্কার, দুই বছর না যেতেই ধস
Published: 21st, June 2025 GMT
টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের একাংশে সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার দুই বছর না যেতেই কিছু স্থানে সুরক্ষা ব্লক ধসে পড়েছে। এ ছাড়া সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। চলতি বর্ষায় ব্লক ধসে আবার ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। তাঁরা বলছেন, সড়কটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের মধ্যে ৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার সংস্কারে ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। একনেকের অনুমোদন পেয়ে ২০২০ সালে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে কে এন্টারপ্রাইজ। নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। সড়কের দুই পাশঘেরা খাল থাকায় নিরাপত্তার জন্য সড়কের পাশে মাটি ঠেকিয়ে রাখার সুরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে ‘প্যালাসাইডিং ব্লক’ বসানো হয়। কিন্তু এখন সেই ব্লক ধসে পড়ায় টেকসই নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জুলাইয়ে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। জোয়ার-ভাটার ধাক্কায় ওই বছরের জুনে হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ এক দশক সড়কটির ভাঙা অংশে হেঁটে বা নৌকায় যাতায়াত করতে হয়েছে এলাকাবাসীকে। পরে ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্প অনুমোদন দেয়।
আমাদের জামানতের ৫ শতাংশ টাকা এখনো কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। ক্ষয়ক্ষতি হলে অবশ্যই মেরামত করব। বিষয়টি জেনে প্রকৌশলী পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।—আবদুল জব্বার, স্বত্বাধিকারী, মেসার্স জে কে এন্টারপ্রাইজেগত বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটারে পূর্ব পাশে ১৫টি স্থানে এবং পশ্চিম পাশে ৫টি স্থানে ব্লক ধসে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ভরাখালের ওপর নির্মিত সেতুর দক্ষিণ পাশে সড়কটি তিন-চার ইঞ্চির মতো ধসে গেছে। বর্ষার টানা বৃষ্টিতে সড়কটিতে আরও নতুন নতুন স্থানে ব্লক ধসে পড়ছে।
স্থানীয় শ্রমিক নজির আহমদ বলেন, বৃষ্টিতে ব্লকগুলো ধসে পড়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। শাহপরীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কলিম উল্লাহ বলেন, ‘এক দশকের ভোগান্তির পর এই সড়ক সংস্কার করা হয়েছিল। এখন এত অল্প সময়ে ধস মানে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সরকারের উচিত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।’
সড়কপথেই এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে পৌঁছান। এ ছাড়া এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন শতাধিক লবণবোঝাই ট্রাক ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা পর্যটক আসাদুল্লাহ বলেন, ‘সড়কটি মিঠামইনের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। দুই পাশে পানি আর লবণমাঠের দৃশ্য নজর কাড়ে। কিন্তু এই ধস উদ্বেগজনক।’
শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, সড়কের পাশে যে ব্লক বসানো হয়েছে, সেগুলোর নিচে ভালোভাবে মাটি চাপা দেওয়া হয়নি। তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করা হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ও কাতারপ্রবাসী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দুই বছরের মাথায় সড়কে ধস—এটা অনিয়ম ছাড়া সম্ভব নয়। তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে কে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জামানতের ৫ শতাংশ টাকা এখনো কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। ক্ষয়ক্ষতি হলে অবশ্যই মেরামত করব। বিষয়টি জেনে প্রকৌশলী পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের সুরক্ষা ব্লক ধসে পড়েছে—বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। অনিয়ম থাকলে সেটিও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প ব যবস থ এই সড়ক ই বছর সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ–সংলগ্ন সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ–সংলগ্ন সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দ্রুত সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় লোকজন। এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার না করা হলে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শহরের মেসলেমা একাডেমির সামনে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি হাফেজ বেলাল হুসাইন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি ইব্রাহিম হোসেনসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
বক্তারা বলেন, এই সড়ক জেলার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ–সংলগ্ন। এই কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি। এ ছাড়া এই সড়কের পাশে পল্লী মঙ্গল স্কুল ও কলেজ, মোসলেমা একাডেমি, সমাজসেবা অফিস, জেলা সমবায় অফিস, টেলিফোন অফিস, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস, জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, জাতীয় নিরাপত্তা অফিস (এনএসআই), ডাকঘরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি অফিস রয়েছে। প্রতিদিন এই সড়কে অনেক মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির বেহাল দশার কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। সড়কটি খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলার কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, রোগী পরিবহন ও সাধারণ যাত্রীদের জন্য এ পথে চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পুরাতন সাতক্ষীরা থেকে সরকারি কলেজ পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের অংশ হিসেবে তিন মাস আগে সড়কের পিচ তুলে ফেলার পাশাপাশি দুই ধারে ইট বসানোর জন্য গর্ত করা হয়। এর পর থেকে সড়কে আর কাজ হয়নি।
সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিআরএম প্রকল্পের আওতায় ও জার্মানভিত্তিক সংস্থা কেএফডব্লিউর অর্থায়নে ১৭ কোটি ৪৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে পৌরসভার সরকারি কলেজ–সংলগ্ন সড়কসহ ১০টি সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্রের ভিত্তিতে কাজটি পান পটুয়াখালীর ঠিকাদার কহিনুর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিজানুর আলম। কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় চলতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি। কাজ শেষ করার কথা ২০২৬ সালের ২০ এপ্রিল।
সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিম বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভা থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ১০টি সড়কের কাজ চলছে। সড়কগুলোর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ১৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। এ সড়কের প্রস্থ হবে ১৯ দশমিক ৪৪ ফুট। কলেজের কাছের সড়কটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ার এ কাজ আগে করার জন্য ঠিকাদারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কহিনুর এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক শিহাবুজ্জামান বলেন, সরকারি কলেজ–সংলগ্ন সড়কের কাজ ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সড়ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বালুর দুষ্প্রাপ্যতার পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। চাহিদামতো বালু পাওয়া গেলে ও বৃষ্টি না হলে সড়কের বাকি অংশ চলাচল উপযোগী করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। আর বৃষ্টি শেষে নভেম্বরে রাস্তায় পিচের কাজ হবে।