ইরান ও ইসরায়েল চলমান যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। যদিও প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে দেশের বাজারে দাম বাড়লে নতুন করে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের চিন্তাভাবনা কী—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দুবার জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। নিজেদের সক্ষমতা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে সরকার।

বাণিজ্য উপদেষ্টা এক সফরে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় যান। সেখান থেকে ফেরার সময় প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।

নিত্যপণ্যের বাজারে অনেক দিন ধরে স্বস্তি বিরাজ করছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দাবি করেছেন, বাজারব্যবস্থায় বৈচিত্র্যের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।

সম্প্রতি চাল ও পেঁয়াজের কিছুটা মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বশিরউদ্দীন বলেন, চালের দাম একটু বাড়তি, এটা ঠিক। এটা সাময়িক, ঠিক হয়ে যাবে। এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পেঁয়াজের কেজি ৫৫-৬০ টাকা না হলে কৃষক বাঁচবে না। ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘এটা (বাণিজ্য উপদেষ্টা) বড় দায়িত্ব। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর–কষাকষিতে সর্বশেষ অবস্থান কী, বাংলাদেশ কি আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে—এই প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী সোমবার এ বিষয়ে তাঁরা প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টির সমাধান হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

দেশের শিল্পকারখানায় গ্যাসের সংকট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ণ জ য উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুমার দিনের করণীয় ও বর্জনীয়

জুমার দিন—মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন।

এটি শুধু সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ।

নবীজি (সা.) বলেছেন—“জুমার দিনই দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এ দিনেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)

অতএব, জুমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ইসলামি সভ্যতার একটি কেন্দ্রবিন্দু।

এই দিনে কিছু কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, আবার কিছু কাজ থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫জুমার দিনের করণীয়

১. গোসল করা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর মসজিদে আসে, নীরবে খুতবা শোনে ও নামাজ পড়ে, তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)

জুমার দিনের এই গোসল বিশেষ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

২. পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার

জুমার নামাজে যাওয়ার আগে মুসলমানকে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমাদের জন্য সুন্দর পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫২৪৮)

এটি সামাজিক মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতার প্রতীক।

৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া

জুমার নামাজে আগে পৌঁছানোর জন্য বড় ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য যায়, সে যেন উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেলে গরু কোরবানি করল; তৃতীয় ঘণ্টায় গেলে ভেড়া কোরবানি করল; চতুর্থ ঘণ্টায় গেলে মুরগি কোরবানি করল; আর পঞ্চম ঘণ্টায় গেলে ডিম দান করল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)

অর্থাৎ, যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব।

৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন তার সঙ্গীকে বলে ‘চুপ করো’, সে-ও অনর্থক কথা বলল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪)

খুতবা চলাকালীন কথা বলা, ফোন ব্যবহার করা বা অমনোযোগ হওয়া নিষিদ্ধ।

৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা

জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৯২)

৬. দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা

জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়।

নবীজি (সা.) বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে কোনো মুসলমান নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)

অনেক আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

এছাড়া, জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশও এসেছে, “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)

আরও পড়ুনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল২২ আগস্ট ২০২৪জুমার দিনের বর্জনীয়

১. জুমার নামাজ ত্যাগ করা

নবীজি (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে তিনটি জুমা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)

অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা বাদ দেওয়া ইমানের জন্য ভয়ংকর বিপদ।

২. জুমা বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা

কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।” (সুরা আল-জুমা, আয়াত: ৯)

জুমার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা বা অন্য ব্যস্ততা বড় গোনাহ।

৩. উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা

মসজিদে অন্যদের বিরক্ত করা, ফোনে কথা বলা, এমনকি নামাজের আগে অপ্রয়োজনে গল্প করা জুমার আদববিরোধী কাজ।

৪. খুতবার সময় চলাফেরা করা

খুতবা চলাকালে যেকোনো অযথা নড়াচড়া বা সামনে যাওয়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, এতে “সওয়াব নষ্ট হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)

৫. নামাজ শেষে গাফেল থাকা

জুমার পরপরই নামাজ বা দোয়া না করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “যখন নামাজ শেষ হবে, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো, কিন্তু আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)

অর্থাৎ, কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে যেন আল্লাহর স্মরণ থাকে।

জুমার দিনের তাৎপর্য

জুমা মুসলমানদের জন্য সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এদিনে মসজিদগুলোতে ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে একবার নামাজ আদায় করা সাত দিনের গোনাহ মাফের সমান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)

জুমার দিন আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য এবং আল্লাহর রহমত লাভের সোনালি সুযোগ।

এই দিনে গোসল, পরিষ্কার পোশাক, সময়মতো নামাজে যাওয়া, খুতবা শোনা, সূরা কাহফ পাঠ ও দোয়া করা—সবই মুসলিম জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।

অন্যদিকে অলসতা, ব্যবসা, ও অমনোযোগিতা আমাদের ইমানকে দুর্বল করে।

অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত জুমাকে কেবল ছুটির দিন নয়, বরং “আত্মার নবজাগরণের দিন” হিসেবে পালন করা।

আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ