রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের কক্ষে রাতের বেলা এক নারী সহপাঠীকে নিয়ে যাওয়ায় এক ছাত্রের আসন বাতিল করা হয়েছে। ৪ জুন নারী সহপাঠীকে হলের কক্ষে নিয়ে যান ওই ছাত্র। এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার ওই ছাত্রের আসন বাতিল করা হয়। আজ শনিবার বিষয়টি জানাজানির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মো.

মোতাহার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি সত্য। হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলেন। ওই শিক্ষার্থী বাড়িতে থাকায় জবাবদিহি করা যায়নি। পরে ক্যাম্পাস খোলার পর তাঁকে ডেকে জবাবদিহি করা হয়। তিনি ঘটনাটি স্বীকার করায় তাঁর আসন বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী হলের দুজন শিক্ষার্থী ও এক নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, ৪ জুন ভোরে তাঁদের সামনে দিয়ে একজন শিক্ষার্থী একটি সাইকেল চালিয়ে হল থেকে বের হচ্ছিলেন। তাঁর সাইকেলের পেছনে একজন নারী বসে ছিলেন। তাঁর গায়ে শার্ট আর মাথায় ক্যাপ পরা ছিল। বিষয়টি অস্বাভাবিক লাগায় তাঁকে ধরার চেষ্টা করেও তাঁরা ব্যর্থ হন।

আসন বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে তিনি কয়েকজন সাংবাদিককে বলেন, ৩ জুন তাঁর জন্মদিন ছিল। সেদিন জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে গিয়ে রাত হয়ে যায়। অন্যদিকে তাঁর নারী সহপাঠীকে ঈদের ছুটির জন্য মেস থেকে ৩ তারিখের মধ্যে চলে যেতে বলা হয়। সহপাঠী মেসে যেতে পারবেন না বলে তাঁকে রাখার অনুরোধ করেন। পরে তাঁকে রাতে হলে নিয়ে আসেন। মূলত তাঁকে নিরাপত্তা দিতে তিনি হলে নিয়ে এসেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা উপকমিটির সভাপতি ও প্রক্টর মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হল প্রশাসন মৌখিকভাবে ঘটনাটি জানিয়েছে। ইতিমধ্যে হল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি তদন্ত করেছে। প্রতিবেদন শিগগিরই জমা দেওয়ার কথা আছে। ঘটনা সত্য হলে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র আসন ব ত ল সহপ ঠ ক ব ষয়ট ঘটন ট

এছাড়াও পড়ুন:

দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।

৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।

এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।

বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।

বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিরিয়ায় বিমান ঘাঁটি করবে যুক্তরাষ্ট্র
  • অ-অভিবাসী ৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
  • মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ: বিএনপিতে যোগ দিলেন যে কারণে 
  • যে ৪ ‘মানি রুল’ ধনীরা কাউকে বলেন না
  • নিউ ইয়র্ক-এর ফাস্ট লেডি ‘রামা দুয়াজি’
  • রোমান সম্রাজ্ঞী মেসালিনাকে যেকারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো
  • ডাকসু নেতার প্রবীণ ব্যক্তিকে লাঠি হাতে শাসানো নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক
  • এক কাপ কফি খাও, তারপর লিখতে বসো—মতি ভাই বললেন
  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা মাতাল ব্যক্তির
  • দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ