ইসরায়েল-ইরান (সঙ্গে আমেরিকাও) যুদ্ধ দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়াচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে কিছু অন্তঃসারশূন্য হুমকি দিয়েছেন, কিন্তু যুদ্ধে সরাসরি আমেরিকার হস্তক্ষেপ করার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেননি।

ইউরোপীয়রা আরেকটি বড় মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে চায়। কারণ, ইতিমধ্যে ইরাক-সিরিয়া যুদ্ধের পরিণতিতে লাখ লাখ শরণার্থীর স্রোত পুরো ইউরোপীয় কল্যাণরাষ্ট্রের বন্দোবস্তকেই নড়বড়ে করে দিয়েছে। ইরানের ৯ কোটি  মানুষের স্রোত ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। এমন সব কারণে ইউরোপীয়রা যুদ্ধ বন্ধে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তা কাজ করবে কি না, তা নির্ভর করবে ইসরায়েল ও আমেরিকার ডিপস্টেটের ওপর।

এখন পর্যন্ত যুদ্ধ পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে এটি ওয়ার অব এট্রিশন; অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধটি যদি সত্যি সত্যি একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে রূপ নেয়, সে ক্ষেত্রে কী ঘটতে পারে?

সম্ভাবনা আছে তিনটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটার। 

প্রথমত, ইসরায়েলের কোনো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। তারা সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে (স্যামসন অপশন) ইরানে পারমাণবিক বোমা হামলা চালাতে পারে। তবে তা তাদের চূড়ান্ত পরাজয় ঠেকাতে পারবে বলে মনে হয় না।

দ্বিতীয়ত, প্রলম্বিত যুদ্ধে ইরান কার্যত একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হয়ে পড়বে। এর সব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু ‘মাটির নিচের ইরান’ প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।

তৃতীয়ত, আমেরিকান সাম্রাজ্যের পতন হবে এবং আমেরিকা একটি দীর্ঘস্থায়ী অভ্যন্তরীণ ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে। আমেরিকান জায়নবাদের যবনিকাপাত হবে ও তার নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটবে। প্রতিটি ঘটনার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী। এসব বিষয়ের কয়েকটি আঙ্গিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই লেখায়।

১.

ইসরায়েল একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্যের কোঠায়। এর অনেকগুলো রাজনৈতিক ও সামরিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কারণ উল্লেখযোগ্য।

প্রথমত, ইসরায়েলের কোনো কৌশলগত গভীরতা (স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ) নেই। ইরানের তা আছে। অর্থাৎ একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে ইসরায়েলের প্রায় সব অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে এটি একটি মিনি গাজায় পরিণত হবে। ইসরায়েল বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। মনে রাখতে হবে যে ইসরায়েলের বেশির ভাগ নাগরিকের একাধিক পশ্চিমা নাগরিকত্ব রয়েছে। প্রায় সাত লাখ ইসরায়েলির আমেরিকার নাগরিকত্ব রয়েছে। আমাদের পরিচিত কিছু অধ্যাপকও আছেন এই তালিকায়। তাঁরা ইতিমধ্যে ইসরায়েল ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা অনুমান করা ভুল হবে না যে এই দ্বৈত পশ্চিমা নাগরিকেরা বিধ্বস্ত ইসরায়েল ছেড়ে স্থায়ীভাবে পশ্চিমে পাড়ি দেবেন এবং আর ফিরবেন না।

অন্যদিকে ইরান ইসরায়েলের ৮০ গুণ বড়। এর কৌশলগত স্থাপনাগুলো সারা দেশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে। তারা বছরের পর বছর সংঘাত চালিয়ে যেতে পারবে। এ ছাড়া অনেক ইরানি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্কসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিলেও বেশির ভাগ ইরানির যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, সুতরাং তারা দেশেই থাকবে। অনেকেই ইরানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিলে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দিতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ইসলামি বিপ্লবের পর, আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে, ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ইরান প্রায় ৪০ বছর ধরে এ ধরনের যুদ্ধের জন্যই প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা জানে যে আকাশযুদ্ধে তারা দুর্বল। যার কারণে এই চার দশকে ইরান মাটির নিচে আরেকটি ইরান তৈরি করেছে। সেখানে কেবল কয়েক ডজন ‘আন্ডারগ্রাউন্ড মিসাইল সিটি’ই নয়; বরং আন্ডারগ্রাউন্ড নেভাল বেইজ, এয়ার বেজ—সবই তারা তৈরি করেছে।

ধারণা করা যায় যে ইরান দেশের সামরিক সক্ষমতার ৮০ শতাংশ মাটির নিচে নিয়ে গেছে। আর সেগুলো প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব। আপনি এগুলো জিপিএস দিয়ে ট্র্যাক করতে পারবেন না এবং জানবেনও না যে এগুলো আছে। এগুলো ধ্বংস করার একমাত্র উপায় স্থল অভিযান। কিন্তু ইরানকে বলা হয় আগ্রাসনকারীদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। ইরান কার্যত একটি দুর্গ সমতুল্য। এটি প্রায় তিন দিকে সুবিশাল পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা, এক পাশে কৃষ্ণসাগর।

২.

ইরানে বড় ধরনের স্থল অভিযান পরিচালনার সামর্থ্য আছে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু এমনকি যুক্তরাষ্ট্র স্থল অভিযান চালালেও এটি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের পাল্লায় পড়ে ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় বাংকার ব্লাস্টার বোমা অথবা অন্য কোনো উপায়ে আক্রমণ করে ও ইরান যদি জবাবে আশপাশের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা করে হতাহতসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে এবং তার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে স্থল অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভিয়েতনাম যুদ্ধের চেয়ে বড় ফাঁদ হয়ে আবির্ভূত হতে পারে। সেখানে হাজার হাজার মার্কিন সেনার প্রাণ হারানোর ঝুঁকি থাকবে। কিন্তু চূড়ান্ত অর্জন হবে নেহাতই শূন্য। কেন?

বলা হয় যে শক্তিশালী আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে টিকে থাকলে আপনি জিতে যাবেন; অর্থাৎ শক্তিশালী আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে আপনাকে ‘জিততে’ হবে না, কেবল ‘টিকে থাকলেই’ হবে। যে কারণে ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ‘টিকে যাওয়া’ হিজবুল্লাহকে বিজয়ী গণ্য করা হয়। সুতরাং একটা জোরদার সম্ভাবনা হচ্ছে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও ইরান প্রতিরোধ করে যাবে এবং ‘টিকে যাবে’।

যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর যুদ্ধ চালিয়ে ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো রণে ক্ষান্ত দেবে ইরাক যুদ্ধের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়ে। মনে রাখতে হবে, ইরাক যুদ্ধে আমেরিকা প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করেছে; অর্থাৎ একটা প্রলম্বিত ইরান যুদ্ধে আমেরিকা ৮-১০ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হতে পারে। এই পরিমাণ আমেরিকার বর্তমান জিডিপির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। আর সেটি করলে আমেরিকান অর্থনীতি কার্যত দেউলিয়া হয়ে যাবে। আমেরিকা তার বৈশ্বিক সামরিক আধিপত্য হারাবে।

৩.

আমেরিকার পরাজয় কেবল আমেরিকান সাম্রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, এটি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আরেকটি ওয়াইমার রিপাবলিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে সাধারণ আমেরিকানরা ইসরায়েলের এই যুদ্ধে আমেরিকাকে জড়ানো ও রাষ্ট্রকে দেউলিয়া করার ‘অপরাধে’ জায়নবাদীদের দায়ী করবে এবং তাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে হামলে পড়বে।

এটি প্রথম ‘ওয়াইমার রিপাবলিক’–এর পুনর্মঞ্চায়ন হবে মাত্র। মনে রাখতে হবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানিতে জাতীয়তাবাদী জার্মানরা জায়নবাদীদের ওপর ব্যাপক আক্রোশে হামলে পড়েছিল। তাদের অভিযোগ ছিল যে জায়নবাদী গোষ্ঠীগুলো তৎকালীন জার্মানির বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, বিনোদনজগতের ওপর প্রায় নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। অভিযোগ ছিল যে যুদ্ধে তারা যথেষ্ট দেশপ্রেমী ছিল না ও শত্রুর সঙ্গে ‘কোলাবোরেট’ করেছিল। জায়নবাদীদের এই ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ অভিযোগকে পুঁজি করে জার্মানরা ব্যাপক ইহুদিবিদ্বেষ তৈরি করে। যার পরিণতি আমরা দেখি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের ওপর জার্মানদের চূড়ান্ত আক্রোশ। বর্ণিত এই পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান আমেরিকার মিল পাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

৪.

দুশ্চিন্তার কারণ আছে যে আমেরিকাতেও ওয়াইমার রিপাবলিকের পুনর্মঞ্চায়নের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। আমেরিকায় প্রগতিশীলদের একটা বড় অংশ আগে থেকেই জায়নবাদী লবির অতি ইসরায়েলপ্রীতি এবং আমেরিকাকে মধ্যপ্রাচ্যের নিরন্তর যুদ্ধে জড়ানোর কারণে ক্ষিপ্ত। তবে রক্ষণশীলরা বরাবরই জায়নবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। কিন্তু এবার নতুন একটি ঘটনা ঘটছে। সেটি হলো, আমেরিকার রক্ষণশীলদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ইরান যুদ্ধের ডামাডোল ঘিরে (কিংবা তারও আগে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে) জায়নবাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে। টাকার কার্লসন, স্টিভ ব্যানন, ক্যান্ডেস ওয়েন্সসহ নামীদামি রক্ষণশীল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও প্রচারণাকারীরা কেবল সক্রিয়ভাবে ইরান যুদ্ধের বিরোধিতাই করছে না, তারা ইসরায়েল ও জায়নবাদের বিরুদ্ধে কার্যত তথ্যযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমেরিকার রাজনীতিতে এর প্রভাব হবে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।

৫.

অনুমান করা যায় যে আমেরিকা যদি ইরান যুদ্ধে জড়িয়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়, আমেরিকার প্রগতিশীল ও রক্ষণশীল উভয় অংশ মিলে সারা আমেরিকায় জায়নবাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঘৃণা উৎপাদন করবে।

জাতীয়তাবাদী জোয়ার তৈরির চেষ্টা হবে। ঠিক যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিপর্যয়ের পর জার্মান জাতীয়তাবাদীরা জায়নবাদীদের দায়ী করে করেছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জায়নবাদীদের প্রতি জাতীয়তাবাদী আমেরিকানদের এই সম্ভাব্য আক্রোশে অনেক নিরীহ ইহুদিও লক্ষ্যবস্তু হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীও আক্রোশের লক্ষ্যবস্তু হবে।

হাজার হাজার বছরের লিখিত মানব–ইতিহাস পাঠ করলে মনে হতে পারে যে মানুষ যতই উৎকর্ষ অর্জন করুক, তারা যেন রাগ-ক্রোধ, তথা আমাদের ষড়্‌রিপুর দ্বারা সীমাবদ্ধ। শান্তিকালীন সময়ে মানুষ শক্তি অর্জন করতে চায়। আবার শক্তিশালী হলে দুর্বলের ওপর শোষণ করতে চায়। এই শোষণের জবাবে দুর্বল নিজে শক্তি অর্জনের চেষ্টা করে, অর্জন করেও। তারপর দুর্বল সবলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যার ফলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই শান্তি ও সংঘাতের চক্রটি মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে সামষ্টিক বা গোষ্ঠীজীবনের একটি নিরন্তর চক্র। অলঙ্ঘনীয়। তবু এতক্ষণ ধরে বলা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এই অনুমান বাস্তব না হওয়াই মঙ্গলজনক হবে।

[মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যেকোনো অনুমান কঠিন। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি অনেক বেশি জটিল। এখানে আন্তরাষ্ট্রীয় একরৈখিক কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফলে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কে কী বলছেন এবং সেটি কতটুকু নির্ভরযোগ্য, তা নির্ভর করবে লেখকের এই অঞ্চল সম্পর্কে গভীর জানাশোনা ও নিজস্ব প্রজ্ঞার সমন্বয়ের ওপর। প্রায় দুই দশকের কাছাকাছি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির একাগ্র পাঠ, কিছু গবেষণার ওপর ভিত্তি করে এটি লেখা হয়েছে। যাঁরা এই লেখা পড়বেন, তাঁরা যেন এসব পূর্বানুমান আক্ষরিকভাবে গ্রহণ না করেন। বর্তমানে যা ঘটছে, সে রকম পরিস্থিতি নিকট অতীতেও ছিল। সেসবের সঙ্গে তুলনা ও বিশ্লেষণ করে বর্তমানের পরিণতি আনুমানের একটি প্রয়াস এই লেখা।]

সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব রিজওনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র জ য়নব দ দ র ইসর য় ল র জ য়নব দ র আম র ক র পর স থ ত আম র ক ন ইউর প য় অন ম ন অর থ ৎ র জন য ক র যত র জন ত দ র বল র ওপর র একট ধরন র র বছর

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব সংগীত দিবস উদযাপনে দুই আয়োজন

একটাই দিন। একটি বিশেষ উপলক্ষ। কিন্তু দুইটি ভিন্ন ভেন্যুতে আয়োজনের ভাবনা ছিল একই- ‘সুরের ছোঁয়ায় শান্তি ও সুস্থতা’। ২১ জুন ছিল বিশ্ব সংগীত দিবস। সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বজনীন সংহতি, সাম্য ও মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ায় ছিল দিবসের লক্ষ্য।

জাতীয় নাট্যশালায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যানারে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, অন্যদিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সৃষ্টি বিশ্বময়’-এর নিবেদনে এক মরমি পরিবেশনা। দুই মঞ্চে দুই রকম সুর, তবে চেতনায় অভিন্ন।

বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শুক্রবার বিকেলে এক আন্তরিক আয়োজন করে ‘সৃষ্টি বিশ্বময়’। যার শিরোনাম ছিল ‘সুরের ছোঁয়ায় শান্তি’। মূল উদ্দেশ্য, সংগীতকে মানুষের কাছে একটি নিরাময় শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা, যাকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে যুদ্ধহীন এক মানবিক সমাজ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ। তিনি বলেন, ‘সংগীতের শক্তি এমনই যে, তা হৃদয়ের অন্ধকার দূর করে মননে আলোক ছড়াতে পারে। সংগীতই পারে হানাহানিমুক্ত পৃথিবীর পথে মানুষকে নিয়ে যেতে।’

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক বাসুদেব ধর ও সদস্যসচিব অলক দাশগুপ্ত। আয়োজনের সূচনায় চর্যাপদের পদ, আবৃত্তি ও আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের এক ব্যতিক্রমধর্মী কম্পোজিশন পরিবেশন করেন লাইসা বিনতে কামাল, রত্না দত্ত, সন্দীপা বিশ্বাসসহ একঝাঁক তরুণ শিল্পী। নৃত্য পরিবেশন করেন অংকিতা অথৈ। এছাড়া একক সংগীত, দলীয় পরিবেশনা ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন বর্ষা রাহা, রজত শুভ্র, ফয়সাল আহমেদ, সানোয়ারা জাহান নিতু, ব্যান্ডদল ‘ব্রেথলেস’সহ অনেকেই। 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হয় আরেক আয়োজন-‘সুরের সম্মিলন’। সন্ধ্যায় নাট্যশালার সম্মুখে জাতীয় সংগীতের সুর ও বেলুন উড়িয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান ও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীরা।

সভাপতির বক্তব্যে ওয়ারেছ হোসেন বলেন, ‘যে দেশে যত বেশি সাংস্কৃতিক চর্চা হয়, সে দেশে যুদ্ধ ও সহিংসতা টিকে থাকতে পারে না। সংগীত মানুষের হৃদয়ের কালো দাগ মুছে দিতে পারে।’

শোভাযাত্রার পর মূল মিলনায়তনে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। প্রথমে ছিল যন্ত্রসঙ্গীত ও কণ্ঠসংগীতের কোলাজ পরিবেশনা। এরপর মঞ্চে আসে আদিবাসী ব্যান্ড ‘চিম্বুক’ ও ‘বম শিল্পীগোষ্ঠী’। পরে জনপ্রিয় তারকা শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনায় মুখর হয় মিলনায়তন। শেষ পর্বে কোলাজ ব্যান্ডের পরিবেশনায় জমে ওঠে সমাপ্তি অনুষ্ঠান।

উল্লেখ্য, বিশ্ব সংগীত দিবসের সূচনা হয় ১৯৮২ সালে ফ্রান্সে, তৎকালীন সংস্কৃতি মন্ত্রী জ্যাক ল্যাং ও সংগীত পরিচালক মরিস ফ্লেয়োরে’র উদ্যোগে। ২১ জুন, গ্রীষ্মের দীর্ঘতম দিনে, সংগীতকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে এই দিবস উদযাপন শুরু হয়, যা এখন বিশ্বব্যাপী পালিত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ